রাজশাহীতে বিএনপির মনোনয়ন
দুটিতে নতুন মুখ চারটিতে পুরোনো
বাগমারায় সমালোচনার ঝড় প্রতিহিংসা
ফাইল ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
রাজশাহীর ছয়টি সংসদীয় আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে দুইটি আসনে নতুন মুখ এসেছে। বাকি চারটিতে পুরোনোরা মনোনয়ন পেয়েছেন। এদিকে দলীয় নির্দেশনা লঙ্ঘন করে মনোনয়নপ্রাপ্ত নেতাদের অনুসারীরা মিষ্টি বিতরণ ও আনন্দ মিছিল করেছেন। মোটরসাইকেল শোডাউন আর রাতভর পিকনিক করেছেন তারা। কোথাও কোথাও মনোনয়নবঞ্চিতদের ফেস্টুন ও ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। কেউ কেউ প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন। লাঞ্ছিত করার ঘটনাও ঘটেছে। তবে ভিডিও বার্তায় প্রার্থীরা অনুসারীদের সংযত হওয়ার নির্দেশ দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে মনোনীত প্রার্থীকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে।
রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল (অব.) শরীফ উদ্দীন। এ আসনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শরীফ দলীয় মনোনয়নে প্রথম নির্বাচনে অংশ নেবেন। এর আগে এ আসন থেকে তার ভাই সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হক ১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনবার নির্বাচিত হন। ব্যারিস্টার আমিনুল বিএনপি সরকারের দুইবার মন্ত্রী ছিলেন।
শরীফের মনোনয়ন ঘোষণার পর গোদাগাড়ী ও তানোরে তার সমর্থকরা উল্লাস প্রকাশ ও মিষ্টি বিতরণ করেন। গোদাগাড়ীতে মনোনয়নপ্রত্যাশী অন্য দুই প্রার্থীর ব্যানার ও ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলা হয়। গোদাগাড়ী পৌরসভায় ছাত্রদলের পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক এসাহাক আলী নয়নকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়। পাকড়ি এলাকায় মোটরসাইকেল শোডাউন করা হয়। কয়েকটি এলাকায় চলে রাতভার পিকনিক। তানোরের দু-একটি এলাকায় মিষ্টি বিতরণ ছাড়া কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।
সোমবার রাতে এক ভিডিও বার্তায় মেজর জেনারেল (অব.) শরীফ উদ্দীন বলেন, আমরা সবাই ধানের শীষের পক্ষে। আমাদের ভেদাভেদ ভুলে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকবে না। একসঙ্গে কাজ করতে পারলে আমাদের জয় সুনিশ্চিত বলে আমি আশাবাদী। মনোনয়ন নিয়ে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করা যাবে না। কাউকে নাজেহাল করা যাবে না। অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে।
রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন আটজন। শরীফ উদ্দীন ছাড়াও মাঠে সক্রিয় ছিলেন শিল্পপতি সুলতানুল ইসলাম তারেক এবং সুপ্রিমকোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহফুজুর রহমান মিলন। দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার পর তারেক বলেন, এখনো চূড়ান্ত মনোনয়ন ঘোষণা করা হয়নি। দলীয় সিদ্ধান্তকে আমি সম্মান করি। দলের জন্য আমার ত্যাগ থাকলে দল অবশ্যই আমাকে মূল্যায়ন করবে। সবাইকে সহনশীল থাকা উচিত। না হলে দলীয় শৃঙ্খলা থাকবে না।
রাজশাহী-২ (সদর) আসনে সাবেক সংসদ-সদস্য মিজানুর রহমান মিনু দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিনু ২০০১ সালের নির্বাচনে সারা দেশে রেকর্ডসংখ্যক ভোট পেয়েছিলেন। টানা ১৭ বছর তিনি রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। তার মনোনয়নে রাজশাহী সদরের দু-একটি স্থানে মিষ্টি বিতরণ এবং আতশবাজি হয়েছে। সমর্থকরা তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। মিজানুর রহমান মিনু বলেন, এখানে সমপর্যায়ের অনেক প্রার্থী রয়েছেন। দল আমাকে মূল্যায়ন করায় কৃতজ্ঞ। তিনি বলেন, সব ভেদাভেদ ভুলে সবাই মিলে কাজ করব। ধানের শীষে ভোট দিয়ে মানুষ আবারও বিএনপিকে নির্বাচিত করবে।
রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন। এ আসনে ২০১৮ সালের নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ত্রাণ ও পুনর্বাসনবিষয়ক সহসম্পাদক মিলন। এ আসনে মিলন ছাড়া আরও চারজন মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। মনোনয়ন ঘোষণার পর পবার বায়া ও নওহাটায় আনন্দ মিছিল হয়েছে। সব ভেদাভেদ ভুলে সমর্থকদের সংযত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন মিলন।
রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে এবার মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডিএম জিয়াউর রহমান জিয়া। প্রথমবার দলীয় মনোনয়ন পাওয়ায় জিয়ার সমর্থকরা বাগমারার বিভিন্ন এলাকায় মিষ্টি বিতরণ এবং আনন্দ মিছিল করেন। তারা রাতভর পিকনিকও করেন।
এ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন ১০ জন। ডিএম জিয়াকে মনোনয়ন দেওয়ায় নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় বইছে। জিয়ার সমর্থকদের উল্লাস এবং তার সমালোচনা ভাইরাল হয়েছে। জিয়াকে প্রার্থী করায় জামায়াত লাভবান হয়েছে বলে অনেকে জানান। বিএনপি কর্মী ইসাহাক আলী ফেসবুকে পোস্ট লেখেন, ‘প্রার্থী ঘোষণা করল বিএনপি, মিষ্টি খাচ্ছে জামায়াত-মারফত কী বুঝলাম না।’ জাহেদুর রহমান ইকবাল লেখেন, ‘আমি ঘটনা বুঝতে পারলাম না। বাগমারায় বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন ডিএম জিয়াউর রহমান। কিন্তু মিষ্টি বিতরণ করেছে অন্যদল। এর কারণ কী।’
বাগমারা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও গোবিন্দপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান রঞ্জুর ছেলে আহনাফ আর আকিফ ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘মির্জা ফখরুলের চিঠি জাল করা প্রতারক, যার জন্য লক্ষ বিএনপি নেতাকর্মী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, বাগমারা বিএনপির শক্ত ঘাঁটি থেকে মাথা গোঁজার শেষ সম্বল হারিয়ে দিগ্ভ্রান্ত হয়ে পড়েছিল, সেই বেইমান নাকি বিএনপির এমপি প্রার্থী! আবার এ সিদ্ধান্ত নাকি মেনেও নেওয়া লাগবে। কীভাবে মেনে নেব? যে কষ্ট নিয়ে আমার চাচাকে মরতে হয়েছিল, দল কি আমাদের আমার চাচার সেই লাশের ওপর দিয়ে সিদ্ধান্ত মানতে বলছে? না আছে শিক্ষাগত যোগ্যতা, না আছে বাচনভঙ্গি, ৫ আগস্টের পর যার নামে ভাইসহ চাঁদাবাজির বহু অভিযোগ-এরকম একটা প্রতারক বিএনপির এমপি হলে সেই দেশের রাজনীতি করার রুচি সভ্য মানুষের থাকবে না।’ আকিফ বর্তমানে লন্ডনে অধ্যয়নরত।
মঙ্গলবার ভোরে ডিএম জিয়ার সমর্থকদের বিরুদ্ধে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এবং গোবিন্দপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হবির বিরুদ্ধে ৩৫ বিঘা আয়তনের দিঘিতে বিষ দিয়ে কোটি টাকার মাছ নিধনের অভিযোগ উঠেছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ডিএম জিয়া গণমাধ্যমকে বলেন, এ অভিযোগ সঠিক নয়। এ মুহূর্তে সব ভেদাভেদ ভুলে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন অধ্যাপক নজরুল ইসলাম মণ্ডল। ২০১৮ সালে তিনি মনোনয়ন পেয়েছিলেন। এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন আটজন। পুঠিয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি মনোনয়নপ্রত্যাশী ইসফা খায়রুল হক শিমুলের বাড়ির সামনে আতশবাজি ফুটিয়েছেন নজরুলের সমর্থকরা। ধানের শীষ প্রতীক বিজয়ী করতে নজরুল ইসলাম সবার কাছে সহনশীল আচরণ প্রত্যাশা করে ভিডিও বার্তা দিয়েছেন।
রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ। ২০১৮ সালেও তিনি দলীয় মনোনয়ন পান। নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে চাঁদ বলেন, দলের স্বার্থে আমরা সব ভেদাভেদ ভুলে একসঙ্গে কাজ করব।




