মুগডালের নামে বিক্রি হচ্ছে ‘মথবীজ’
সবার জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ভেজাল খাবার জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ হলেও খাবারে ভেজাল মেশানো বন্ধ হচ্ছে না। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। বিদেশ থেকে আমদানিকৃত মথবীজে পাওয়া গেছে ক্যানসার সৃষ্টিকারী উপাদান টারট্রাজিন। আমদানিকৃত মথবীজে রং মিশিয়ে মুগডাল হিসাবে সারা দেশে বাজারগুলোতে বিক্রি করা হচ্ছে। সম্প্রতি নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পরীক্ষায় ৩৩টির মধ্যে ১৮টি মথবীজের নমুনায় টারট্রাজিনের অস্তিত্বের প্রমাণ মিলেছে। বিপুল পরিমাণে এই ‘মথবীজ’ আমদানি হলেও বাজারে এ নামে কোনো পণ্যের বিক্রি হয় না। গত অর্থবছরে মুগডাল আমদানি হয়েছে ১০ হাজার ৯৬১ টন। অন্যদিকে ‘মথবীজ’ আমদানি হয়েছে ২১ হাজার ৮৯১ টন।
জানা যায়, মুদি দোকানে প্রতি কেজি মুগডাল বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে সর্বোচ্চ ১৮০ টাকা। বিক্রেতারা জানান, আমদানিকৃত আরেকটি মুগডাল (রংমিশ্রিত মথবীজ) কম দামে বিক্রি হচ্ছে। অনেক ক্রেতা জানেন না, কোনটা আসল আর কোনটা নকল মুগডাল। কম দামের এ ডাল (রংমিশ্রিত মথবীজ) দেখতে অনেক উজ্জ্বল ও আকর্ষণীয়। ফলে অনেক বিক্রেতা দুধরনের ডাল একই দামে বিক্রি করে ক্রেতার সঙ্গে প্রতারণা করছেন।
টারট্রাজিন হলো এক ধরনের কৃত্রিম হলুদ রং, যা মূলত খাবারে আকর্ষণীয় রং আনার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি খাবারে ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। প্রবিধানমালা ২০১৭ অনুযায়ী, টারট্রাজিন রং সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহারযোগ্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে। গবেষকদের মতে, টারট্রাজিনসহ কৃত্রিম রং শিশুদের শরীরে প্রবেশ করলে মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি করে। কাজেই খাদ্যপণ্যে সব ধরনের রং ব্যবহারে যাতে যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
কয়েকদিন আগে যুগান্তরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চাল, ডাল, আটা, মসলা, কলা, দুধ, মিষ্টি-সব পণ্যেই বিভিন্ন মাত্রায় ক্ষতিকর রাসায়নিকের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। বিষাক্ত কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো হচ্ছে প্রায় সব ধরনের ফল। কিছু খাবারে মেশানো হচ্ছে কাপড়ের রং। এসব খাবারই খাচ্ছে দেশের মানুষ। আরও ভয়ংকর তথ্য হচ্ছে, শিশুখাদ্য ও জীবনরক্ষাকারী ওষুধেও মেশানো হচ্ছে ভেজাল উপাদান। এমনকি মাঠপর্যায়ে কৃষিপণ্যেও দেওয়া হচ্ছে বিষাক্ত রাসায়নিক। এর প্রভাবে দেশে বাড়ছে নানা জটিল রোগ। প্রশ্ন হলো, দেশে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা যাদের দায়িত্ব তারা কী করেন। খাদ্যপণ্যে ভেজাল মিশিয়ে কেউ যাতে পার পেতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে।
