রাজধানীতে মা-মেয়ে খুন
গৃহকর্মীদের ডেটাবেস তৈরি জরুরি
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার একটি ফ্ল্যাটবাড়িতে মা-মেয়ের নৃশংস খুন হওয়ার ঘটনায় বাসাবাড়ির নিরাপত্তা নিয়ে জনমনে উদ্বেগ বেড়েছে। সিসিটিভির ফুটেজ পর্যালোচনা করে পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, বাসার গৃহকর্মী এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। সে হত্যাকাণ্ডের পর মেয়ের স্কুল ড্রেস পরে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। নিয়ে যায় মূল্যবান জিনিসপত্র। পুলিশের এ ধারণা সত্য হলে বলতে হয়, এটি কেবল একটি অপরাধের ঘটনাই নয়, নগরবাসীর সামাজিক নিরাপত্তা ও বিশ্বাসের জায়গাটি কত ঠুনকো হয়ে পড়েছে, তাও আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। একটি পরিবারের সবচেয়ে সুরক্ষিত আশ্রয় হলো বাসস্থান। আর গৃহকর্মী সেখানে অবস্থান করে পরিবারের একজন সদস্যের মতোই। সেই গৃহকর্মীর হাতে মা ও মেয়ে খুন হলে নিরাপত্তার জায়গা কোথায় থাকে!
এই নির্মম ঘটনায় শহুরে মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য বেশকিছু মৌলিক প্রশ্ন উঠে আসে। প্রথমত, গৃহকর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে নিরাপত্তাব্যবস্থা কোথায়? বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ব্যক্তিগত সুপারিশের ভিত্তিতে যাচাই-বাছাই ছাড়াই কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়। পুলিশ ভেরিফিকেশন এবং স্থানীয় প্রশাসনের কাছে তথ্য নিবন্ধনের মতো ন্যূনতম আইনি প্রক্রিয়াও মানা হয় না, যার ফলে অপরাধ ঘটিয়ে সহজেই পার পেয়ে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। সরকারের উচিত গৃহকর্মীদের একটি বাধ্যতামূলক কেন্দ্রীয় ডেটাবেস তৈরির উদ্যোগ নেওয়া, যেখানে প্রত্যেক কর্মীর পূর্ণাঙ্গ রেকর্ড থাকবে। দ্বিতীয়ত, এ ঘটনা গৃহকর্মীদের প্রতি আমাদের সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি এবং আচরণের দিকটিও সামনে এনেছে। যদিও কোনো বঞ্চনাই এমন নির্মম অপরাধকে বৈধতা দেয় না, তবুও এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, অনেক গৃহকর্মীই ন্যায্য মজুরি, নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা এবং মানবিক ব্যবহারের অভাবে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকে। মালিক ও কর্মীর মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখার জন্য পারস্পরিক মর্যাদা ও মানবিকতা নিশ্চিত করা জরুরি।
সর্বোপরি এ হত্যাকাণ্ড আমাদের সমাজের নৈতিক অবক্ষয়কে স্পষ্ট করে। দ্রুত অর্থনৈতিক পরিবর্তন ও সামাজিক অস্থিরতা মানুষের মধ্যে ধৈর্য ও সহনশীলতা কমিয়ে দিচ্ছে, যার ফলস্বরূপ ব্যক্তিগত ক্ষোভ বা বিরোধ ভয়াবহ সহিংসতায় রূপ নিচ্ছে। এই কঠিন বাস্তবতায় প্রশাসনকে দ্রুততম সময়ে অপরাধীকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। তবে শুধু আইনি পদক্ষেপই যথেষ্ট নয়। সমাজের প্রতিটি স্তরে নিরাপত্তা-সচেতনতা বৃদ্ধি, মানবিকতা ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধা ফিরিয়ে আনা আজ সময়ের দাবি। এ ব্যাপারে প্রতিটি পরিবারকে সতর্ক ও সচেতন হতে হবে।
