রাঙ্গা-নুরু জাতীয় পার্টিতে ফিরে আসায় উজ্জীবিত নেতাকর্মীরা
মাহবুব রহমান, রংপুর
প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
সাবেক মহাসচিব ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের কাছে ক্ষমা চেয়ে আবারও জাতীয় পার্টিতে ফিরেছেন। একইসঙ্গে আওয়ামী লীগ থেকে ডিগবাজি দিয়ে আবারও জাতীয় পার্টিতে ফিরেছেন সাবেক সংসদ-সদস্য নূর মোহাম্মদ মণ্ডল। নুর মোহাম্মদ মণ্ডল রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসনে পতিত সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নির্বাচনে পরাজিত করে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। রাঙ্গা রংপুর-১ (গংগাচড়া-সিটি আংশিক) আসনে একাধিকবার জাতীয় পার্টির টিকিটে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। দুই প্রভাবশালী নেতার দলে ফিরে আসা ঘিরে রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা। জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয়েছেন।
দলীয় সূত্র জানায়, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সবাই একসঙ্গে মাঠে নেমে ‘জাতীয় পার্টির দুর্গ’ হিসাবে পরিচিত রংপুর পুনরুদ্ধারে কাজ করবেন এমন মিশন বাস্তবায়ন করতেই দুই নেতাকে দলে ফেরানো হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান, রংপুর মহানগর সভাপতি ও সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টিকে শক্তিশালী করতে যারা ভুল বুঝে দূরে সরে গিয়েছিলেন, তারা এখন দলে ফিরছেন। এটি দলের জন্য ইতিবাচক বার্তা। ১৪ ডিসেম্বর শনিবার রাতে রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে কো-চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা ও জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক মো. আজমল হোসেন লেবুর হাতে ফুল দিয়ে জাতীয় পার্টিতে ফেরেন নূর মোহাম্মদ মণ্ডল। যদিও ওই রাতেই ফেসবুক লাইভে এসে তিনি দাবি করেন, সাবেক মেয়রের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেননি। পার্টির নীতিনির্ধারকদের একাধিকজন জানিয়েছেন তিনি পার্টিতে ফিরেছেন এবং রংপুর-৬ আসনে দলের প্রার্থী হবেন।
এর এক দিন পরে সোমবার রংপুর-১ আসন থেকে জাতীয় পার্টির তিনবারের সাবেক সংসদ-সদস্য, জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা ঢাকার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দলে ফেরেন। তিনি এ সময় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আনুষ্ঠানিকভাবে ফুল দিয়ে দলে ফেরেন। পরে ফেসবুক লাইভে এসে তিনি চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের কাছে ক্ষমা প্রার্থনার কথা জানান। জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, রাঙ্গা ভাই জাতীয় পার্টির পরীক্ষিত নেতা। তার দলের প্রতি আনুগত্য রয়েছে। দলের জন্য অনেক লড়াই করেছে প্রতিপক্ষের সঙ্গে। তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ আছে তার। তাকে আমরা সাদরে গ্রহণ করেছি। নূর মোহাম্মদ মণ্ডলের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় জাতীয় পার্টির হাত ধরেই। ১৯৯৬-এ জাতীয় পার্টি ও ২০০১-এ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসাবে সাবেক পতিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পরাজিত করে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। পরে বিএনপি ও আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সবশেষ ২০২৪ সালের উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসাবে তাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। একাধিকবার দল পরিবর্তনের কারণে স্থানীয়ভাবে তিনি দল পরিবর্তনে ‘ডিগবাজি’ নেতা হিসাবে পরিচিতি লাভ করেন। এ ছাড়া নূর মোহাম্মদ মণ্ডল দুর্নীতির মামলাসহ নানাভাবে বিতর্কিত। আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের মামলায় ১৯ জুন তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। আদালতের নির্দেশে তার বিপুল সম্পত্তি ও ব্যাংক হিসাব জব্দের আদেশও রয়েছে। তবে তার এলাকায় নিজস্ব ভোট ব্যাংক রয়েছে। তিনি এলাকায় জনপ্রিয় নেতা এবং তৃণমূলের লোকজনের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতাই জনপ্রিয়তার কারণ। এ আসনে তিনি জাতীয় পার্টির প্রার্থী হলে বর্তমান জামায়াত ও বিএনটির প্রার্থীরা যে নির্বাচনের প্রচারে ফুরফুরে মেজাজে আছেন, সেখানে ভাটা পড়বে। তিনি হবেন দুটি দলের প্রার্থীর জন্য শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী।
