পেঁয়াজে ফের সিন্ডিকেটের থাবা
প্রশাসনের নীরবতা অগ্রহণযোগ্য
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
পেঁয়াজ নিয়ে বাজারে যে নোংরা খেলা চলছে, তা আর শুধু অস্থিরতার পর্যায়ে নেই, এটি এখন মুনাফালোভী সিন্ডিকেটের নির্লজ্জ কারসাজিতে পরিণত হয়েছে। শুক্রবার যুগান্তরের খবরে উঠে এসেছে, দেশের মাটিতে যখন নতুন পেঁয়াজের জন্য ঘামে ভেজা দেহে কৃষক অপেক্ষা করছেন, ঠিক তখনই অসাধু সিন্ডিকেট অতি মুনাফার লোভে ফের কারসাজি শুরু করে দিয়েছে। জানা গেছে, মৌসুম শুরুর আগেই বাজারের দখল নিতে আমদানির ফাঁদ পেতেছে সেই চক্র। আড়তদার, কমিশন এজেন্ট ও দাদন ব্যবসায়ীদের এ চক্র পেঁয়াজ মজুত করে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছে। কারণ একটাই-দেশে ভালো উৎপাদন হলেও কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা।
পরিতাপের বিষয়, এই চক্রের নোংরা খেলায় ভোক্তা তো বটেই, দেশের অন্নদাতা কৃষক ক্ষতির মুখে পড়লেও এদের বিষয়ে প্রশাসন বরাবরের মতোই নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। সামগ্রিক বাজার ব্যবস্থার কদর্য চিত্র তখনই উঠে আসে, যখন পরিকল্পিতভাবে মাত্র এক সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি ৭০-৮০ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১৪০ টাকায় পৌঁছে যায়। যেখানে কৃষি মন্ত্রণালয় বলছে, দেশে পেঁয়াজের পর্যাপ্ত মজুত আছে এবং নতুন গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ বাজারে আসছে, সেখানে ব্যবসায়ীদের আমদানির জন্য মরিয়া হয়ে ওঠা প্রমাণ করে, তাদের লক্ষ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা নয়, বরং কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়িয়ে কৃষকের ন্যায্য অধিকার ও ভোক্তার স্বস্তি কেড়ে নেওয়া।
বলা বাহুল্য, প্রতিবছর এ চক্রই কম দামে কৃষকের কাছ থেকে ফসল হাতিয়ে নেয় এবং পরে আকাশছোঁয়া দামে বিক্রি করে। বছর বছর কারসাজির কারণে পেঁয়াজের এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি আর মেনে নেওয়া যায় না। সরকার যদি এখনই আমদানি বন্ধ করে অসাধু মজুতদারদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে শুধু কৃষকই পথে বসবে না, বাজারব্যবস্থা আরও দুর্বল হয়ে পড়বে। সময় এসেছে মুখে কুলুপ এঁটে না থেকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার। আমরা মনে করি, শুধু অযৌক্তিক আইপি আবেদন বাতিল করাই যথেষ্ট নয়, বাজারে নজরদারি বাড়িয়ে প্রতিটি স্তরে মূল্যবৃদ্ধির কারসাজির মূল কারণ খুঁজে বের করে কারসাজির নেপথ্যে যারা রয়েছে, তাদের আইনের আওতায় আনা জরুরি। কৃষক ও ভোক্তার স্বার্থ রক্ষায় কঠোর নীতি গ্রহণ ও তার বাস্তবায়নই পারে বাজারে এই সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য থেকে দেশকে মুক্ত করতে।

