Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

ট্রানজিট বানিয়ে ইলিশ পাচার

রপ্তানিতে এহেন অনিয়ম বন্ধ করা জরুরি

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ট্রানজিট বানিয়ে ইলিশ পাচার

দেশের বাজারে ইলিশ এখন যেন সোনার হরিণ। উচ্চমূল্যের কারণে এটি এখন মধ্যবিত্তেরও নাগালের বাইরে। তবে দেশের বাইরে রপ্তানির ক্ষেত্রে ঘটছে উলটোটা। সোমবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-দেশের বাজারে ইলিশের দাম বেশি হলেও ভারতে কম দামে রপ্তানি করা হচ্ছে। বাংলাদেশে যেখানে ইলিশের বাজারদর কেজিপ্রতি ১৯০০-২০০০ টাকা, সেখানে রপ্তানি হচ্ছে ১৫২৫ টাকা দরে। কিন্তু কীভাবে? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে মিলেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

জানা গেছে, ইলিশের গন্তব্য শুধু ভারত নয়; সেখান (ভারত) থেকে তা পুনঃরপ্তানি হয়ে যাচ্ছে ইউরোপ, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশে। অর্থাৎ ভারতকে ট্রানজিট হিসাবে ব্যবহার করে তৃতীয় দেশগুলোতে যাচ্ছে বাংলাদেশের ইলিশ। জানা গেছে, এর পেছনে রয়েছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট, যাদের নিয়ন্ত্রণে চলছে এই ব্যবসা। আর এই সিন্ডিকেটে রয়েছেন দুই দেশের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী। ভয়াবহ ব্যাপার হচ্ছে, বছরে শুধু একবারই নয়, বরং সারা বছরই রপ্তানির নামে চলে ইলিশ পাচার। সেক্ষেত্রে ব্যবহার হয় সীমান্তে চোরাচালানের নানা রুট।

উল্লেখ্য, দাম নিয়ন্ত্রণ ও দেশে ইলিশ সহজলভ্য করতে ২০০৭ সাল থেকে বিদেশে ইলিশ রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিগত সরকার। তবে দেড় যুগ ধরে রপ্তানি বন্ধ থাকলেও এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ছিল ভারত। প্রতিবছর পূজায় ভারতে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিত সরকার। সরকারের বেঁধে দেওয়া দামেই হতো রপ্তানি। তবে সেই দাম ছিল দেশের বাজারের চেয়ে কম। দুঃখজনক হলেও সত্য, এবারও ঘটেছে একই ঘটনা। চলতি বছর ১২০০ টন ইলিশ ভারতে রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। এক্ষেত্রে দাম ধরা হয়েছে কেজিপ্রতি সাড়ে ১২ ডলার বা ১ হাজার ৫২৫ টাকা। নানা মহলে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার পরও সরকার দাম বাড়ায়নি, তেমনি রহস্যজনক কারণে রপ্তানিকারকরাও দাম বাড়ানোর কোনো আবেদন করেনি। উপরন্তু অনুমতি পাওয়ার পর রপ্তানি শুরু করে দেয় ৩৭ রপ্তানিকারক।

উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, পাচারের পেছনে জড়িত এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা এতটাই প্রভাবশালী যে, পরিবর্তিত সময়েও তাদের দুষ্কর্মে রাশ টানা সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের মধ্যে নীরব হোসেন টুটুল, সেভেন স্টার ও কেবিসির মতো প্রতিষ্ঠানগুলো এই কারবারে জড়িত বলে জানা গেছে। বলা বাহুল্য, এসব সিন্ডিকেট একদিকে দেশের ইলিশ বাজারকে অস্থিতিশীল করছে, অন্যদিকে সরকারের রপ্তানি নীতিকে ফাঁকি দিচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই এ পরিস্থিতি দেশের অর্থনীতির জন্য এক মারাত্মক ক্ষতি। সরকার যদি ইলিশের দাম নিয়ন্ত্রণ এবং দেশের মানুষের কাছে এ মাছ সহজলভ্য করতে চায়, তাহলে এই সিন্ডিকেটকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার বিকল্প নেই।

আমরা মনে করি, শুধু পূজার সময় সীমিত রপ্তানির অনুমতি দিলেই সমস্যার সমাধান হবে না, বরং সারা বছর ধরে চলা এই চোরাচালান বন্ধ করতে হবে। তা না হলে দেশের ইলিশ দেশের মানুষের কাছে কেবল সোনার হরিণই থেকে যাবে, আর অবৈধ সিন্ডিকেটের পকেট ভরবে। এই অনিয়ম বন্ধ করে ইলিশের প্রকৃত বাজারমূল্য নিশ্চিত করতে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম