কর-ভ্যাট আদায়ে নতুন উদ্যোগ
সময়োপযোগী পদক্ষেপটি সফল হোক
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
দেশের রাজস্ব ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফেরাতে এবং কর ফাঁকি রোধে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সম্প্রতি যে নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, তা নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক ও যুগান্তকারী পদক্ষেপ। বুধবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-আয়কর ও ভ্যাট প্রদানের জন্য সম্প্রতি পৃথক করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) এবং ব্যবসায় নিবন্ধন নম্বরের (বিআইএন) পরিবর্তে একটি একক বা ‘ইউনিক নম্বর’ চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আধুনিক ও স্বচ্ছ রাজস্ব প্রশাসন গড়ার পথে এটি একটি বড় মাইলফলক হতে পারে।
দীর্ঘদিন ধরে আমাদের দেশে কোম্পানি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য আয়কর ও ভ্যাটের ভিন্ন ভিন্ন নিবন্ধন ব্যবস্থা চালু রয়েছে। এর ফলে একই প্রতিষ্ঠানের দুই জায়গায় দেওয়া তথ্যে গরমিল থাকার সুযোগ তৈরি হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, ভ্যাট রিটার্নে যে বিক্রির তথ্য দেওয়া হচ্ছে, আয়কর ফাইলে তার প্রতিফলন নেই। দুই দপ্তরের মধ্যে সমন্বয়হীনতার এই সুযোগ নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে টিআইএন ও বিআইএন একীভূত করে ‘ইউনিক নম্বর’ চালু করা হলে তা কেবল রাজস্ব আদায়েই গতি আনবে না, বরং ব্যবসার পরিবেশেও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে। একটি মাত্র নম্বরের মাধ্যমে যখন কোনো প্রতিষ্ঠানের আমদানি-রপ্তানি, আয়কর ও ভ্যাটের যাবতীয় তথ্য ‘রিয়েল টাইমে’ যাচাই করা সম্ভব হবে, তখন কর ফাঁকির সুযোগ স্বাভাবিকভাবেই সংকুচিত হয়ে আসবে। তবে এ উদ্যোগের সফল বাস্তবায়ন সহজসাধ্য নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, কেবল নিয়ম পরিবর্তনই যথেষ্ট নয়, এর জন্য প্রয়োজন এনবিআরের পূর্ণাঙ্গ অটোমেশন। বর্তমানে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে রাজস্ব আদায়ের যে প্রচলন রয়েছে, তা পুরোপুরি বন্ধ না করলে কাঙ্ক্ষিত সুফল পাওয়া যাবে না। প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে আয়কর ও কাস্টমস বিভাগের মধ্যে কার্যকর তথ্য আদান-প্রদান ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি সিটি করপোরেশন, ওয়াসা বা বিদ্যুৎ বিতরণকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে এনবিআরের ডেটাবেজের সংযোগ স্থাপন করা গেলে করদাতার প্রকৃত আয় ও ব্যয়ের চিত্র পাওয়া সহজ হবে।
আমরা মনে করি, একক নিবন্ধন ব্যবস্থা চালু করা হলে তা যেমন বড় করদাতাদের সময় ও খরচ বাঁচাবে, তেমনি সরকারের কোষাগারে রাজস্ব প্রবাহ বাড়াতেও সহায়তা করবে। কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসন এবং আধুনিক প্রযুক্তিগত অবকাঠামো। আমরা আশা করব, গঠিত ১৯ সদস্যের কমিটি দ্রুততম সময়ে একটি কার্যকর কৌশল প্রণয়ন করবে এবং এ পরিকল্পনার সুষ্ঠু বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে নতুন গতি সঞ্চার করবে।
