Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

বিমান ভাড়া ও নিবন্ধনে অতিরিক্ত খরচ

হজের প্রায় ৫৪ হাজার কোটা ফেরত যাচ্ছে

সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীদের আস্থা কমছে

হুমায়ুন কবির

হুমায়ুন কবির

প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

হজের প্রায় ৫৪ হাজার কোটা ফেরত যাচ্ছে

আগামী বছর মে মাসে পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। এবার হজে যেতে আগ্রহী ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের নিবন্ধনের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল ধর্ম মন্ত্রণালয়। ১৬ অক্টোবর ছিল সরকারি ও বেসরকারি-এই দুই ব্যবস্থাপনায় নিবন্ধনের শেষ সময়। কিন্তু এবার কাঙ্ক্ষিত সাড়া মেলেনি।

অনেক মুসলমানের ইচ্ছে থাকার সত্ত্বেও অতিরিক্ত বিমান ভাড়া ও নিবন্ধনের বাড়তি আর্থিক চাপ সামলাতে না পেরে নিয়ত করেও হজে যেতে পারছেন না। হজের নিবন্ধনের সময়ও আর বৃদ্ধি করা হবে না বলে জানিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এখনো হজের কোটা খালি রয়েছে ৫৩ হাজার ৭৮২ জনের। শতকরা হিসাবে প্রায় ৪৩ শতাংশ। মোট হজযাত্রীর এই কোটা ফেরত যাচ্ছে।

ধর্ম মন্ত্রণালয় আগের সরকারের মতোই এবারও পবিত্র হজ পালনে আগ্রহী মুসলিমদের জন্য বিশেষ তেমন কিছু করতে পারেনি। এই খাতে ভর্তুকি না দিয়ে উলটো লাভ করার চেষ্টা করছে সরকারও। এতে আশাহত হচ্ছেন হজে যেতে আগ্রহীরা।

সরকারের অমনোযোগিতার কারণে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীদের আস্থাও দিন দিন কমছে। প্রতি বছর মোট হজযাত্রীর ১০ শতাংশের কম কোটা বরাদ্দ হয়, এবার তাও পূরণ করতে পারেনি ধর্ম মন্ত্রণালয়। নিবন্ধনের সময় বৃদ্ধি করেও হজযাত্রী পায়নি তারা। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কিছু অসাধু ও ফ্যাসিস্ট কর্মকর্তার যোগসাজশে সরকারি হজ ব্যবস্থাপনাকে বারবার বিতর্কিত করার অভিযোগ উঠেছে।

চলতি বছর ২৭ জুলাই থেকে হজযাত্রীদের নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর প্রায় তিন মাসে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজের প্রাথমিক নিবন্ধন করেছে মাত্র ৭৩ হাজার ৪১৬ জন হজযাত্রী। যা শতকরা হিসাবে প্রায় ৫৭ শতাংশ। সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী আগামী বছর এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজে যাওয়ার কথা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এবার সবচেয়ে খারাপ অবস্থা বিরাজ করছে হজ নিবন্ধনে। এবারও হজ প্যাকেজের মূল্য প্রত্যাশিতভাবে কমানো হয়নি। স্বাভাবিক বিমান ভাড়ার চেয়ে দ্বিগুণের বেশি খরচ ধরা হয়েছে। প্রাথমিক নিবন্ধনের জন্য যে টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটা অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি। এছাড়া অর্থনৈতিক কারণে অনেকে বিভিন্ন ব্যাংকে টাকা জমা রাখলেও, সেটি তুলতে পারছেন না। পাশাপাশি চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির এক ধরনের প্রভাব রয়েছে।

জানা যায়, এবার সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রাথমিক নিবন্ধন করেছেন মোট চার হাজার ১০২ জন। আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় নিবন্ধন করেছেন মাত্র ৬৯ হাজার ৩১৪ জন। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী বছরের ২৬ মে পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে।

গত ২৮ সেপ্টেম্বর সরকারিভাবে তিনটি হজ প্যাকেজ ঘোষণা করে ধর্ম মন্ত্রণালয়। ঘোষিত হজ প্যাকেজ-১ (বিশেষ) এর খরচ ধরা হয়েছে ছয় লাখ ৯০ হাজার ৫৯৭ টাকা। হজ প্যাকেজ-২ এ খরচ ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ ৫৮ হাজার ৮৮১ টাকা এবং হজ প্যাকেজ-৩ এ খরচ ধরা হয়েছে চার লাখ ৬৭ হাজার ১৬৭ টাকা। এই প্যাকেজের বাইরে রয়েছে খাবার খরচ। একইভাবে একদিন পর বেসরকারিভাবে তিনটি হজ প্যাকেজ ঘোষণা করে হাব। এর মধ্যে সাশ্রয়ী হজ প্যাকেজের খরচ ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ ১০ হাজার টাকা।

ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী বছর হজ পালনের জন্য আগ্রহীদের প্রাথমিক নিবন্ধন শুরু হয় গত ২৭ জুলাই। ১২ অক্টোবর প্রাথমিক নিবন্ধন শেষ হয়। এরপর সরকারি ও বেসরকারি উভয় মাধ্যমের হজযাত্রী নিবন্ধনের সময়সীমা ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। যদিও ২২ অক্টোবর পর্যন্ত এই নিবন্ধনের কার্যক্রম চলছে বলে জানা গেছে।

হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)-এর মহাসচিব ফরিদ আহমেদ মজুমদার যুগান্তরকে বলেন, ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের সম্প্রতি ওমরাহ পালন করার প্রবণতা বাড়ছে। তাই হজ নিবন্ধনে আগ্রত কম। অনেকের ধারণা, ওমরাহ পালন করলে আর হজ করার প্রয়োজন নেই। এই ভুল ধারণার কারণেও সাড়া কম। একই সঙ্গে মানুষের অর্থ সংকট ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রভাবও রয়েছে।

জানা যায়, হজ অধিশাখার যুগ্ম সচিব ড. মো. মঞ্জুরুল হক ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ৫ আগস্টের পর ধারণা করা হচ্ছিল ফ্যাসিস্টের সুবিধাভোগীদের এমন গুরুত্বপূর্ণ জায়গা থেকে সরানো হবে। কিন্তু তা করা হয়নি। উলটো ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ কার্যক্রম পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে ফোন করা হলে তিনি যুগান্তরকে বলেন, আমি ছাত্রলীগ ছিলাম, তার প্রমাণ দেন। আপনি ফ্যাসিস্ট আমলের একজন সুবিধাভোগী কর্মকর্তা-এমন প্রশ্নের জবাব না দিয়ে তিনি বলেন, আমার কাজ আছে। এখন আর কথা বলতে পারছি না। এসময় হজের নিবন্ধনের সময় আর বৃদ্ধি করা হবে না বলেও জানান তিনি।

আল-কুতুব হজ ট্রাভেলসের মালিক হাবিবুল্লাহ মুহাম্মাদ কুতুবুদ্দীন যুগান্তরকে বলেন, হজের নিবন্ধনের সময় শেষ হয়েছে। আর বৃদ্ধি করা হবে কিনা জানি না। এবার প্রাক ও প্রাথমিক নিবন্ধনসহ প্রতি হজযাত্রীর তিন লাখ ৮০ হাজার নির্ধারণ করা হয়। যেটি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত। এতে হজযাত্রী সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। হাব এবং এজেন্সি মালিকরা এই অর্থ কমানোর জন্য মন্ত্রণালয়ে অনুরোধ করা হলেও সাড়া মিলেনি।

এছাড়া এবার হজযাত্রীর বিমানের ভাড়ার টাকাও অগ্রিম নেওয়া হয়েছে। যার ফলে মাত্রাতিরিক্ত টাকা দিয়ে প্রাথমিক নিবন্ধনে আগ্রত দেখাননি হজযাত্রীরা। হজ নিবন্ধনে সরকারের ভার্বমূতি নষ্ট করতে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কিছু ফ্যাসিস্ট কর্মকর্তা জড়িত। যাদের বিতর্কিত সিদ্ধান্তের কারণে কাঙ্ক্ষিত সংখ্যাক ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা হজ নিবন্ধনে সুযোগ পাননি। সৌদি সরকারের আইনের বাধ্যবাধকতার কথা বলে এ ধরনের সুযোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজের সার্ভারে তথ্য অনুযায়ী, গত হজে হজযাত্রীর সংখ্যা (ব্যবস্থাপনাসহ) ছিল ৮৭ হাজার ১০০ জন। বেসরকারি মাধ্যমের হাজির সংখ্যা ৮১ হাজার ৯০০ জন। আর সরকারি হজযাত্রীর সংখ্যা ছিল পাঁচ হাজার ২০০ জন।

বিগত পাঁচ বছরে হজের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২৪ সালে ৮৫ হাজার ২৫৭ হজযাত্রী। যার মধ্যে পুরুষ ৬৩ আর মহিলা ৩৭ শতাংশ। আর ৬০ বছরের উপরে হজযাত্রী ছিলেন ৩২ শতাংশ। ২০২৩ সালে এক লাখ ২২ হাজার ৫৫৮ জন। তার মধ্যে ৬৩ পুরুষ আর ৩৭ শতাংশ মহিলা। ৬০ বছরের উপরে হজযাত্রী ছিলেন ৪০ শতাংশ। একইভাবে ২০২২ সালে ৬০ হাজার ১৪৬ জন। পুরুষ ৬৫ আর মহিলা ৩৫ শতাংশ। ৬০ বছরের উপরে হজযাত্রী ছিলেন ৩২ শতাংশ।

এর মধ্যে করোনা ভাইরাসের কারণে হজ অনুষ্ঠিত হয়নি। এর আগে ২০১৯ সালে এক লাখ ২৭ হাজার ১৫২ জন। পুরুষ ৬৪ আর মহিলা ৩৬ শতাংশ। আর ৬০ বছরের উপরে ৫১ শতাংশ। ২০১৮ সালে এক লাখ ২৭ হাজার ২৯৮ জন। এতে ৬৫ পুরুষ আর মহিলা ৩৫ শতাংশ। আর ৬০ বছরের উপরে হজযাত্রী ছিলেন ৫৪ শতাংশ। এই সময়গুলোতে সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের কোটা ছিল।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম