Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

বিদ্যুৎ খাতের গলার কাঁটা

ক্যাপাসিটি চার্জের ফাঁদে পিডিবির রক্তক্ষরণ

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বিদ্যুৎ খাতের গলার কাঁটা

ফাইল ছবি

দেশের বিদ্যুৎ খাত এখন এক ভয়াবহ বৈপরীত্যের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। একদিকে সাধারণ মানুষ ও শিল্পকারখানা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের জন্য হাহাকার করছে, অন্যদিকে অলস বসে থাকা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে বিপুল অঙ্কের অর্থ পরিশোধ করতে গিয়ে ফতুর হচ্ছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। যুগান্তরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদিত তিনটি বড় গ্যাসভিত্তিক বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র (আইপিপি)-সামিট মেঘনাঘাট-২, ইউনিক এবং জেরা-বিগত দেড় বছরে কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেই শুধু ‘ক্যাপাসিটি চার্জ’ বাবদ ৩ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বিগত সরকারের আমলে বিশেষ আইনে বিনা টেন্ডারে এবং যথাযথ কারিগরি মূল্যায়ন ছাড়াই এ কেন্দ্রগুলোকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। আশ্চর্যের বিষয় হলো, যখন দেশে গ্যাসের তীব্র সংকট চলছিল এবং উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সঞ্চালনের জন্য পর্যাপ্ত লাইনও ছিল না, তখনো কেন এমন মেগা প্রকল্পগুলো তড়িঘড়ি করে অনুমোদন দেওয়া হলো? উত্তরটি স্পষ্ট-দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা নয়, বরং বিশেষ ব্যবসায়িক গোষ্ঠী ও সুবিধাভোগীদের তুষ্ট করাই ছিল বিগত প্রশাসনের মূল লক্ষ্য।

পিডিবির ওপর এ ঋণের বোঝা এখন অসহনীয় হয়ে উঠেছে। চুক্তি অনুযায়ী, জেরা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি কোনো বিদ্যুৎ না দিলেও মাসে ১০৫ কোটি টাকা এবং সামিট ও ইউনিক প্রতি মাসে ৮৬ কোটি টাকা করে ক্যাপাসিটি চার্জ পায়। জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের মতে, গ্যাস সংকটের কারণে সরকারি মালিকানাধীন ইজিসিবির কেন্দ্রগুলো বন্ধ রেখে এ প্রভাবশালী বেসরকারি কেন্দ্রগুলোকে বসিয়ে বিল দেওয়া হচ্ছে। এটি সরাসরি রাষ্ট্রীয় কোষাগারে এক ধরনের ডাকাতি।

আরেকটি ভয়াবহ তথ্য হলো, গ্যাসের বিকল্প হিসাবে এসব কেন্দ্র ডিজেল দিয়ে চালানো হলে প্রতি ইউনিটে খরচ পড়বে প্রায় ৪০ টাকা, যা গ্যাস দিয়ে উৎপাদনের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি। অর্থাৎ, যেভাবেই চালানো হোক না কেন, চূড়ান্ত বোঝাটি শেষ পর্যন্ত সাধারণ গ্রাহক ও সরকারি ভর্তুকির ওপরই পড়বে।

বিদ্যুৎ খাতের এ বিশৃঙ্খলা ও ‘ক্যাপাসিটি চার্জ’ নামক গলার কাঁটা থেকে মুক্তি পেতে অন্তর্বর্তী সরকারকে কঠোর ও সাহসী পদক্ষেপ নিতে হবে। শুধু ৪ হাজার কোটি টাকা বাড়তি বরাদ্দ চেয়ে সমস্যার সমাধান হবে না; বরং দুর্নীতির শেকড় উপড়ে ফেলে একটি স্বচ্ছ ও সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন নীতি প্রণয়ন করাই এখন সময়ের দাবি। অন্যথায়, বিদ্যুৎ খাতের এ রক্তক্ষরণ পুরো অর্থনীতিকেই পঙ্গু করে দেবে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম