Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

মজুত গ্যাস, অনুসন্ধান ও খননে কালক্ষেপণ নয়

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মজুত গ্যাস, অনুসন্ধান ও খননে কালক্ষেপণ নয়

দেশে গ্যাস সংকট এখন একটি বাস্তবতা, যা শিল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদন, পরিবহণ, জনজীবন-সব ক্ষেত্রেই মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। গ্যাস সংকটের প্রভাব পড়ছে মূলত বিদ্যুৎ উৎপাদনে। দেশে উৎপাদিত গ্যাসের উল্লেখযোগ্য অংশ ব্যবহার করা হয় এ খাতে। এ ছাড়া সার কারখানা, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, গৃহস্থালি (আবাসিক), সিএনজি এবং শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানেও গ্যাস ব্যবহার করা হয়। গ্যাস সংকটের কারণে শিল্পকারখানার উৎপাদন প্রায়ই ব্যাহত হয়। শিল্পপ্রতিষ্ঠান সময়মতো পণ্য রপ্তানি করতে না পারলে বাতিল হয় ক্রয়াদেশ। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, আমদানি করা ব্যয়বহুল এলএনজি দিয়েও চাহিদা মেটানো কঠিন হয়ে পড়ছে।

এ সংকট রাতারাতি তৈরি হয়নি; বরং অভ্যন্তরীণ গ্যাস অনুসন্ধানে দীর্ঘদিনের অবহেলাই এর প্রধান কারণ। একসময় আমরা শুনেছি, বাংলাদেশ গ্যাসের উপর ভাসছে। এরপর শুনেছি, ফুরিয়ে আসছে গ্যাসের মজুত। কিন্তু বাস্তবতা হলো, দেশে গ্যাসের প্রকৃত মজুতের কোনো তথ্য নেই। যে পরিমাণ গ্যাস আবিষ্কৃত হয়েছিল, তার মজুত ক্রমেই কমে আসছে। পুরোনো কূপগুলোয় কিছু গ্যাস রয়েছে। কিন্তু নতুন কূপ অনুসন্ধানের কাজে তেমন গতি নেই। তবে ভূতত্ত্ববিদদের মতে, সিলেট, হাতিয়াসহ কয়েকটি এলাকায় গ্যাসের মজুত রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় সাগরতলে বিপুল পরিমাণ গ্যাস থাকার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু তা অনুসন্ধান ও উত্তোলনের কোনো জোরালো উদ্যোগ নেই। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন হতে পারে, যদি আহরণই করা না যায়, তাহলে গ্যাসের মজুত থেকে লাভ কী?

বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরে সতর্ক করে আসছিলেন, পুরোনো গ্যাসক্ষেত্রগুলোর মজুত দ্রুত ফুরিয়ে আসছে এবং নতুন করে অনুসন্ধান ও কূপ খননে জোর দেওয়া অত্যাবশ্যক। কিন্তু সরকারি উদ্যোগ পর্যাপ্ত ছিল না। বর্তমান সরকার কিছু কূপ খনন ও ওয়ার্কওভারের উদ্যোগ নিলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম ও ধীরগতির। এ পরিস্থিতিতে দেশের স্থলভাগ, বিশেষ করে সিলেট ও ভোলার মতো সম্ভাবনাময় এলাকা এবং গভীর সমুদ্রে ব্যাপক পরিসরে অনুসন্ধান কার্যক্রম চালানো উচিত। নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান ও আবিষ্কারে ত্রিমাত্রিক সার্ভে সম্পন্ন করে কূপ খনন করা হলে সুফল মিলতে পারে।

জ্বালানি খাতে আমাদের আত্মনির্ভর হতে হবে। দেশে গ্যাস সংকট তীব্র হওয়ায় বাড়ছে এলএনজি-নির্ভরতা। গ্যাসের অভাবে বিকল্প জ্বালানির ব্যবহারে ব্যয় বেড়ে গেলে উৎপাদিত পণ্যের দামও বেড়ে যায়, যার প্রভাব পড়ে নানাভাবে। এ কারণে গ্যাস খাতকে দেওয়া উচিত সর্বোচ্চ গুরুত্ব। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভবিষ্যতের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দেশে গ্যাস অনুসন্ধানের পাশাপাশি কূপ খনন কার্যক্রম জোরদার করা উচিত। এক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগের পাশাপাশি বাপেক্সের মতো রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন, যাতে তারা দ্রুত ও কার্যকরভাবে অনুসন্ধান ও খননকাজ পরিচালনা করতে পারে। মনে রাখতে হবে, গ্যাস অনুসন্ধানে প্রথম কয়েকটি কূপে সফলতা না-ও মিলতে পারে, কিন্তু চেষ্টা থামানো চলবে না। আমদানির পেছনে শত শত কোটি টাকা খরচ না করে সেই অর্থ দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধানে বিনিয়োগ করা হলে তা দেশের অর্থনীতি এবং জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য সুদূরপ্রসারী ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে। দেশের জ্বালানি খাতকে বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে এর কোনো বিকল্প নেই।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম