Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

আজ বিশ্ব গ্রামীণ নারী দিবস

বহু আশা জাগিয়েও বঞ্চিত গ্রামীণ নারীরা

শিপন হাবীব

শিপন হাবীব

প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বহু আশা জাগিয়েও বঞ্চিত গ্রামীণ নারীরা

অন্দরমহল থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্র, উন্নয়ন সর্বত্রই নারীদের শ্রম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। দেশে নারী ও পুরুষের অনুপাতে নারীর সংখ্যাও বেশি। বাংলাদেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড কৃষিতে তাদের অবদান অনস্বীকার্য। গৃহকোণ বা কৃষি, গ্রামীণ অর্থনীতির সর্বত্র নারীদের বিশেষ ভূমিকা থাকলেও তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বঞ্চিত। খেতে বীজ বোনা, নিড়ানি দেওয়া থেকে শুরু করে ফলস কাটা, মাড়াই-ঝাড়াই এবং ফসল ঘরে তোলার সময় পুরুষদের পাশাপাশি নারীও অমানবিক পরিশ্রম করেন। তবে নারীর কৃষিভিত্তিক শ্রমের কোনো স্বীকৃতি নেই। জমিতে নেই তাদের কোনো মালিকানার অধিকার। সব ক্ষেত্রে এভাবে বঞ্চনার মধ্য দিয়ে প্রতিবছরের মতো এবারও ১৫ অক্টোবর ‘বিশ্ব গ্রামীণ নারী দিবস’ পালিত হচ্ছে। প্রতিবছরই পঞ্জিকা ধরে দিবসটি আসে, চলেও যায়। এ দিবস উপলক্ষ্যে সভা-সেমিনারে গ্রামীণ নারীদের উন্নয়নে নানা আঙ্গিকে আলোচনাও হয়। তারপর যেমন চলার, তেমনই চলে। তাদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয় না।

মুন্সীগঞ্জের ফরিদা আক্তার। মৎস্য চাষ থেকে শুরু করে গরুর খামার, সারি সারি ধান, আলু চাষের জমিও তার রয়েছে। তিনি জানালেন, নিজের গহনা বিক্রির সঙ্গে বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনে স্বামীর ঘরে এসব সম্পদ বাড়িয়েছেন। তবে এ খাতের অর্থকড়ির মালিক তিনি নন। জমিতেও তার কোনো মালিকানা নেই। প্রতি ঈদেই বাড়ি থেকে ১৫-২০টি গরু বিক্রি করা হয়। মাছ-গরু বিক্রির টাকায় নতুন করে জমি কেনা হয়। ওই জমির মালিকানাও স্বামীর, তার নিজের নামে একটু জমিও নেই।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ’র (বিলস) এক গবেষণায় দেখা গেছে, চা শ্রমিক নারীদের বেলায় বৈষম্য আরও প্রকট। ঘণ্টার পর ঘণ্টা হেঁটে চা বাগানে নারী শ্রমিকদের আসা-যাওয়া করতে হয়। মাতৃত্বকালীন ছুটির কোনো বালাই নেই। ৯৭ শতাংশ নারী চা শ্রমিকের কোনো নিয়োগপত্রই নেই।

শ্রম আইন, ২০০৬-এর ৩৪৫ ধারা অনুযায়ী, নারী-পুরুষের সমকাজে সমান মজুরি প্রদানের কথা বলা হয়েছে। খোদ শহরে পুরুষদের দৈনিক দিনমজুরি যেখানে ৮০০-১২০০ টাকা, নারীরা সেখানে পান ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। তাছাড়া দেশে কৃষি, শিল্প, মৎস্য, গবাদিপশুর খামারসহ সব ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। সে ক্ষেত্রে গ্রামের নারীদের অবস্থা শহরের নারীদের চেয়েও খারাপ। কোথাও তাদের সমান অধিকার নেই।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) শ্রমশক্তি জরিপ-২০২২ অনুসারে কৃষিতে ৪৫ শতাংশ জনবল নিয়োজিত। এর মধ্যে ২৬ শতাংশ নারী, ১৯ শতাংশ পুরুষ। কৃষি, বনায়ন ও মৎস্য খাতে ৩ কোটি ১৯ লাখ ২০ হাজার জন নিয়োজিত। এ শ্রমশক্তির মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশ নারী এবং প্রায় ৩০ শতাংশ পুরুষ। দেশের জিডিপিতে বর্তমানে নারীর অবদান ২০ ভাগ। বিশেষজ্ঞদের মতে, নারীর গৃহস্থালি ও অবৈতনিক কৃষিকাজের আনুমানিক মূল্য আড়াই লাখ কোটি টাকা। বিবিএস ও ইউএন উইমেনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নারীর গৃহস্থালি কাজের শ্রমমূল্য ৫ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। এসব কাজ ৮৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ নারীই করে থাকেন। তথ্য অনুযায়ী, নারীরা পুরুষের তুলনায় গড়ে সাতগুণ বেশি সময় দেন অবৈতনিক কাজে। এ কারণে মোট অদৃশ্য শ্রমের প্রায় ৮৮ শতাংশই করছেন নারীরা।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু যুগান্তরকে জানান, গ্রামীণ নারীরা কাঠামোগত বৈষম্য ও চ্যালেঞ্জে জর্জরিত হলেও এই লড়াকু নারীরা আমাদের আশার আলো দেখাচ্ছেন। কিন্তু নিজেদের অধিকারগুলো বাস্তবায়িত হচ্ছে না। রাত-দিন পরিশ্রম করে বহু আশা জাগিয়েও গ্রামীণ নারীরা অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কৃষিতে বেশির ভাগ কাজটুকু নারীরাই করে-অথচ সেই নারীর স্বীকৃতি নেই। জমিতে সিকি পরিমাণ মালিকানাও তাদের নেই।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম