কনসেশন চুক্তি
স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জের পানগাঁও অভ্যন্তরীণ কনটেইনার টার্মিনাল (পিআইটিসি) ২২ বছরের জন্য পরিচালনার দায়িত্ব সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘মেডলগ’কে দেওয়া এবং চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল ৩০ বছরের জন্য পরিচালনার দায়িত্ব ডেনমার্কভিত্তিক ‘এপিএম টার্মিনালস’কে দেওয়ার উদ্দেশ্যে যে কনসেশন চুক্তিগুলো স্বাক্ষরিত হয়েছে, তা নিয়ে বিভিন্ন মহল উদ্বেগ প্রকাশ করছে। বিশেষ করে অন্তর্বর্তী সরকারের সময় অস্বাভাবিক দ্রুততার সঙ্গে, শর্তাদি গোপন রেখে এবং অংশীজনদের সঙ্গে পর্যাপ্ত আলোচনা ব্যতিরেকে এমন দীর্ঘমেয়াদি ও কৌশলগত চুক্তি স্বাক্ষর জনমনে নানা সন্দেহের জন্ম দিয়েছে।
অবশ্য নৌপরিবহণ উপদেষ্টা ড. এম সাখাওয়াত হোসেন এই চুক্তিকে লজিস্টিক ও বাণিজ্য অবকাঠামো উন্নয়নের নতুন অধ্যায় আখ্যা দিয়েছেন। তবে চুক্তির অস্বচ্ছ প্রক্রিয়া এবং গোপন শর্ত সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্নের উদ্রেক করেছে এ জন্য যে, প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র ছাড়া জিটুজি পদ্ধতিতে এটির আয় বণ্টনের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদে দেশের স্বার্থ আদৌ সুরক্ষিত থাকবে কিনা। কারণ কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে এর পক্ষে কোনো পরিষ্কার ব্যাখ্যা বা চুক্তির আর্থিক ও কারিগরি বিশ্লেষণ জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়নি। ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে বন্দরের মাশুলও এক লাফে ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে, যা আমদানি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও রপ্তানি সক্ষমতা হ্রাসের কারণ হতে পারে।
সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, চট্টগ্রাম বন্দরের মতো কৌশলগত স্থাপনার নিয়ন্ত্রণ বিদেশি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার উদ্যোগ। ভুলে গেলে চলবে না, চট্টগ্রাম বন্দর শুধু অর্থনৈতিক শক্তির প্রাণকেন্দ্রই নয়, এটি দেশের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার সঙ্গেও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। জাতীয় সম্পদ ও কৌশলগত স্থাপনা পরিচালনার নামে কোনো বিদেশি আধিপত্য, বিশেষ সুবিধা বা গোপন চুক্তি জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে সম্পূর্ণ অসংগত ও অগ্রহণযোগ্য। সরকারের উচিত অবিলম্বে চুক্তির শর্তাদি জনসম্মুখে প্রকাশ করা, বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া এবং বন্দরের বিষয়ে গৃহীত প্রতিটি সিদ্ধান্তকে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা ও রাষ্ট্রীয় কঠোর নিয়ন্ত্রণের অধীনে রাখা। সম্প্রতি হাইকোর্টের নির্দেশের কারণে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) আপাতত বিদেশিদের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে না বলে জানা গেছে। আমরা মনে করি, দেশের ভবিষ্যৎ ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা রক্ষায় এই চুক্তিগুলোর পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে, জনগণের ত্যাগ ও শ্রমে গড়ে ওঠা কোনো জাতীয় সম্পদ রক্ষার ক্ষেত্রে শিথিলতা বা অদূরদর্শিতার পরিচয় গ্রহণযোগ্য নয়।
