ফরিদপুরে সিন্ডিকেটের কবলে সারের বাজার সংকটের অভিযোগ
জাহিদ রিপন, ফরিদপুর
প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও ফরিদপুরে ডিলার সিন্ডিকেট থেকে মুক্ত হতে পারেনি সারের বাজার। ডিলাররা অবৈধভাবে সার মজুত করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে অতিরিক্ত দামে সার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারিভাবে ডিএপি সারের নির্ধারিত মূল্য কৃষক পর্যায়ে প্রতি কেজি ২১ টাকা। ৫০ কেজির প্রতি বস্তার দাম ১ হাজার ৫০ টাকা। কিন্তু বিসিআইসি ডিলাররা খুচরা সার বিক্রেতাদের কাছে প্রতি বস্তা ১ হাজার ৩৫০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করে অধিক মুনাফা করছেন।
কৃষকদের অভিযোগ, ফরিদপুরের সরকার অনুমোদিত ডিলারদের কাছ থেকে নির্ধারিত মূল্যে সার না পেয়ে তারা বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত দাম দিয়ে খুচরা দোকান থেকে সার সংগ্রহ করছেন। তাদের মতে, একটি সংগঠিত সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়ানো হচ্ছে।
বিএডিসির তথ্য বলছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সারা দেশে জুলাই মাসের চাহিদা অনুযায়ী সার ডিলারদের কাছে সরবরাহ করার পরও বর্তমানে বিভিন্ন গুদামে ৬ লাখ ৩০ হাজার ৬১৩ টন ইউরিয়া সার মজুত রয়েছে। এছাড়া ২ লাখ ১৭ হাজার টন টিএসপি, ২ লাখ ৭৩ হাজার টন ডিএপি এবং ২ লাখ ৮১ হাজার টন এমওপি সার মজুত রয়েছে। এই সার দিয়ে তিন মাসের সারের চাহিদা মেটানো সম্ভব।
অভিযোগ রয়েছে, বিসিআইসি ডিলাররা বরাদ্দ করা সার নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখে শুধু পছন্দের কিছু খুচরা বিক্রেতার কাছে এবং যাদের সাব-ডিলারের লাইসেন্স নেই তাদের কাছেও অধিক মুনাফায় বিক্রি করছেন। ফরিদপুরের সদর উপজেলার কৃষক আসাদ সেখ বলেন, মৌসুমের সময় অধিক দামে সার কিনতে হয়। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পরিকল্পিত সংকট সংকট তৈরি করে দাম বাড়ানো হচ্ছে। আরেক কৃষক আসাদ মাতুব্বর বলেন, একটি অসাধু সিন্ডিকেট কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাজারে সারের মূল্য বাড়িয়েছে। সরকারি ডিলারদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সার পাওয়া যাচ্ছে না, অথচ গ্রামের খুচরা দোকানে বেশি দামে মিলছে সেই সার।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন সাব-ডিলার সারের অতিরিক্ত মূল্য নেওয়ার অভিযোগ স্বীকার করেন। তারা বলেন, বিসিআইসি ডিলারদের কাছ থেকে ডিএপি সার আমাদের বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে তারা আমাদের কোনো রশিদ দেন না। রশিদ চাইলে পরে আমাদের সার দেবে না বলে হুমকি দেন। তাই আমরা ঝামেলা না করে ক্রয় মূল্য থেকে বস্তাপ্রতি ৫০ টাকা লাভ নিয়ে কৃষক পর্যায়ে বিক্রি করি।
ফরিদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ডিডি) কৃষিবিদ মো. শাহাদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা সারের কৃত্রিম সংকট ও হয়রানি রোধে কৃষকদের নিয়ে নিয়মিত গ্রুপ মিটিং করছি। কোনো অভিযোগ থাকলে নাম গোপন করে আমাদের জানালে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিচ্ছি। এছাড়া প্রতিটি সারের ডিলারের ঘরে ইউএনও ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার ফোন নম্বর লাল কাপড়ের ব্যানারে টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। যাতে কোনো অনিয়ম পেলে যে কেউ জানাতে পারেন।’
তিনি বলেন, ‘ফরিদপুরে আপাতত সারের ঘাটতি নেই। আশা করছি, মৌসুমজুড়ে কৃষকের প্রয়োজনীয় সার পেতে কোনো সমস্যা হবে না।’
