Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

গরিবের ল্যাট্রিনেও দুর্নীতি

নিরপেক্ষ তদন্ত ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হোক

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

গরিবের ল্যাট্রিনেও দুর্নীতি

বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় গ্রামীণ জনপদে পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতের লক্ষ্যে নেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্পে যে নজিরবিহীন দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার চিত্র উঠে এসেছে, তা রীতিমতো উদ্বেগের। শনিবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ, ‘মানবসম্পদ উন্নয়নে গ্রামীণ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি’ শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে গরিব মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষার মতো সংবেদনশীল উদ্যোগেও দুর্নীতির মহোৎসব চলেছে। জানা গেছে, আসছে ডিসেম্বরে প্রকল্পের পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হলেও ভৌত অগ্রগতি মাত্র ৪৭ শতাংশ, যা সরকারি অর্থের অপচয় এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থতার এক সুস্পষ্ট প্রমাণ।

সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় হলো, সামান্য যে কাজটুকু হয়েছে, সেখানেও গুণগত মান নিশ্চিত হয়নি। সরকারের নিজস্ব বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদনেই প্রকল্পের পুকুরচুরির স্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে। আইএমইডির নিবিড় পরিবীক্ষণ সমীক্ষা বলছে, প্রকল্পের নির্মিত ৮০ শতাংশ পাবলিক টয়লেট ইতোমধ্যেই অব্যবহৃত বা পরিত্যক্ত। টাইলস ভাঙা, ফিটিংস নষ্ট এবং পানিতে অস্বাভাবিক আয়রনের কারণে হাত ধোয়ার স্টেশনগুলোর ৭০ শতাংশই এখন অকেজো। এমনকি যেসব ল্যাট্রিন পরিদর্শন করা হয়েছে, দেখা গেছে সেসবেও নির্মাণের ক্ষেত্রে মানদণ্ড মানা হয়নি, যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে। এর অর্থ দাঁড়ায়, সরকারি ও বৈদেশিক সহায়তার বিশাল অঙ্কের অর্থ কার্যত পানিতে গেছে।

এই দুর্নীতির মূল হোতা হিসাবে যার নাম উঠে এসেছে, তিনি হলেন প্রকল্পটির পরিচালক (পিডি)। অভিযোগ রয়েছে ঠিকাদারদের সঙ্গে যোগসাজশ করে তিনি বিপুল পরিমাণ টাকা লোপাট করেছেন। তার বিরুদ্ধে অবৈধ উপায়ে দেশে-বিদেশে অঢেল সম্পদ গড়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। জানা গেছে, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে। তবে এই পুরো ঘটনার সবচেয়ে হতাশাজনক ও প্রশ্নবিদ্ধ দিকটি হলো, নজিরবিহীন দুর্নীতির অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও সেই একই ব্যক্তিকে সদ্য অনুমোদিত নতুন স্যানিটেশন প্রকল্পের পিডি হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এটি যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় গভীর অস্বচ্ছতা ও প্রভাবশালীর যোগসাজশের ইঙ্গিত দেয়, তা বলাই বাহুল্য।

আইএমইডি তাদের প্রতিবেদনে স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী কাজ নিশ্চিত করা এবং নিম্নমানের কাজের জন্য ঠিকাদারদের কাছ থেকে সরকারের ক্ষতিপূরণ আদায়ের সুপারিশ করেছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, যখন দুর্নীতির অভিযোগের কেন্দ্রে থাকা ব্যক্তিই উচ্চ পদে বহাল থাকেন, তখন সেই সুপারিশগুলো কি আদৌ বাস্তবায়িত হবে? গ্রামীণ স্যানিটেশনের মতো জরুরি একটি প্রকল্পে এমন দুর্নীতি স্বভাবতই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা মনে করি, অবিলম্বে ওই ব্যক্তিকে পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে দ্রুত তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত দুর্নীতির অভিযোগের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করা উচিত। একইসঙ্গে, যারা তাকে নতুন করে পিডি পদে নিয়োগ দিয়ে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়েছেন, তাদেরও জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। অন্যথায়, জনগণের অর্থ এভাবে লুটপাট হতে থাকলে দেশের উন্নয়ন ও জনকল্যাণ মুখ থুবড়ে পড়বে। সরকার এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, এটাই প্রত্যাশা।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম