বিপন্ন আমিষ
সিন্ডিকেটের থাবায় গরিবের পাঙাশ-তেলাপিয়া
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বাংলাদেশের সাধারণ ও শ্রমজীবী মানুষের প্রোটিন বা আমিষের শেষ আশ্রয়স্থল পাঙাশ ও তেলাপিয়া মাছ। গরুর গোশতের আকাশচুম্বী দামের কারণে তা অনেক আগেই সাধারণের খাবার তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। এখন সিন্ডিকেট আর মধ্যস্বত্বভোগীদের কারসাজিতে সেই পাঙাশ-তেলাপিয়াও সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। যুগান্তরের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এক ভয়াবহ চিত্র : চাষি যে পাঙাশ ১৫০ টাকায় বিক্রি করছেন, হাতবদল হয়ে তা ভোক্তার পাতে উঠতে উঠতে ২১০ টাকায় গিয়ে ঠেকছে । অর্থাৎ, ঘাম ঝরানো চাষি কেজিতে ১০ টাকা লাভ করতে হিমশিম খেলেও মধ্যস্বত্বভোগীরা একদিনের ব্যবধানে কেজিতে ৪০-৫০ টাকা লুটে নিচ্ছে। বাজারের এই অস্থিরতা কেবল মাছের দাম বাড়ার গল্প নয়, বরং এটি সাধারণ মানুষের পুষ্টিহীনতার এক অশনিসংকেত। যখন একটি মাঝারি আকারের পাঙাশ কিনতে ৩২০ টাকা খরচ হয়, তখন নিম্নবিত্তের মানুষের জন্য আমিষ গ্রহণ বিলাসিতায় পরিণত হয় । শুধু পাঙাশ নয়, তেলাপিয়া ২৬০ টাকা এবং রুই মাছ ৩৫০ টাকার উপরে বিক্রি হওয়ায় ভোক্তারা এখন পরিমাণে কম কিনতে বাধ্য হচ্ছেন অথবা বাজার থেকে খালি হাতে ফিরছেন। এই পরিস্থিতি দেশের ক্রমবর্ধমান গরিব ও নিম্নবিত্ত জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য ও কর্মক্ষমতার ওপর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে যেখানে ৩ কোটি ৬০ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে এবং অনেকেরই অবস্থান দারিদ্র্যসীমার ঠিক উপরে, সেখানে খাবারের এই অগ্নিমূল্য তাদের নতুন করে ভয়াবহ গরিবির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং কর্মসংস্থান কমে যাওয়া এই সংকটের অন্যতম কারণ। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের পক্ষ থেকে কেবল ‘চেষ্টা করছি’ বলা যথেষ্ট নয়। বাজার নিয়ন্ত্রণে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে আরও কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে। মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমাতে উৎপাদক থেকে ভোক্তা পর্যন্ত সরাসরি সরবরাহের ব্যবস্থা গড়ে তোলা জরুরি। একইসঙ্গে মাছের খাবারের দাম নিয়ন্ত্রণ এবং সিন্ডিকেট ভাঙতে কঠোর আইনি পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। যদি এখনই এই অরাজকতা বন্ধ করা না যায়, তবে দেশের এক বিশাল জনগোষ্ঠী মারাত্মক পুষ্টিহীনতার শিকার হবে, যা একটি সুস্থ জাতি গঠনের পথে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
