প্রকল্পের খরচ কমবে ৭৫৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা
মেট্রোরেলে কমলাপুর যেতে অপেক্ষা বাড়ছে ৩ বছর
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
এ মাসে (ডিসেম্বর) শেষ হচ্ছে না মেট্রোরেল লাইন-৬ এর কাজ। ২০২৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট (লাইন-৬) প্রকল্পের। ফলে সরাসরি কমলাপুর যেতে অপেক্ষা বাড়ল আরও তিন বছরের। তবে এ পর্যায়ে প্রকল্পের ব্যয় কমানো হচ্ছে ৭৫৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা। বিদেশি ঋণ পরিশোধের জন্য ২৭০ কোটি টাকা বৃদ্ধিসহ ১১ কারণে সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে প্রকল্পটি। আজ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে এই প্রস্তাব। বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন প্রধান উপদেষ্টা ও একনেক চেয়ারপারসন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনে দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা মহানগরী এলাকায় পরিবেশবান্ধব ও নিরাপদ গণপরিবহণ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটবে। ফলে যানজট সমস্যার সমাধান করা যাবে। সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর ৪ নভেম্বর পরিকল্পনা কমিশনে অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। ওই সভার সুপারিশ অনুযায়ী প্রস্তাবিত এই তৃতীয় সংশোধনী। এক্ষেত্রে জনগুরুত্বের বিষয়টি সবার আগে স্থান পেয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, মেট্রোরেল লাইন-৬ প্রকল্পের মূল ব্যয় ছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি ৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে অধিকাংশই রয়েছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) ঋণ। এরপর প্রথম সংশোধনের সময় ব্যয় না বাড়লেও দ্বিতীয় সংশোধনের সময় ১১ হাজার ৪৮৬ কোটি ৯২ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় ধরা হয় ৩৩ হাজারর ৪৭১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। এবার তৃতীয় সংশোধনীতে এসে ৭৫৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয় কমিয়ে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩২ হাজার ৭১৭ কোটি ৭২ লাখ টাকা। এদিকে প্রকল্পের মূল অনুমোদিত মেয়াদ ছিল ২০১২ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনীতে দেড় বছর বাড়িয়ে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ করা হয়েছিল। কিন্তু এবার ৩ বছর বাড়িয়ে ২০২৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পটি তৃতীয়বার সংশোধনের কারণ হিসাবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেতন ও ভাতা খাতে ব্যয় বৃদ্ধি, পরামর্শক খাতে ব্যয় বেড়ে যাওয়া, স্টেশনারি-সিল-সম্মানি-কম্পিউটার বাবদ খরচ বৃদ্ধি এবং বিদেশি ঋণের মূলধন ও নির্মাণকালীন সুদ পরিশোধ বাবদ ২৭০ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া রোলিং স্টক (রেল কোচ) অ্যান্ড ইক্যুইপমেন্টের জন্য ৫৬১ কোটি ১৭ লাখ টাকা, মেইন লাইনের সিভিল ও স্টেশন ওয়ার্ক খাতে ৭৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকা এবং ডিপোর ভূমি উন্নয়নের জন্য ৪৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। সংশোধনের আরও কারণ হলো-ইএন্ডএম সিস্টেমে খরচ বেড়েছে ২৮৮ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। স্টেশন প্লাজা বাদ দেওয়ায় বিজয় সরণি-ফার্মগেট-শাহবাগ-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও মতিঝিল স্টেশনে অতিরিক্ত ভূমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হবে না। এজন্য ১ হাজার ২১১ কোটি ৭১ লাখ টাকা কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। পুনর্বাসন সহায়তা পরামর্শকের পরিমাণ অপরিবর্তিত থাকলেও এ খাতে খরচ কমছে ২ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। মেইন লাইনের সিভিল ও স্টেশন ওয়ার্ক এবং স্টেশন প্লাজা নির্মাণের পরিমাণ কমানো হয়েছে।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএসটিসিএল) সূত্র জানায়, উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটি লাইন-৬ এর নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে। ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত উত্তরা হতে মতিঝিল অংশের বাস্তব অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৯৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ। তবে মতিঝিল থেকে কমলাপুর অংশের অগ্রগতি হয়েছে ৬৪ দশমিক ২৩ শতাংশ। প্যাকেজভিত্তিক অগ্রগতি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, প্যাকেজ-১ (ডিপো এলাকার ভূমি উন্নয়ন) শতভাগ কাজ শেষ হয়েছে। প্যাকেজ-২ (ডিপো এলাকার পূর্ত কাজ) শেষ হয়েছে। প্যাকেজ-৩ ও ৪ (উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট ও ৯টি স্টেশন নির্মাণ) কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। এছাড়া মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট ও একটি স্টেশনের নির্মাণ কাজ ৬৪ দশমিক ২৩ শতাংশ শেষ হয়েছে। প্যাকেজ-৫ (আগারগাঁও থেকে কাওরান বাজার পর্যন্ত ৩ দশমিক ১৯ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট ও ৩টি স্টেশনের নির্মাণ) কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। প্যাকেজ-৬ (কাওরান বাজার থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ৪ দশমিক ৯২ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট ও ৩টি স্টেশন নির্মাণ) কাজ শেষ হয়েছে। প্যাকেজ-৭ (ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড মেকানিক্যাল সিস্টেম) স্থাপন কাজের ৯৯ দশমিক ৪১ শতাংশ শেষ হয়েছে। এছাড়া প্যাকেজ-৮ (রেলিং স্টক বা রেল কোচ ও ডিপো ইক্যুইপমেন্ট সংগ্রহ) কাজ ৯৮ দশমিক ১৭ শতাংশ শেষ হয়েছে।

