বগুড়া-১ আসন
জামায়াত প্রার্থী চূড়ান্ত, বিএনপির টিকিট প্রত্যাশী ছয় নেতা
ফাইল ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসনে বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মাঠে নেমে পড়েছেন। জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী চূড়ান্ত হলেও বিএনপির ছয় নেতা হাইকমান্ড তথা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দিকে চেয়ে আছেন। এদের মধ্যে একজনকে ইতোমধ্যে ‘সবুজ সংকেত’ দেওয়া হলেও সবাই টিকিট পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। তবে তারা বলছেন, দল যাকে মনোনয়ন দেবে তিনিই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। বিএনপি তাদের হারানো আসনটি পুনরুদ্ধার করতে চায়। নির্বাচনকে সামনে রেখে এলাকায় ইসলামি জলসা, ক্রিকেট টুর্নামেন্ট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্রীড়া প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সরব উপস্থিতি লক্ষ করা যাচ্ছে। এলাকায় নির্বাচনি আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন-বিএনপি থেকে সাবেক এমপি কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য কাজী রফিকুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি একেএম আহসানুল তৈয়ব জাকির, জিয়া শিশু-কিশোর সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন চৌধুরী, সারিয়াকান্দি উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান হিরু, জেলা বিএনপির উপদেষ্টা ডা. শাহ্ মো. শাহজাহান আলী ও জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সহিদ-উন-নবী সালাম। তবে মোশাররফ হোসেন চৌধুরী দেশের বাইরে থাকায় তিনি ঢাকায় গুলশান কার্যালয়ে তারেক রহমানের বৈঠকে ডাক পাননি। এদের মধ্যে আগেই সাবেক এমপি কাজী রফিকুল ইসলামকে ফোন করে তারেক রহমান ‘সবুজ সংকেত’ দিয়েছেন বলে প্রচারণা রয়েছে।
জামায়াতে ইসলামী দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মো. শাহাবুদ্দিন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের এবিএম মোস্তফা কামাল পাশা, স্বতন্ত্র মেধা গ্রুপের চেয়ারম্যান শাহজাদী আলম লিপি নিশ্চিত প্রার্থী। তবে অন্য রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নাম এখনো শোনা যায়নি।
জানা যায়, পূর্ব বগুড়ার বাঙালি ও যমুনা নদী ভাঙনকবলিত বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসনটি মূলত বিএনপির। বিএনপি মনোনীত প্রার্থীরা বেশ কয়েকবার এ আসনে নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মান্নান তিন দফা নির্বাচিত হন। আবদুল মান্নানের মৃত্যুর পর ২০২০ সালের ১৪ জুলাই উপনির্বাচনে তার স্ত্রী সাহাদারা মান্নান এমপি নির্বাচিত হন। সাহাদারা মান্নান ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মেধা গ্রুপের চেয়ারম্যান শাহজাদী আলম লিপি। গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সাহাদারা মান্নান হত্যা মামলা মাথায় নিয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন। ফলে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বাদে বিভিন্ন দল ও স্বতন্ত্র থেকে অনেকে প্রার্থী হবেন। তবে প্রার্থী যতই হোক, এ আসনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে।
বিএনপি তৃণমূল থেকে জেলা পর্যন্ত মাঠ গুছিয়ে নিয়েছে। বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। বগুড়া-১ আসনে এখন পর্যন্ত বিএনপি ও জামায়াত প্রার্থীদের মাঠে দেখা যাচ্ছে। এলাকায় নির্বাচনি আবহ তৈরি হয়েছে। হোটেল, রেস্তোরাঁ, হাটে-বাজারের চা স্টলে নির্বাচন ও সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনা চলছে।
জামায়াতের একমাত্র ঘোষিত প্রার্থী জেলা শাখার সাবেক আমির অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন জোরেশোরে প্রচারণা শুরু করেছেন। বিএনপির অধিকাংশ সম্ভাব্য প্রার্থী ও তাদের লোকজন প্রচারণায় রয়েছেন।
গত উপনির্বাচনের প্রার্থী একেএম আহসানুল তৈয়ব জাকির বলেন, ছাত্রদল থেকে রাজনীতি শুরু করে গত ৪৪ বছর সুখে-দুখে বিএনপির সঙ্গে আছি। দল মনোনয়ন দিলে অবশ্যই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব। গত ২৭ অক্টোবর দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গুলশান কার্যালয়ে অনলাইনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের বিভিন্ন নির্দেশনা ও পরামর্শ দিয়েছেন। সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিজয়ী সংসদ-সদস্য কাজী রফিকুল ইসলাম জানান, তিনি মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। তারেক রহমান ফোন করে তাকে ‘সবুজ সংকেত’ দিয়েছেন। দল মনোনয়ন দিলে ধানের শীষ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
এলাকার প্রচার-প্রচারণায় রয়েছেন সারিয়াকান্দি উপজেলার সাবেক চেয়ারমান বিএনপি সভাপতি মাসুদুর রহমান হিরু মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। অপর প্রার্থী মোশাররফ হোসেন চৌধুরীও মনোনয়ন চাইবেন। বগুড়া শহর জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যাপক আ.স.ম. আবদুল মালেক জানান, এ জেলায় সাতটি আসনে তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত হয়েছে।
বগুড়া জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য মোশারফ হোসেন জানান, বগুড়ার সাতটি আসনের মধ্যে বগুড়া-৬ (সদর) ও বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসন দুটি জিয়া পরিবারের। তাই এই দুটি ছাড়া বাকি আসনে প্রার্থীকে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে। বগুড়া-১ আসনে কাজী রফিকুল ইসলাম, বগুড়া-২ মীর শাহে আলম, বগুড়া-৩ আবদুল মুহিত তালুকদার, বগুড়া-৪ মোশারফ হোসেন, বগুড়া-৫ গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ। তিনি আশা করেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এসব প্রার্থীদের চিঠি দেওয়া হবে।



