Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা

বহু কাঙ্ক্ষিত গণতান্ত্রিক যাত্রা সফল হোক

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা

ফাইল ছবি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে দেশ এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছে। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ঘোষিত এই তফসিল শুধু একটি নতুন সরকার গঠনের প্রক্রিয়া নয়, বরং একই দিনে রাষ্ট্র সংস্কার প্রশ্নে গণভোট এবং জনপ্রতিনিধি বাছাইয়ের সাধারণ ভোটের ব্যবস্থা থাকায় এটি পরিণত হবে এক অভূতপূর্ব জাতীয় ইভেন্টে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নির্বাচনকে স্বাগত জানিয়ে প্রস্তুতি শুরু করেছে। গণসংযোগ, মিটিং-মিছিল ক্রমেই দৃশ্যমান হচ্ছে। এবারের নির্বাচনের সবচেয়ে বড় বিশেষত্ব হলো, গণতন্ত্রের ইতিহাসে সম্ভবত এই প্রথম একইসঙ্গে দুটি ভিন্ন ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে চলেছে দেশের জনগণ। প্রথমত, তারা ভোট দেবেন তাদের পছন্দের জনপ্রতিনিধিকে, যিনি আগামী পাঁচ বছরের জন্য তাদের প্রতিনিধিত্ব করবেন। দ্বিতীয়ত, তারা রাষ্ট্র সংস্কারের মতো মৌলিক প্রশ্নে তাদের মতামত জানাবেন গণভোটের মাধ্যমে। এই গণভোটের ফলাফলের মাধ্যমে দেশের সাংবিধানিক কাঠামো, প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং অর্থনৈতিক নীতির মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন আসতে পারে। সেটি হলে রাষ্ট্র পরিচালনার নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন আসবে।

আমরা দেখছি, তফসিল ঘোষণার পর রাজনৈতিক দলগুলো মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে, যা স্বাভাবিক। যে দলগুলো সংস্কারের পক্ষে সোচ্চার ছিল, তারা এই গণভোটকে তাদের আন্দোলনের চূড়ান্ত সাফল্য হিসাবেই দেখছে। আবার যে দলগুলো স্থিতাবস্থায় বিশ্বাসী অথবা প্রস্তাবিত সংস্কারের বিরোধিতা করছে, তাদের কাছে সাধারণ নির্বাচনের পাশাপাশি গণভোট একটি চ্যালেঞ্জ। তাদের এখন একইসঙ্গে দুটি ফ্রন্টে ভোটারদের মনজয় করতে হবে : একদিকে প্রার্থীর যোগ্যতা প্রমাণ, অন্যদিকে সংস্কার প্রস্তাবের ভালো-মন্দ নিয়ে জনমত তৈরি করা। এ কারণে নির্বাচনি প্রচারণার ধরন এবার সম্পূর্ণ ভিন্ন হবে, যেখানে শুধু স্থানীয় ইস্যু নয়, জাতীয় সংস্কারের প্রশ্নটিও মুখ্য হয়ে উঠবে।

বলা বাহুল্য, তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে নির্বাচন নিয়ে জনমনে যে সংশয় ছিল, তার অনেকটা অবসান ঘটল। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও নির্বাচনি জোয়ার বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করি আমরা। তবে এ প্রেক্ষাপটে নির্বাচন কমিশন এবং নাগরিক সমাজের দায়িত্বও বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। কমিশনকে নিশ্চিত করতে হবে, ভোটাররা যাতে স্বচ্ছতা ও নির্ভুলতার সঙ্গে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের সহিংসতাও কাম্য নয়। যদিও গতকাল নির্বাচনি প্রচারণার সময় ঢাকা-৮ আসনের প্রার্থী ওসমান হাদির ওপর হামলা আমাদের বিচলিত করেছে। এরপরও একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড জনগণের সামনে ইসি তৈরি করতে সক্ষম হবে বলেই প্রত্যাশা আমাদের। ভুলে গেলে চলবে না, এই নির্বাচন যেন কেবল ক্ষমতার পালাবদল না হয়, বরং একটি শক্তিশালী, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে জনগণের সিলমোহর হয়ে ওঠে।

সন্দেহ নেই, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেশের গণতন্ত্রের পথে এক সাহসী পদক্ষেপ। এটি একদিকে যেমন জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করছে, তেমনি জনগণের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে একটি গুরুদায়িত্ব। ভোটারদের বুঝতে হবে, তারা শুধু তাদের নেতা নির্বাচন করছেন না, তারা আগামী দিনের রাষ্ট্রের গতিপথও নির্ধারণ করছেন। এই ঐতিহাসিক সুযোগ কাজে লাগিয়ে সচেতনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা প্রত্যেক ভোটারের নৈতিক কর্তব্য।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম