পিএসসি’র ৭ আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপন
চার বছরের প্রকল্পে যাচ্ছে সাড়ে ৮ বছর
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) ৭টি আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপনের কাজে বিরাজ করছে ধীরগতি। চার বছরের এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় যাচ্ছে সাড়ে ৮ বছর। দফায় দফায় ব্যয় বাড়ার সঙ্গে সুফলও মেলেনি সময় মতো। এবার নতুন করে খরচ না বাড়লেও আরও দুই বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এর মূল কারণ হিসাবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভূমি অধিগ্রহণের জটিলতার কথা। এখনো জমি নিয়ে তিনটি মামলা চলছে রংপুরে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে বরিশাল ও খুলনা আঞ্চলিক অফিস স্থানের কাজ। ২৮ অক্টোবর পিএসসির প্রশাসনিক সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ‘বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন সচিবালয়ের ৭টি আঞ্চলিক কার্যালয় প্রতিষ্ঠাসহ সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ’ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে এর আওতাভুক্ত নিয়োগ পরীক্ষাগুলো আয়োজনের ক্ষেত্রে অধিকতর দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার লক্ষ্য ছিল। এজন্য ২০১৮ সালে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। কিন্তু জমি অধিগ্রহণসহ নানা কারণে প্রথমবার ২০২২ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। পরে দুই দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। এতেও কাজ শেষ হয়নি। এখন নতুন করে ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত দুই বছর সময় বাড়ানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক নাসির উদ্দিন আহমেদ রোববার যুগান্তরকে বলেন, এখন পর্যন্ত প্রায় ৪টি আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপনের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। বাকিগুলোর কাজ চলছে। সার্বিকভাবে গত জুন মাস পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি ছিল ৫৭ শতাংশ। এখন ধারণা করছি আরও কিছু কাজ হওয়ায় অগ্রগতি দাঁড়াতে পারে ৬৬/৬৭ শতাংশ। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, প্রথম দিকে ডিসিরা যে জায়গা বরাদ্দ দিয়েছিলেন, সেগুলো স্থাপত্য অধিদপ্তরের নকশার সঙ্গে মিল ছিল না। এজন্য চট্টগ্রামে জমি পেতে দীর্ঘ সময় লাগছে। ২০২৪ সালের জমি পাওয়া গেছে। রংপুরে এখনো জমি নিয়ে ৩টি মামলা চলছে। ময়মনসিংহে জমিতে মন্দির ও বিদ্যুতের পোল ছিল। এছাড়া ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত রাজনৈতিক কারণে বরিশালের কাজই শুরু করা যায়নি। ফলে এর কাজ অনেক পিছিয়ে আছে। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্ধিত মেয়াদের মধ্যে আশা করছি গণপূর্ত অধিদপ্তর প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারবে। সূত্র জানায়, প্রকল্পের মূল ব্যয় ধরা হয়েছিল ১২৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা। পরবর্তীতে দফায় দফায় বাড়িয়ে সর্বশেষ ব্যয় ধরা হয়েছে ২১৭ কোটি টাকা। তবে এ ব্যয় আর বাড়ানো হবে না বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে প্রকল্প পরিচালক নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ৭টি আঞ্চলিক কার্যালয়ের মধ্যে রাজশাহী কার্যালয়ের নির্মাণ কাজের অগ্রগতি ৯৯ শতাংশ। তবে নবনির্মিত ভবনের দেওয়ালের কিছু অংশে ফাটল দেখা গেছে। এর কারণ জানতে চাওয়া হলে রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বৈঠকে জানান, ভবনের দেওয়ালের ফাটলসমূহ চিহ্নিত করে ইতোমধ্যেই সংস্কার করা হয়েছে। এছাড়া সিলেট আঞ্চলিক কার্যালয় প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক জানান, এর ভৌত কাজের অগ্রগতি ৮৫ শতাংশ। ভবনের বাউন্ডারি ওয়ালের কাজ ৭০ শতাংশ, প্লাস্টার, টাইলস, রেলিং এবং গ্রিলের কাজ শেষ। এ পর্যায়ে বৈঠকের সভাপতি পিএসসির যুগ্ম সচিব সৈয়দা মাসুমা খানম বলেন, সম্প্র্রতি সচিব সিলেট আঞ্চলিক কার্যালয় পরিদর্শন করেছেন। তার কাছে নির্মাণ কাজের অগ্রগতি সন্তোষজনক হয়নি বলে প্রতীয়মান হয়।
বৈঠকে রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের অগ্রগতি সম্পর্কে বলা হয়, শূন্য দশমিক ১৭ একর জমি নিয়ে ৩টি মামলা চলমান। এদিকে বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের নির্মাণ অগ্রগতি কম হওয়ার কারণ জানতে চাইলে নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, ঠিকাদারের অসুস্থতার কারণে কাজের গতি ইতোপূর্বে মন্থর ছিল। তবে বর্তমানে গতি বেড়েছে। তিনি বলেন, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য গণপূর্ত অধিদপ্তরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ অগ্রগতি ১৫ শতাংশ বলে জানানো হয়। এছাড়া ময়মনসিংহ আঞ্চলিক কার্যালয়ের ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ অগ্রগতি ৬৯ শতাংশ। বর্তমানে ৩য় তলা পর্যন্ত ছাদ ঢালাই শেষ হয়েছে। চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ কাজের অগ্রগতি ৭৫ শতাংশ। ভবনের ২য় ও ৩য় তলার ফ্লোর ও ওয়াল টাইলস এবং নিচ তলার সিঁড়ি ও মার্বেলের অংশ বাদে বাকি অংশের টাইলস লাগানো হয়েছে। সব দরজার চৌকাঠ, জানালার গ্রিল ফিটিংস, ইনসাইড প্লাস্টার ও টয়লেটের টাইলসের কাজ, বারান্দা, ভয়েড ও সিঁড়ির রেলিংয়ের কাজ শেষ।
এদিকে প্রকল্পের গতি বাড়াতে নিয়মিত ও বিশেষ তদারকির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পিআইসি সভায়। বৈঠকে বলা হয়, অসমাপ্ত কাজ দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করতে হবে ও নির্মাণ কাজের অগ্রগতির প্রতিবেদন নিয়মিতভাবে বিপিএসসির বাজেট ও উন্নয়ন অধিশাখায় যথাসময়ে পাঠাতে হবে। এছাড়া চুক্তিবদ্ধ ঠিকাদার নির্মাণ কাজে চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করলে বা অন্য কোনো অসঙ্গতিপূর্ণ কার্যকলাপ করলে প্রকল্প পরিচালককে অবহিত করে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।

