মেডিকেল বর্জ্য নিয়ে উদাসীনতা
কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের বিকল্প নেই
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান পরিস্থিতি যে উদ্বেগজনক, তা বলাই বাহুল্য। রোববার যুগান্তরের প্রতিবেদনে যে চিত্র উঠে এসেছে, তা কেবল অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের চিত্র নয়, বরং এটি নাগরিক অধিকার ও কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলার প্রতিচ্ছবি। বিশেষ করে, মেডিকেল বর্জ্যরে বিপজ্জনক স্তূপ এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করেছে। ওয়ার্ডটির প্রাণকেন্দ্রে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল (মিটফোর্ড হাসপাতাল) থাকা সত্ত্বেও স্থাপনাটির ঠিক পেছনেই আবর্জনা ও মেডিকেল বর্জ্যরে ভাগাড় গড়ে ওঠা বিস্ময়কর। ব্যবহৃত সিরিঞ্জ, ব্যান্ডেজ এবং অন্যান্য সংক্রামক বর্জ্য খোলা আকাশের নিচে ফেলে রাখা হচ্ছে, যা সংক্রামক রোগ বিস্তারের আদর্শ ক্ষেত্র। সংলগ্ন এলাকায় ঘনবসতি এবং ছোট ছোট হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ভিড় থাকায় এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতা লক্ষাধিক মানুষের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলছে।
কেবল মেডিকেল বর্জ্যই নয়, কামালবাগ থেকে কমিটিগঞ্জ পর্যন্ত তিন বছর ধরে সুয়ারেজ ও ড্রেনেজ লাইনের ড্যামেজ হয়ে থাকা এবং রজনীবোস লেন, নলগোলাসহ বিভিন্ন এলাকায় খোলা ম্যানহোলের কারণে বিষাক্ত গ্যাস ছড়িয়ে পড়া প্রমাণ করে যে, এই ওয়ার্ডটি বর্জ্য ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার চরম সংকটে ভুগছে। নোংরা ও দূষিত পরিবেশে বাধ্য হয়ে জীবনযাপন করা ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা যেন এক অবহেলিত জনপদ। পুরান ঢাকার বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসাবে পরিচিত এই ওয়ার্ডে রাস্তা দখল, যানজট, অগ্নিঝুঁকি এবং নষ্ট সড়কবাতি মাদক ও ছিনতাইয়ের নিরাপদ ক্ষেত্র তৈরি করছে। তবে স্বাস্থ্যঝুঁকিই এখানে সবচেয়ে জরুরি মনোযোগ দাবি করে। উল্লেখ্য, এ চিত্র শুধু এই ওয়ার্ডেই নয়, রাজধানীর অধিকাংশ এলাকার সঙ্গেই মেলে।
এমন অবস্থায় ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষের অবিলম্বে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা কর্তব্য বলে মনে করি আমরা। বিশেষ করে, মিটফোর্ড হাসপাতালকেন্দ্রিক মেডিকেল বর্জ্যরে নিরাপদ অপসারণ ও প্রক্রিয়াকরণ নিশ্চিত করতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া আবশ্যক। কেবল সুয়ারেজ ও ড্রেনেজ লাইন সংস্কারের প্রতিশ্রুতির বদলে, দ্রুততম সময়ে দৃশ্যমান উদ্যোগ নিতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না, নাগরিকদের স্বাস্থ্য নিয়ে অবহেলা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। ওয়ার্ডটিকে বাসযোগ্য করতে হলে বর্জ্য সংকট নিরসনে কোনো বিকল্প নেই। কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।
