তিতাসের লাইনে মারাত্মক ঝুঁকি
গ্যাসের অবৈধ সংযোগের বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
অবৈধ গ্যাসলাইনের কারণে তিতাস গ্যাস কোম্পানি ও গ্রাহকদের বড় ধরনের ক্ষতি হচ্ছে। সংকটের কারণে বৈধ গ্রাহকরাই নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস পাচ্ছেন না। শিল্পসহ বাসাবাড়িতেও গ্যাসের জন্য গ্রাহকদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এদিকে খোঁড়াখুঁড়ি, পুরোনো লাইন এবং মেরামতের অভাবে শুধু রাজধানীতে প্রতিমাসে তিতাস গ্যাস বিতরণ লাইনে ছিদ্র হয় ৪০০-এর বেশি। এছাড়া অবৈধ লাইন নিতে ঢাকায় ছিদ্র আছে কয়েক হাজার। ঢাকার বাইরেও একই চিত্র। খোদ তিতাস গ্যাস কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) সাইদুল হাসান যুগান্তরকে বলেন, তিতাসের বিতরণ লাইনের অবস্থা ভালো নেই। যে কোনো সময় বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা আছে। ঝুঁকিতে আছেন রাজধানীবাসী। পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করলেও কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে আরও কঠোর হচ্ছে না কেন? কয়েকদিন আগে আগারগাঁও ও নারায়ণগঞ্জে পৃথক দুটি গ্যাস বিস্ফোরণের ঘটনায় ১২ জন দগ্ধ হয়েছেন। পাইপের ছিদ্র থেকে জমে থাকা গ্যাসে আগুন লাগার ফল এ ঘটনা বলে এলাকাবাসী জানান।
জানা যায়, গত এক বছরে তিতাসের ছিদ্র হওয়া লাইন থেকে কমপক্ষে আগুনের ২০টি ঘটনা ঘটেছে। তিতাসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রতিমাসে ঢাকায় তিতাসের লাইনে ছিদ্র থেকে গ্যাসের লিক এবং আগুন লাগার অভিযোগ আছে ৪০০টির বেশি। তিতাসের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার অভিযোগ-ওয়াসা এবং সিটি করপোরেশনের অদক্ষ ও সমন্বয়হীন কাজের ফল এসব ছিদ্র। যেহেতু সমস্যাটি অনেকদিনের পুরোনো এবং এটি একটি গুরুতর সমস্যা, সেহেতু সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে সমন্বিতভাবে দায়িত্ব পালন করে সমস্যার সমাধান করতে হবে।
গত বছরের জুলাই থেকে এ বছরের জুন পর্যন্ত তিতাস তার এলাকায় ৩৭২টি অভিযান পরিচালনা করেছে। সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে ১ লাখ ৬ হাজার অবৈধ সংযোগ। এ তথ্য থেকেই স্পষ্ট, সমস্যাটি অত্যন্ত ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে এবং এটাও অনুমান কারা যায়, এ অবৈধ কাজের সঙ্গে স্থানীয় অনেক প্রভাবশালীও যুক্ত রয়েছে। কাজেই এসব তথ্য বিবেচনায় নিয়েই কর্তৃপক্ষকে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। কর্তৃপক্ষকে সবার সামনে স্পষ্ট করতে হবে যে, অবৈধ সংযোগের কারণে সৃষ্ট দুর্ঘটনায় সংশ্লিষ্ট এলাকায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।
তিতাসের অনেক এলাকার পাইপ বহু বছরের পুরোনো। জরাজীর্ণ সেসব পাইপ দ্রুত পরিবর্তন করতে হবে। তা না হলে সেসব পাইপের কারণেও যে কোনো সময় ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। যেহেতু জরাজীর্ণ পাইপের ছিদ্র দিয়ে গ্যাস বের হয়ে জমা হলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের আশঙ্কা রয়েছে, সেহেতু কর্তৃপক্ষকে এ সমস্যা মোকাবিলায় সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিতে হবে।
বিগত সরকারের আমলে স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহযোগিতায় অবৈধ গ্যাস সংযোগের মাত্রা অস্বাভাবিক হারে বেড়েছিল। কাজেই এ অবৈধ কাজে সহযোগিতা করে স্থানীয় কোনো প্রভাবশালী যাতে পার পেতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। স্থানীয় জনগণের উচিত এ অবৈধ কাজে জড়িতদের চিহ্নিত করতে কর্তৃপক্ষকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সহযোগিতা করা। ভূমিকম্পসহ নানা কারণে গ্যাসের জারাজীর্ণ লাইনের ছিদ্র দিয়ে গ্যাস বের হয়ে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে। এসব পরিস্থিতি মোকাবিলায় কর্তৃপক্ষকে সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিতে হবে।
