চট্টগ্রামে উদ্ধার সোয়া ২ কোটি টাকার ইয়াবা গায়েব!
এম এ কাউসার, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
চট্টগ্রামে চেকপোস্টে তল্লাশি করে ৯০ হাজার পিস ইয়াবাসহ আটক হওয়া এক পুলিশ সদস্যকে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই পুলিশ সদস্যের নাম ইমতিয়াজ হোসেন। তিনি একজন কনস্টেবল। ৮ ডিসেম্বর রাতে নগরীর বাকলিয়া থানাধীন নতুন ব্রিজ এলাকায় পুলিশি তল্লাশিতে ইয়াবার চালানটি উদ্ধার হয়েছে। তবে আটক হওয়া ওই পুলিশ সদস্য কক্সবাজার জেলা আদালতের এক বিচারকের গানম্যান হওয়ায় তাকে ছেড়ে দিয়েছে নগরীর বাকলিয়া থানা পুলিশ। পরে চালানটি গায়েব করে ফেলা হয়েছে।
এ ঘটনায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অভ্যন্তরে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র জানায়, ৮ ডিসেম্বর রাত সোয়া ২টার দিকে নগরীর শাহ আমানত (নতুন ব্রিজ) সেতুর বাকলিয়া থানার অংশে ঢাকাগামী একটি বাসে তল্লাশি চালায় পুলিশ। বাসটি কক্সবাজার থেকে ওইদিন রাত ১০টায় ছেড়ে এসেছিল। পরে বাস থেকে ইমতিয়াজ হোসেন নামে এক যুবককে আটক করে পুলিশ বক্সের ভেতর নিয়ে যাওয়া হয়। তার সঙ্গে থাকা ব্যাগ তল্লাশি করে পুলিশ ৯ বক্স ইয়াবা উদ্ধার করে। প্রতিটি বক্সে ১০ হাজার পিস করে ৯ বক্সে ৯০ হাজার পিস ইয়াবা ছিল। পরে ওই যুবক নিজেকে পুলিশ সদস্য পরিচয় দেন এবং কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক রোকেয়া আক্তারের গানম্যান বলে জানান। পরিচয় পেয়ে বাকলিয়া থানার ওসি (তদন্ত) তানভীর আহমেদ ইয়াবাগুলো রেখে পুলিশ সদস্য ইমতিয়াজ হোসেনকে ছেড়ে দেন। এ সময় ঘটনাস্থলে বাকলিয়া থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই আল আমিন ও দায়িত্বরত এএসআই সাদ্দামসহ অন্যান্য ফোর্স উপস্থিত ছিল। প্রতিটি ইয়াবার দাম ২৫০ টাকা করে প্রায় সোয়া ২ কোটি টাকা। বিপুলসংখ্যক এই ইয়াবা ভাগবাঁটোয়ারা করে নিয়েছেন তারা।
কক্সবাজার পুলিশ লাইন্সের আরআই ইন্সপেক্টর আশরাফ আলী বলেন, পুলিশ সদস্য ইমতিয়াজ হোসেন ২০২২ সালের ১৩ জুলাই কক্সবাজার পুলিশ লাইনে যোগ দেন। এরপর থেকেই তিনি গানম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। বলা যায়, চাকরির শুরু থেকেই গানম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন ইমতিয়াজ। তার ব্যবহৃত ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর যাচাই করে দেখা যায়, গত তিন মাসের মধ্যে প্রতি মাসেই কয়েকবার করে ঢাকায় গিয়েছেন তিনি। এর মধ্যে ১৩ অক্টোবর কক্সবাজার থেকে ঢাকায় গিয়েছিলেন। আবার ১৭ অক্টোবর কক্সবাজারে চলে আসেন। পরের মাসে ১৫ নভেম্বর কক্সবাজার থেকে ঢাকায় যান এবং ১৭ নভেম্বর চলে আসেন। পাঁচ দিন পর আবার ২২ নভেম্বর ঢাকায় যান এবং ২৪ নভেম্বর কক্সবাজারে ফিরে আসেন। সবশেষ ৮ ডিসেম্বর রাতে কক্সবাজার থেকে ঢাকার বাসে ওঠেন ইমতিয়াজ। তবে কর্ণফুলী ব্রিজের চেকপোস্টে আটক হন তিনি। এরপর মুক্ত হয়ে চলে যান গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়। ইমতিয়াজ কুমিল্লার মুরাদনগর থানার বাখরনগর গ্রামের বাবলু মিয়ার ছেলে। তার বিপি নং-০৩২২২৪১১০৯। ইমতিয়াজের এক ব্যাচমেট বলেন, ‘কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে সায়েম নামে এক পুলিশ সদস্য গানম্যান হিসাবে ছিলেন। তার সঙ্গে ইমতিয়াজের সখ্য ছিল। সায়েমকে খাগড়াছড়িতে বদলি করার পর সেই স্থানে ইমতিয়াজ হোসেন আসেন। তবে সায়েম খাগড়াছড়ি থেকে প্রায় সময় কক্সবাজার আসা-যাওয়া করতেন। সায়েমের মাধ্যমেই ইয়াবা কারবারের সঙ্গে ইমতিয়াজ জড়িয়ে পড়েন। এর মধ্যে সায়েমসহ দুই ব্যক্তিকে এক বছর আগে ইয়াবাসহ আটক করে খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপারের কাছে সোপর্দ করেছিল র্যাব।’
এদিকে বাকলিয়া থানার এক এসআই বলেন, ‘ইয়াবা উদ্ধারের পর এক পুলিশ সদস্যকে ছেড়ে দেওয়া এবং ইয়াবাগুলো গায়েব করায় ওইদিন যারা দায়িত্বে ছিলেন, সবাই বিপাকে রয়েছেন। এছাড়া এলাকাটি চাক্তাই ফাঁড়ির আওতাধীন। কিন্তু চাক্তাই ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মোবারক ঘটনাস্থলে ছিলেন না। অথচ তিনিও বিপাকে পড়েছেন। জানতে চাইলে বাকলিয়া থানার ওসি আফতাব উদ্দিন বলেন, ‘এ ধরনের একটি বিষয় শুনেছি। তবে যাচাই-বাছাই করে সত্যতা পাওয়া যায়নি।’
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে পুলিশ সদস্য ইমতিয়াজ হোসেন, বাকলিয়া থানার ওসি (তদন্ত) তানভীর আহমেদ, সেকেন্ড অফিসার এসআই আল আমিন ও এএসআই সাদ্দামের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও রিসিভ না করায় তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সিএমপির সহকারী পুলিশ কমিশনার (পিআর) আমিনুর রশিদ বলেন, ‘বিষয়টি আমার নলেজে নেই। এ ধরনের ঘটনা ঘটলে অবশ্যই ডিমার্টমেন্টাল ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক রোকেয়া আক্তার বলেন, ‘ইমতিয়াজ হোসেন নামে আমার একজন গানম্যান রয়েছে। তবে এ ধরনের কোনো বিষয়ে আমি অবগত নই। কক্সবাজারে আমি নতুন জয়েন করেছি। তার বিষয়ে জেনে আমি পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।’
