Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

অনাকাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক বিবাদ

মীমাংসায় পৌঁছাতেই হবে

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

অনাকাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক বিবাদ

দেশের রাজনীতি জটিল আকার ধারণ করেছে। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা থাকলেও চলমান রাজনীতি এমন এক অবস্থায় রয়েছে যে, নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠানের প্রশ্নে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। বড় সমস্যাটা দেখা দিয়েছে জুলাই সনদের ওপর গণভোটের সময় নিয়ে। দীর্ঘ ৮-৯ মাস আলাপ-আলোচনার পর ঐকমত্য কমিশনে সংস্কারের যেসব সুপারিশ জমা হয়েছিল, সেগুলোর ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে জুলাই সনদ। এই সনদে বিএনপিসহ রাজনীতির বড় স্টেকহোল্ডাররা স্বাক্ষরও করেছে। কিন্তু গোল বেঁধেছে এই সনদের ওপর কখন গণভোট অনুষ্ঠান করা যাবে, তা নিয়ে। বিএনপি নির্বাচনের দিন একইসঙ্গে গণভোট অনুষ্ঠানের পক্ষপাতী। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী বলছে, নির্বাচনের আগেই গণভোট হতে হবে। এনসিপি অবশ্য বলছে, গণভোট আগেই হওয়া দরকার, তবে একইদিনে হলেও তাদের আপত্তি নেই। অবস্থাদৃষ্টে মূল দ্বন্দ্বটা বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যেই আবর্তিত। জামায়াতে ইসলামী তাদের প্রস্তাবের পক্ষে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। তাদের দাবি মানা না হলে তারা বড় আন্দোলনে যাবে বলেও আগাম বার্তা দিয়ে রেখেছে। দ্বন্দ্বের সুরাহা না হলে আগামীকাল অর্থাৎ ১১ নভেম্বর তারা রাস্তায় নামবেন বলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছেন। ওদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল ৭ দিনের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো যদি ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারে, তাহলে সরকার নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়ে চলমান দ্বন্দ্বের নিরসন করবে।

আমরা স্মরণ করতে পারি, গত স্বৈরাচারী সরকারকে হটানের জন্য কী পরিমাণ রক্ত দিতে হয়েছে! ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার পতনের মধ্য দিয়ে যে বিশাল বিজয় অর্জিত হয়েছিল, সেই স্মৃতি আমাদের মনে এখনো জ্বলজ্বলে। বিজয়ের ওই মুহূর্তে সবারই প্রত্যাশা ছিল, এবার একটা চমৎকার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে দেশ এগিয়ে যাবে। কিন্তু আমরা দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করে যাচ্ছি, জুলাইয়ের চেতনাকে পুরোপুরি ধারণ করা হচ্ছে না। রাজনৈতিক দলগুলো বিবাদে লিপ্ত হয়েছে এবং ৫ আগস্ট-পূর্ববর্তী যে অভাবনীয় ঐক্য গড়ে উঠেছিল, সেই ঐক্যে ফাটল ধরছে। ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্যে ফাটল ধরা মানে তা ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থানের সম্ভাবনাকেই নির্দেশ করে। ফলে জুলাইয়ের স্পিরিটকে ধারণ করার কোনো বিকল্প নেই। দ্বিতীয়ত, গত রেজিমে যেহেতু পরপর ৩টি সরকার গঠিত হয়েছিল অগণতান্ত্রিক পন্থায়, তাই আমাদের প্রত্যাশা রয়েছে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকার দেশ পরিচালনা করবে।

এ লক্ষ্যে যাবতীয় কার্যক্রমও গ্রহণ করা হয়েছে। এই সম্পাদকীয় লেখার সময় পর্যন্ত এই সময়সীমা শেষ হতে চলেছে। বোঝাই যাচ্ছে, বিএনপি ও জামায়াত যদি আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারে এবং এ কারণে সরকারের সিদ্ধান্ত কোনো এক পক্ষে অগ্রহণযোগ্য হয়ে পড়ে, তাহলে একটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হবে এবং এই অস্বস্তি সংঘাত পর্যন্ত গড়াতে পারে। রাজনৈতিক দুই বিবদমান পক্ষের মধ্যে সমঝোতা না হওয়ায় একটা প্রশ্নবোধক চিহ্ন দেখা দিয়েছে। আমরা আশা করব, গণভোটের সময় প্রশ্নে রাজনীতির সব পক্ষ ঐকমত্যে ফিরে আসবে এবং নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তা না হলে দেশ গভীর সংকটে নিপতিত হবে এবং এর সুযোগে অপশক্তি মাথাচাড়া দেওয়ার সুযোগ পাবে। এ অবস্থা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। অতঃপর আমরা সুখবর দেখার অপেক্ষা থাকলাম।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম