উত্তপ্ত রাজনীতি
নির্বাচন যথাসময়ে হতেই হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নিশ্চিত সময় ঘোষণা করা হয়েছে। পুরো জাতি প্রস্তুত হচ্ছে ভোট দেওয়ার জন্য। এ এক দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা। গত তিনটি নির্বাচনে ভোটাররা ভোট দিতে পারেননি। আর অগ্রহণযোগ্য ওই নির্বাচনগুলোকে গণতান্ত্রিক আখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগ তাদের শাসন চালিয়ে গেছে। ওই শাসন পরিণত হয়েছিল দুঃশাসনে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার যে বিজয় হয়েছিল, তার অন্যতম লক্ষ্য ছিল ভোটের মাধ্যমে সরকার গঠনের জন্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। সে ব্যবস্থা গ্রহণ করাও হয়েছে। কিন্তু এই নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক পক্ষগুলোর মধ্যে শুরু হয়েছে তীব্র বাদানুবাদ। দেখা দিয়েছে উত্তেজনাও।
গণভোট ও জুলাই সনদ ইস্যুতে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী কার্যত মুখোমুখি অবস্থানে চলে গেছে। কেউ কেউ এটাকে পয়েন্ট অব নো রিটার্ন বলছেন। বিএনপি বলছে, সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোট হতে দেওয়া হবে না। অন্যদিকে জামায়াত বলছে, নির্বাচনের আগেই গণভোট হতে হবে। জামায়াতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুল বাঁকা করা হবে। তারা ১১ তারিখ পর্যন্ত আলটিমেটাম দিয়েছেন, এর মধ্যে আশ্বাস না পেলে ঢাকার চিত্র ভিন্ন হবে বলেও তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। বলা বাহুল্য, সরকারের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে, তারা যেন আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিতর্কের অবসান ঘটান। সরকার কর্তৃক দেওয়া ৭ দিন সময় শেষ হয়ে এসেছে প্রায়। কিন্তু সমঝোতার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
আমরা হতাশ হচ্ছি এই ভেবে যে, দীর্ঘ কয়েক মাস ঐকমত্য কমিশনে রাজনৈতিক দলগুলো অক্লান্ত পরিশ্রম করার পরও ঐকমত্যে পৌঁছানো গেল না! প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, তাহলে এত শ্রম, এত মেধার ব্যবহার, কী লাভ হলো? রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কর্মসূচিভিত্তিক পার্থক্য থাকতেই পারে। কিন্তু জাতির বৃহত্তর স্বার্থে যখন একটি নির্বাচন অত্যাবশ্যকীয় হয়ে পড়েছে, তখন সেই নির্বাচন যে কোনো মূল্যে অনুষ্ঠান করতেই হবে। সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছতে না পারলে সরকারই নিজস্ব সিদ্ধান্ত দেবে। প্রশ্ন হচ্ছে, রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে না পৌঁছালে সরকার যে সিদ্ধান্ত দেবে, সেটা কি বিবদমান দুই পক্ষ একযোগে মেনে নেবে? সবচেয়ে ভালো হয়, দুই পক্ষ যদি একটা অভিন্ন জায়গায় আসতে পারে, সেক্ষেত্রে সরকারকে দায় নিতে হবে না এবং নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।
আমরা বুঝতে পারছি, সরকার এখন একটা বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে রয়েছে। সরকারকে এই বিব্রতকর অবস্থা থেকে মুক্তি দেওয়া উচিত। আমরা মনে করি, সদিচ্ছা থাকলে যে কোনো সংকট আলোচনার মাধ্যমে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। দুই বিবদমান পক্ষ সেই সদিচ্ছা দেখাবে কিনা, সেটাই প্রশ্ন।
