বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস : রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার দ্রুত অবসান কাম্য
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বিশ্বব্যাংক। ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধি সরকার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কম হবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ শীর্ষক এ প্রতিবেদনে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়, যদিও সরকারের লক্ষ্যমাত্রা হলো ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের এমন পূর্বাভাসের কারণ দেশের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং সংকটে থাকা অর্থনীতি। বস্তুত দেশের অর্থনীতিতে এখনো মোটাদাগে চার ধরনের চ্যালেঞ্জ আছে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক। এগুলো হলো : বেসরকারি বিনিয়োগে শ্লথগতি, কর্মসংস্থানে স্থবিরতা, উচ্চ ঋণখেলাপিতে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাংক খাত এবং রাজস্ব আদায়ে ক্রমাবনতি।
গত কয়েক বছর ধরেই দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি নানা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে স্বভাবতই বিনিয়োগে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। আশা করা হচ্ছে, একটি নির্বাচন হলে এ অনিশ্চয়তা কেটে যাবে। যেসব ব্যবসায়ী বিনিয়োগে ভরসা পাচ্ছেন না, তারা আস্থা ফিরে পাবেন। তখন দেশে বিনিয়োগ বাড়বে। তবে রাজস্ব আদায় সন্তোষজনক না হওয়ায় সরকারের ঋণনির্ভরতা বাড়ছে। অত্যাবশ্যকীয় ও উন্নয়নকাজ করতে গিয়ে সরকারকে ঋণ নিতে হচ্ছে। এ বিষয়ে সতর্কতা প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে, এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে। রাজস্ব আদায় না বেড়ে ঋণনির্ভরতা বাড়তে থাকলে সেক্ষেত্রে একসময় পরিশোধের চাপ বৃদ্ধি পবে।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে আবারও ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ব্যাংক খাতে মূল চ্যালেঞ্জ খেলাপি ঋণ। বস্তুত খেলাপি ঋণ সামগ্রিক অর্থনীতির জন্যই বড় ধরনের ক্ষত সৃষ্টি করেছে। বিগত সরকারের আমলে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা বিপুল অঙ্কের ঋণ নিয়ে তা দেশের বাইরে পাচার করেছেন। এ ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে সরকার। খেলাপি ঋণ আদায় এবং পাচারের অর্থ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হলেও এক্ষেত্রে এখনো তেমন সুফল মেলেনি। আমরা মনে করি, এ ব্যাপারে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে সরকারকে।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে, বাণিজ্য ও প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের বিধিনিষেধ হ্রাস করতে হবে। সুপারিশে বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত করা, নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে শক্তিশালী করা, অর্থায়নের সমস্যা দূর করা, আমলাতান্ত্রিক বিধিনিষেধ দূর করা, রপ্তানিসংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি করা এবং বাজার প্রতিযোগিতা বৃদ্ধির সক্ষমতা বৃদ্ধি, ব্যাংক খাতের স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার ও স্থিতিস্থাপকতা তৈরি করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, আর্থিক সুরক্ষা জাল ও সংকট ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ, কার্যকর ব্যাংক পুনর্গঠন ও দ্রুত খেলাপি ঋণ সমস্যার নিষ্পত্তি করতে হবে। বিশ্বব্যাংক মনে করিয়ে দিয়েছে, বাংলাদেশের রাজস্ব ও জিডিপি অনুপাত বিশ্বে সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে। এদিকে দৃষ্টি দেওয়া জরুরি বলে মনে করি আমরা। বিশ্বব্যাংকের সুপারিশগুলো আমলে নিয়ে আর্থিক খাতের সংস্কার করা দরকার। অবশ্য সরকার কিছু উল্লেখযোগ্য সংস্কার কাজ শুরু করেছে। এসব সংস্কার বাস্তবায়নে গুরুত্ব বাড়াতে হবে। আমরা আশা করছি, নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দেশের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা কেটে যাবে এবং অর্থনীতি তার গতি ফিরে পাবে। এ লক্ষ্যেই সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের অগ্রসর হওয়া উচিত।
