জৌলুস হারাচ্ছে বরিশাল নদীবন্দর
৩৫ নৌ রুটের মধ্যে টিকে আছে ৪টি
আকতার ফারুক শাহিন, বরিশাল
প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আগের মতো ব্যস্ততা আর হকারের হাকডাক নেই বরিশাল নদীবন্দরে। কয়েক বছর আগেও ৩৫ রুটে চলত কয়েকশ’ লঞ্চ, সেখানে এখন কোনো রকমে টিকে আছে মাত্র ১২ থেকে ১৫টি। তাও যাত্রীর অভাবে প্রায়ই থাকে ঘাটে। এখন কোনো রকমে টিকে আছে মাত্র ৪টি নৌ-রুট। সবমিলিয়ে প্রায় বন্ধের পথে দেশের অন্যতম প্রধান নদীবন্দর বরিশাল।
কীর্তনখোলা নদীর তীরে গড়ে ওঠা যে বন্দর ঘিরে একসময় সচল ছিল দক্ষিণের অর্থনীতি। এই বন্দর দিয়েই চলতো ঢাকা, চট্টগ্রাম আর খুলনাসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগ। ব্যস্ততা কমার সঙ্গে সঙ্গে বেকার হয়ে পড়েছে এই বন্দরকেন্দ্রিক বিভিন্ন পেশার কয়েক হাজার মানুষ। এদের অনেকে এরই মধ্যে পেশা বদলে ফেলেছেন। কেউ আবার কাজের জোগার করতে না পেরে অর্থাভাবে দিন কাটাচ্ছেন।
৫শ বছরেরও বেশি সময় ধরে বরিশাল নৌ বন্দরের যাত্রা শুরু মুঘল আমলে। তখন এর নাম ছিল গিরি ই বন্দর। সেসময় এই বন্দর থেকে যাত্রী পরিবহণের পাশাপাশি চলতো লবণ, মসলা ও কাঠের ব্যবসা। ১৮৭৬ সালে বন্দর হিসাবে মেলে এর আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি। তখন এই বন্দর দিয়ে কলকাতার পাশাপাশি যাতায়াত করা যেত তৎকালীন বার্মার রেঙ্গুনে। বরিশালের প্রবীণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মুকুল দাস বলেন, আমাদের ছোট বেলায় ৫শ’-১ হাজার মন মাল নিতে সক্ষম পাল তোলা বড় বড় মালবাহী নৌকা চলত এখান থেকে। পরে ধীরে ধীরে আসে ইঞ্জিনের লঞ্চ। মোংলা ও খুলনা বন্দর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রামে যাতায়াত করা নৌ-যানগুলো ছুয়ে যেত এই ঘাট। এই বন্দর ঘিরেই নৌ-পথের যোগাযোগ চলত দেশের উত্তর আর দক্ষিণের।
বরিশাল লঞ্চ মালিক সমিতির সহ-সভাপতি রিয়াজ উল কবির বলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে সড়কপথে যোগাযোগ। খুব কম সময়ে বাসে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে পারছে মানুষ। পণ্য পরিবহণও চলে সড়ক পথে। এ কারণে গুরুত্ব হারিয়েছে লঞ্চ। ঢাকা-বরিশাল রুটে চলাচলকারী এমভি অ্যাডভেঞ্চার লঞ্চের মালিক ও বরিশাল মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট নিজামউদ্দিন বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর কমেছে ঢাকা-বরিশাল রুটের লঞ্চ চলাচল। আগে যেখানে এই রুটে দৈনিক ২৪ থেকে ২৬টি লঞ্চ চলতো সেখানে এখন চলে মাত্র ৪/৬টি। সড়কপথে মাত্র ৩ ঘণ্টায় ঢাকা যাওয়ার সুযোগে এখন আর কেউ যাত্রী হয়ে ওঠে না লঞ্চে। এই রুটের লঞ্চ মালিক যারা আছেন তারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসায় নেমেছিলেন। তাদের এখন চরম দুর্ভোগ।
অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা একিন আলী বলেন, আগে লঞ্চের সংখ্যা ২শ’ হলে কমপক্ষে ২ হাজার শ্রমিক কাজ করত। এদের সিংহভাগই এখন বেকার। বরিশাল নদী বন্দরের এক কর্মকর্তা বলেন, লঞ্চ চলাচল কমে যাওয়ায় সরকারের রাজস্ব আয়-ও কমেছে এই বন্দর থেকে। বন্দরের জৌলুস কমে যাওয়ার আরেকটি বড় কারণ ইঞ্জিনচালিত অবৈধ ট্রলারের চলাচল। বর্তমান যে পরিস্থিতিতে আর কতদিন এই বন্দর চলবে সেটাই চিন্তার বিষয়।
লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি আজিজুল হক আক্কাস বলেন, এসব অবৈধ নৌ-যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আমরা অনেকবার সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে অনুরোধ জানিয়েছি। কিন্তু তারা দেখেও না দেখার ভান করছে। এসব নৌ-যানের চলাচল বন্ধ হলে কিছুটা হলেও আগের চেহারা ফিরে পেত এই নৌ-বন্দর।
