Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

সংকটে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক

সংযম ও দ্বিপাক্ষিক সদিচ্ছা কাম্য

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সংকটে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক

ফাইল ছবি

বাংলাদেশ ও ভারতের দীর্ঘদিনের কূটনৈতিক সম্পর্কে বর্তমানে এক অস্বস্তিকর টানাপোড়েন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক দুটি ইস্যু-পিলখানা হত্যাকাণ্ডে ভারতের কথিত সংশ্লিষ্টতার বিতর্ক এবং ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়কের ওপর হামলাকারী আসামির ভারতে পালিয়ে যাওয়া-দুই দেশের মধ্যকার বিদ্যমান আস্থায় বড় ধরনের চিড় ধরিয়েছে। বলা বাহুল্য, এই সংকট নিরসনে দুই পক্ষকে কেবল কৌশলী হলে চলবে না, বরং স্বচ্ছতা ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে।

যে কোনো স্বাধীন দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য সীমান্ত সুরক্ষা এবং অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করা অপরিহার্য। ইনকিলাব মঞ্চের নেতার ওপর প্রাণঘাতী হামলার পর অভিযুক্ত আসামির সীমান্ত পেরিয়ে প্রতিবেশী দেশে আশ্রয় নেওয়ার ঘটনাটি গভীর উদ্বেগের। এটি কেবল আইনশৃঙ্খলার অবনতি নয়, বরং সীমান্ত নিরাপত্তার বড় ধরনের দুর্বলতাকেও প্রকট করে তোলে। সন্দেহ নেই, যদি কোনো অপরাধী অপরাধ করে অনায়াসেই সীমান্ত পার হতে পারে, তবে তা ভবিষ্যতে এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে আরও উৎসাহিত করবে। এ অবস্থায় ঢাকা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে যে উদ্বেগ জানানো হয়েছে, তার গুরুত্ব অনুধাবন করা দিল্লির জন্য জরুরি বলে মনে করি আমরা। সেক্ষেত্রে অপরাধীকে ফেরত পাঠানো এবং সীমান্ত সুরক্ষায় পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধিই বর্তমানে অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।

অন্যদিকে, ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার এবং দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে পালটা তলব করার ঘটনাটি নির্দেশ করে যে, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উত্তাপ বর্তমানে কেবল আলোচনার টেবিলে সীমাবদ্ধ নেই, তা প্রকাশ্যে এসেছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং আগামী নির্বাচন নিয়ে দিল্লির অবস্থান ও মন্তব্য অনেক সময় ঢাকার কাছে ‘উপদেশ’ বা ‘নসিহত’ হিসাবে প্রতীয়মান হচ্ছে, যা একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের আত্মমর্যাদায় আঘাত হানতে পারে। বিশেষ করে বিদায়ি সরকারের প্রধানের ভারতে অবস্থান এবং সেখান থেকে রাজনৈতিক উসকানিমূলক বক্তব্যের বিষয়টি ঢাকার জন্য একটি বড় অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আদালতের দণ্ডপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি যদি প্রতিবেশী দেশে বসে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করেন, তবে দুই দেশের প্রত্যর্পণ চুক্তির কার্যকর প্রয়োগের দাবি তোলা যৌক্তিক। ভুলে গেলে চলবে না, একটি স্থিতিশীল প্রতিবেশী সম্পর্ক দুই দেশের উন্নয়নের জন্যই অপরিহার্য। তবে এ সম্পর্ক হতে হবে পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং সমমর্যাদার ভিত্তিতে। বাংলাদেশে আগামী দিনে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির যে চেষ্টা চলছে, তাতে বহিরাগত হস্তক্ষেপের অবকাশ না রাখাই শ্রেয়। একইসঙ্গে, বাংলাদেশে ভারতবিরোধী কোনো উসকানিমূলক বক্তব্য বা পরিস্থিতি যাতে অনভিপ্রেত মোড় না নেয়, সেদিকেও সজাগ দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন।

বর্তমান পরিস্থিতিতে আবেগপ্রসূত সিদ্ধান্তের চেয়ে কৌশলগত সংযম বেশি জরুরি। কোনো একপক্ষের একগুঁয়েমি বা ভুল বার্তা দুই দেশের ঐতিহাসিক সম্পর্কে দীর্ঘমেয়াদি তিক্ততা তৈরি করতে পারে। তাই সংকট কাটাতে হলে একে অপরকে দোষারোপের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে সংবেদনশীল বিষয়গুলো নিয়ে অর্থবহ সংলাপ প্রয়োজন। সীমান্ত সুরক্ষা জোরদার করা এবং অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করতে দিল্লির পক্ষ থেকে দৃশ্যমান সদিচ্ছাই পারে বিদ্যমান এ কূটনৈতিক টানাপোড়েন নিরসন করতে। সরকার এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম