Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

ব্যয় হবে ৭৬১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা

স্থায়ী ফ্ল্যাট পাচ্ছে ৮০৪ জুলাই শহীদ পরিবার

দ্বিতীয় পিইসি সভায় সুপারিশ দিয়ে প্রকল্প প্রস্তাব ফেরত দিল পরিকল্পনা কমিশন

হামিদ-উজ-জামান

হামিদ-উজ-জামান

প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

স্থায়ী ফ্ল্যাট পাচ্ছে ৮০৪ জুলাই শহীদ পরিবার

রাজধানীতে স্থায়ী ফ্ল্যাট পাবে জুলাই আন্দোলনে শহীদ ৮০৪ পরিবার। শোকাবিভূত এসব পরিবারকে মানসম্মত বাসস্থান নিশ্চিত করার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবন যুদ্ধে ফিরিয়ে আনতে এমন উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এজন্য ‘মিরপুরের ১৪নং সেকশনে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের নিজস্ব জমিতে ৩৬ জুলাই আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ’ নামের একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৭৬১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। প্রক্রিয়াকরণ শেষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে শুরু হয়ে ২০২৯ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু প্রস্তাবের মধ্যে নানা ত্রুটি থাকায় দ্বিতীয় পিইসি সভা থেকে সংশোধনের জন্য ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) ফেরত দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

পরিকল্পনা কমিশনে দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, এ প্রকল্পটি গত জুলাই মাসে একনেক বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু অনুমোদন না দিয়ে অধিকতর যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ফেরত দেওয়া হয়। তখন পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে বেশকিছু সুপারিশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় তার সব প্রতিপালন করেনি। ফলে দ্বিতীয়বারের মতো এবার পিইসি সভা করতে হয়েছে। তাতে আগের সুপারিশগুলোসহ প্রকল্প প্রস্তাবে যেসব ত্রুটি ছিল সেগুলো সংশোধন করতে ডিপিপি পুনরায় ফেরত দেওয়া হয়েছে।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মিরপুর হাউজিং স্টেটের ১৪নং সেকশনে মিরপুর পুলিশ লাইনের কাছে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ৫ দশমিক ৮ একর জমি রয়েছে। এটি ৬০ এর দশকে অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। এই জমিতে ১ হাজার ৩৫৫ বর্গফুটের মোট ৮০৪টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ সংক্রান্ত প্রকল্পের আওতায় কমন বেজমেন্টসহ ৬টি ১৪ তলা ভবনে ৬০০টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে। এছাড়া ১২টি ১০ তলা ভবনে ২০৪টি আবসিক ফ্ল্যাটসহ মোট ১৮টি আবাসিক ভবনে এসব ফ্ল্যাট তৈরি করা হবে। ১৪ তলা বিশিষ্ট ভবনগুলোতে বেজমেন্ট, নিচ তলায় কার পার্কিং ও উপরের তলাগুলোতে আবাসিক ফ্ল্যাট তৈরির ব্যবস্থা রয়েছে। পাশাপাশি ১০ তলা বিশিষ্ট ভবনগুলোতে নিচতলায় কার পার্কিং ও উপরের তলাগুলোতে আবাসিক ফ্ল্যাট তৈরির প্রস্তাব আছে। এসব ভবন গণপূর্ত অধিদপ্তরের ডিজাইনে ভূমিকম্প সহনীয় করে নির্মাণ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর ২৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। সেখানে বিভিন্ন বিষয়ে সুপারিশ দিয়ে প্রকল্প প্রস্তাব ফেরত দেওয়া হয়েছে। পিইসি সভায় বলা হয়, এর আগে পাঠানো ডিপিপির (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) চেয়ে বর্তমান ডিপিপিতে প্রকল্প পরিচালকের বেতন, যানবাহন ভাড়া, অভ্যন্তরীণ আরসিসি রাস্তা নির্মাণ এবং অভ্যন্তরীণ আরসিসি ড্রেন নির্মাণের নতুন কাজ যুক্ত করায় এর যৌক্তিকতা নিয়ে পিইসি সভায় প্রশ্ন তোলা হয়। সভায় বলা হয়, প্রকল্প পরিচালকের বেতন ও যানবাহন ভাড়া আলাদা করে প্রস্তাব করতে হবে। সেই সঙ্গে কতটি যানবাহন ও কত মাসের জন্য ভাড়া হবে সেসব বিস্তারিত উল্লেখ করতে হবে। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় পিআইসি (প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশন) এবং পিএসসি (প্রজেক্ট স্টিয়ারিং কমিটি) সভার জন্য সম্মানির ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এ খাতে ব্যয় কিভাবে নির্বাহ করা হবে সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। প্রকল্পে স্থাপত্য ড্রইং কাঠামো ডিজাইন অঙ্গে ১৫ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু এর আওতায় কি কি নকশা তৈরি করা হবে তা আলাদাভাবে উল্লেখ করা হয়নি। পিইসি সভায় আর্কিটেকচারাল, প্লাম্বিং, বৈদ্যুতিক এবং অবকাঠামোগত নকশা আলাদাভাবে ব্যয় ধরার সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ক্রয় পরিকল্পনায় পণ্যের ১০টি ও পূর্ত কাজের ১১টি প্যাকেজের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু সেবা ক্রয়ের প্যাকেজ উল্লেখ করা হয়নি। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী যানবাহন ব্যবহার করতে হলেও সেটি সেবা প্যাকেজের অন্তর্ভুক্ত। পিইসি সভায় বলা হয়েছে, পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা ২০০৮ অনুযায়ী প্রকিউরমেন্ট মেটহুড অ্যান্ড টাইপ নির্ধারণ করে ক্রয় পরিকল্পনায় ডেলিগেশন অব ফাইন্যান্সিয়াল পাওয়ার অনুযায়ী ক্রয় অনুমোদনকারী কে হবেন তা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।

পিইসি সভা সূত্র আরও জানায়, প্রকল্প প্রস্তাবে ফিজিক্যাল কন্টিনজেন্সি বাবদ ৯ কোটি ৩২ লাখ টাকা এবং প্রাইস কন্টিজেন্সি বাবদ ৩ কোটি ২৯ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। তবে এটি অনেক বেশি মনে হওয়ায় কমিয়ে ধরার সুপারিশ দেওয়া হয়েছে।

প্রকল্পের আওতায় প্রস্তাবিত খাত ভিত্তিক ব্যয়গুলো হলো-ভবন নির্মাণে ৬৬২ কোটি ৬ লাখ টাকা, আরসিসি সীমানা প্রাচীরের জন্য ২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা এবং গেট তৈরিতে ধরা হয়ছে ২৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এছাড়া অভ্যন্তরীণ আরসিসি রাস্তা তৈরিতে ৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা, অভ্যন্তরীণ আরসিসি ড্রেন তৈরিতে ২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা এবং ১০০০ কেজি বেড লিফটের জন্য ১৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। আরও আছে, ৮০০ কেজি প্যাসেঞ্জার লিফটের জন্য ১০ কোটি ২ লাখ টাকা, ১ হাজার কেভিএ সাবস্টেশন নির্মাণে ৫ কোটি ৯১ লাখ টাকা, ১৫০ কেভিএ জেনারেটরের জন্য ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা, ২০ এইচপি বৈদ্যুতিক পাম্পের জন্য ৫৪ লাখ, সোলার সিস্টেমের জন্য ৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকা এবং ফায়ার হাইড্রেন্ট সিস্টেমের জন্য ১৫ কোটি, ইন্টারকম সিস্টেমের জন্য ৯০ লাখ, বর্জ্য নিরোধক ব্যবস্থার জন্য ৯০ লাখ টাকা এবং সিসি ক্যামেরা সিস্টেমের জন্য ৩ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন আনুষঙ্গিক কার্যক্রমের জন্য আরও ২ কোটি টাকার থোক বরাদ্দ ধরা হয়েছে। পিইসি সভায় এসব খাতের ব্যয় প্রস্তাব যৌক্তিকভাবে নির্ধারণের সুপারিশ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম