Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

ওসমান হাদির ওপর হামলা

চট্টগ্রামেও উদ্বিগ্ন সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীরা

Icon

আহমেদ মুসা, চট্টগ্রাম

প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় চট্টগ্রামে বিভিন্ন দলের সম্ভাব্য সংসদ-সদস্য (এমপি) প্রার্থীরা নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। তফসিল ঘোষণার একদিনের মাথায় এমন ঘটনায় নেতাকর্মীদের মধ্যেও সৃষ্টি হয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। আগামী নির্বাচন বানচালে কিংবা পেছাতে যারা ষড়যন্ত্র করছেন, তারাই এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছেন বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। এর আগে চট্টগ্রাম-৮ আসনে নির্বাচনি গণসংযোগে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। তবে তিনি সুস্থ হয়ে আবারও প্রচারণায় নেমেছেন। এদিকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, সংসদ-সদস্য প্রার্থীদের নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যাপারে এখনো কোনো নির্দেশনা আসেনি। তবে কোনো প্রার্থী নিরাপত্তাহীনতায় ভুগলে বা নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণায় নিরাপত্তার প্রয়োজন হলে তাদের নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুত আছে পুলিশ প্রশাসন। কোনো কোনো প্রার্থী ইতোমধ্যে প্রশাসনের কাছে নানা দাবি নিয়ে চিঠি দিয়েছেন বলে জানা গেছে। ৫ আগস্টের পর থানা ও ফাঁড়ি থেকে লুণ্ঠিত অস্ত্র উদ্ধার এবং সন্ত্রাসী গ্রেফতারে প্রশাসনকে আরও কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। অন্যদিকে চট্টগ্রামে নির্বাচনের আচরণবিধি মনিটরিং করতে ৪২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা। শুক্রবার নির্বাচনি এলাকাগুলোয় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের অফিস আদেশ জারি করেন তিনি। আজ থেকে তাদের পুরোদমে মাঠে নামার কথা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, আগামী নির্বাচনে যেহেতু ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ অংশ নিতে পারছে না, তাই এই নির্বাচন বানচালে তাদের ষড়যন্ত্র তো আছে। তার ওপর নির্বাচনে ভোটে জিততে পারবে না-এমন কোনো কোনো দলও নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে বলে বিভিন্ন সূত্র দাবি করেছে। বিএনপি নেতাদের বক্তব্য থেকেও এমন বিষয় উঠে আসছে। এছাড়া চট্টগ্রামে এবার বড় নিরাপত্তা শঙ্কা তৈরি করেছে গণ-অভুত্থ্যানের পর থানা ও ফাঁড়ি থেকে লুট হওয়া পুলিশের অস্ত্র। এসব অস্ত্র এখন রাজনৈতিক নেতাকর্মী থেকে শুরু করে দাগি, জেল পলাতক ও শীর্ষ সন্ত্রাসীদের হাতে চলে গেছে। এছাড়া গণ-অভ্যুত্থানের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুর্বলতায় অরক্ষিত সীমান্ত দিয়েও দেদার প্রবেশ করা অস্ত্র চট্টগ্রামসহ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। জুলাই আন্দোলনে কারাগার ভেঙে শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চরমপন্থিসহ অনেকে বের হয়ে গেছে। তারাও চলে গেছে আন্ডারওয়ার্ল্ডে। এ ধরনের অনেক সন্ত্রাসী নিজেদের অস্তিত্ব টেকাতে রাজনৈতিক নেতাদের আশ্রয়ে চলে যাচ্ছে। তারাও প্রার্থীদের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে বলে জানান তারা।

চট্টগ্রাম-৯ আসন (কোতোয়ালি-বাকলিয়া) আসনে বিএনপির প্রার্থী আবু সুফিয়ান বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও উন্নতি করতে হবে। আর এটি সরকার একা করতে পারবে না। নির্বাচন কমিশন, পুলিশ ও প্রশাসনের সমন্বয়ে করতে পারবে।

চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনের বিএনপি মনোনীত সম্ভাব্য প্রার্থী এনামুল হক এনাম যুগান্তরকে বলেন, ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় তিনি বড় ধরনের ষড়যন্ত্র দেখছেন। এখানে পলাতক ফ্যাসিস্টরা যেহেতু নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না, তারা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে তার ধারণা। আবার যারা ভোটে জিততে পারবেন না, কিন্তু ক্ষমতায় চলে গেছেন-এমন ভাব দেখাচ্ছেন, ঘটনার পরপর বিএনপির সিনিয়র নেতা মির্জা আব্বাসের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করছেন, তারাই এ ঘটনা ঘটিয়েছেন কি না, সেটিও খতিয়ে দেখা দরকার। এ অবস্থায় নিজের নিরাপত্তা শঙ্কার বিষয়টিও তিনি উড়িয়ে দিচ্ছেন না বলে জানান।

লুট হওয়া অনেক আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি উদ্ধার হয়নি : ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সিএমপির আটটি থানা ও আটটি ফাঁড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুব্ধ লোকজন। সেসময় ৮১৩টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৪৪ হাজার ৩২৪টি গুলি লুট হয়। লুণ্ঠিত এসব অস্ত্র ও গুলির বেশির ভাগই উদ্ধার হয়নি। আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের অস্ত্রভান্ডারও অক্ষত রয়ে গেছে। আর থানা থেকে লুণ্ঠিত অস্ত্রও চলে গেছে সন্ত্রাসীদের হাতে। সিএমপির জনসংযোগ শাখার সিনিয়র সহকারী কমিশনার আমিনুর রশীদ যুগান্তরকে বলেন, ঢাকার ঘটনার পর থেকে চট্টগ্রামের বিভিন্ন দলের সংসদ-সদস্য প্রার্থীদের কাছ থেকে কিছু দাবিদাওয়া এসেছে। তবে প্রার্থীদের নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যাপারে কেন্দ্র (ঢাকা) থেকে কোনো ধরনের ইনস্ট্রাকশন আসেনি। যারা (সংসদ-সদস্য প্রার্থী) নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন, স্থানীয় থানার ওসি কিংবা ফাঁড়িকে জানালেই তারা প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা পাবেন। এটা নিশ্চিত করা হয়েছে।

৪২ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ, কে কোথায় দায়িত্ব পালন করবেন : নির্বাচনি এলাকাগুলোয় আচরণবিধি প্রতিপালন নিশ্চিত করতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের দায়িত্ব পালনের জন্য চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় আসনে ৪২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নগরীর ৬ সংসদীয় আসনে ১২ জন এবং জেলার ১০ আসনে ৩০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নগরীর আসনগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম-৮ আসনের চান্দগাঁ-পাঁচলাইশ-বায়েজিদ বোস্তামী থানা এলাকায় দায়িত্ব পালন করবেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্লাবন কুমার বিশ্বাস এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শিফাত বিনতে আরা। চট্টগ্রাম-৯ কোতোয়ালি আসনের মধ্যে কোতোয়ালি-সদরঘাট থানায় দায়িত্ব পালন করবেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুমা আক্তার কণা এবং বাকলিয়া-চকবাজার থানায় দায়িত্ব পালন করবেন সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহমুদ হাসান। চট্টগ্রাম-১০ আসনের ডবলমুরিং-পাহাড়তলী ও হালিশহর থানায় দায়িত্ব পালন করবেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তানভীর হাসান তুরান এবং সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আফরিন ফারজানা পিংকি। আকবরশাহ ও খুলশী থানায় দায়িত্ব পালন করবেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হুছাইন মুহাম্মদ এবং সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জান্নাতুল ফেরদাউস। চট্টগ্রাম-১১ আসনের বন্দর-পতেঙ্গা ও ইপিজেড থানায় দায়িত্ব পালন করবেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফারিস্তা করিম এবং সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মঈনুল হাসান।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম