Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

অর্ধেকের বেশি ভুয়া মামলা!

নিরপরাধদের রেহাই দিন

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

অর্ধেকের বেশি ভুয়া মামলা!

ছবি: সংগৃহীত

জুলাই আন্দোলনের সফল পরিণতির পর দেশে অনেক মামলা হয়েছে। এগুলোর অধিকাংশই হত্যা অথবা হত্যাচেষ্টা মামলা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, আদালতে দায়ের করা মামলার অর্ধেকের বেশি, ৫৬ শতাংশ মামলার সারবত্তা খুঁজে পাওয়া যায়নি। একটা উদাহরণ দিলে বিষয়টা পরিষ্কার হবে। জুলাই আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর মিরপুর ইসিবি চত্বরে হামলায় গুরুতর আহত দাবি করে আদালতে হত্যাচেষ্টা মামলা করেছিলেন জনৈক আব্দুল আজিজ। এই মামলায় আসামি করা হয়েছিল আড়াইশ ব্যক্তিকে। কিন্তু তদন্তে নেমে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সাক্ষীদের তো খুঁজে পায়ইনি, এমনকি বাদীরও অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। অত্যাশ্চর্য, এই মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছিল, তাদের অনেকেই কখনো ঢাকায়ই আসেননি।

শুধু এ মামলাই নয়, এমন অনেক মামলায় বাদী ও সাক্ষী ভুয়া প্রমাণিত হয়েছে এবং তদন্ত শেষে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ফাইনাল রিপোর্ট দেওয়া হচ্ছে। কয়েকজন বাদী নিজেরাই মামলা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। আবার তদন্ত শেষে যে ৪৪ শতাংশ মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে, সেসবের বেশির ভাগেরই আসামি ভুয়া। বোঝাই যাচ্ছে, ব্যক্তি বা গোষ্ঠীস্বার্থের বশীভূত হয়েই ভুয়া মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছিল। ভালো খবর হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষ ভুয়া মামলাগুলোর ব্যাপারে ইতিবাচক অবস্থান নিয়েছে। পিবিআই’র প্রধান বলেছেন, তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা রয়েছে যাতে সাধারণ ও নিরীহ কেউ হয়রানির শিকার না হন। তিনি যোগ করেছেন, কিছু মামলা প্রত্যাহার হয়েছে, তদন্তে যা পাওয়া যাবে, সেভাবেই সিদ্ধান্ত হবে। তিনি আরও বলেছেন, কে কোন রাজনৈতিক দলের, সেটা মামলার তদন্তের বিষয় নয়। অপরাধের সম্পৃক্ততা না থাকলে কেউ কেন আসামি হবে? পিবিআই প্রধানের এ বক্তব্যকে আমরা সাধুবাদ জানাই।

জুলাই আন্দোলনে বিজয়ের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে যারা ভুয়া মামলা করেছেন, তারা জুলাইয়ের স্পিরিটকে অবমূল্যায়ন করেছেন। ভুয়া মামলাগুলো হয়েছে প্রধানত দুই কারণে: ব্যক্তি শত্রুতা ও চাঁদাবাজি। সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী মনজিল মোরসেদ যুগান্তরকে বলেছেন, ভুয়া মামলাগুলো হয়েছে চাঁদাবাজির লক্ষ্যে। বলার অপেক্ষা রাখে না, জুলাই আন্দোলন চলাকালে গত সরকার চরম নিষ্ঠুরতার সঙ্গে আন্দোলন দমাতে চেয়েছে। এ নিষ্ঠুরতায় নিহত হয়েছেন জাতিসংঘের রিপোর্ট অনুযায়ী ১৫০০ নারী-পুরুষ-শিশু। আহত হয়েছেন হাজার হাজার। এসব অপরাধের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, বিচারকার্যও চলমান। কিন্তু কিছু স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি ফায়দা লুটতে ভুয়া মামলা দায়ের করেছেন। আমরা মনে করি, এটাও এক ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধ। নিরপরাধ ব্যক্তিকে শায়েস্তা করতে ভুয়া মামলা দায়ের করা নিকৃষ্ট মানসিকতার পরিচায়ক। আমরা আশা করব, দায়েরকৃত সব মামলার যথাযথ তদন্তসাপেক্ষে প্রকৃত মামলাগুলোর বিচারকার্য এগিয়ে যাবে এবং সব ভুয়া মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য এর কোনো বিকল্প নেই। ভুয়া মামলা দায়ের করেছিলেন যারা, আমরা তাদেরও শাস্তি দাবি করি।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম