বিমানের ককপিটে মৃত্যুঝুঁকি
দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের আকাশপথে নিরাপত্তার যে গুরুতর লঙ্ঘন ঘটছে, তা কেবল উদ্বেগজনক নয়, পুরোদস্তুর আতঙ্কের। যুগান্তরের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসা তথ্য অনুযায়ী, ক্লান্তি ও শারীরিক বিপর্যয় নিয়েই বিমান ক্রুদের রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী উড়োজাহাজ চালাতে হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা (আইকাও) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন এভিয়েশন সেফটি এজেন্সি (ইএএসএ)-এর সব নীতিমালা লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত ফ্লাইট ডিউটি টাইম লিমিটেশন (এফডিটিএল) আরোপ করার ফলে ককপিটে সৃষ্টি হয়েছে ‘ফ্লাইং ডেঞ্জার’। গত তিন বছরে অন্তত ছয়জন পাইলটের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া এবং মাঝ আকাশে পাইলট অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা প্রমাণ করে যে, অতিরিক্ত উড্ডয়নজনিত ক্লান্তি আর শারীরিক চাপ নিরাপত্তার রেড জোন অতিক্রম করেছে। উদ্বেগজনক বিষয় হচ্ছে, বছরে যেখানে সর্বোচ্চ ১০০০ ঘণ্টা উড্ডয়নের সীমা নির্ধারিত, সেখানে পাইলটদের ১২০০ থেকে ১৪০০ ঘণ্টা পর্যন্ত উড়তে বাধ্য করা হচ্ছে, যা আইনি সীমার তুলনায় ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি।
অভিযোগ আছে, এই গুরুতর পরিস্থিতির মূল কারণ হলো বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) খামখেয়ালি ও কিছু কর্মকর্তার নীতিবহির্ভূত সুবিধা দেওয়ার প্রবণতা। বিমানের অনুরোধে বেবিচকের প্রভাবশালী কর্মকর্তারা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা প্রটোকল উপেক্ষা করে অতিরিক্ত উড্ডয়নের জন্য বিশেষ ছাড় দিচ্ছেন, এমনকি বিমান পরিচালনার সনদ নবায়নের সময় ইচ্ছাকৃতভাবে ফ্লাইট ডিউটি টাইম লঙ্ঘনের বিষয়টি অডিটে উল্লেখ করা হয় না-এটি সিভিল এভিয়েশন নীতিমালা অনুযায়ী একটি গুরুতর অপরাধ ও প্রতারণা।
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, শ্রীলংকা, পাকিস্তান বা তুরস্কের মতো দেশগুলো যেখানে কঠোরভাবে উড্ডয়ন সময়সীমা মেনে চলছে, সেখানে বাংলাদেশের পতাকাবাহী বিমানের এমন অনিয়ম মেনে নেওয়া সত্যিই কঠিন। এমন অনিয়মের কারণে কেবল পাইলটদের জীবনই শঙ্কার মুখে পড়ছে না, যে কোনো মুহূর্তে যাত্রীবাহী বিমানের বড় দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিচ্ছে। এভিয়েশন বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসাবে বেবিচক যদি দুর্নীতির বিনিময়ে নিরাপত্তা মানদণ্ড উপেক্ষা করে, তবে আন্তর্জাতিক মহলে দেশের সুনাম ক্ষুণ্ন হবে এবং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সেফটি কনসার্ন জারি হতে পারে। আমরা মনে করি, সরকারের উচিত অবিলম্বে বেবিচকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা মানদণ্ড কঠোরভাবে প্রয়োগ করা। পাইলট ও কেবিন ক্রুদের জীবন এবং বিপুলসংখ্যক যাত্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এফডিটিএল নীতিমালার লঙ্ঘন বন্ধ করে সুস্থ কর্মপরিবেশ ফিরিয়ে আনার বিকল্প নেই। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে সরকার দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, এটাই প্রত্যাশা।
