দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য
ড. মোহাম্মদ আখেরুজ্জামান
প্রকাশ: ১৮ আগস্ট ২০২০, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
অপরাধ হচ্ছে এমন এক ধরনের কাজ, যা রাষ্ট্রের আইনের চোখে নিষিদ্ধ। আর যে মানুষটি ওই অপরাধমূলক কাজ করে তাকে আমরা অপরাধী বলি। অপরাধ কখনও ভালো হতে পারে না; কিন্তু অপরাধী সংশোধনের মাধ্যমে ভালো হতে পারে।
অপরাধ ছোট, বড়, মাঝারি, ম্যানুয়াল, ডিজিটাল বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। অপরাধের ধরন, প্রভাব ও বিস্তার বুঝে অপরাধীকে বিভিন্ন ধরনের শাস্তি দেয়া হয়। স্থান-কাল-পাত্র ভেদে অপরাধের শাস্তি বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে।
তবে অপরাধী সম্পর্কে আমরা যাই বলি না কেন, সে যে এক ধরনের বুদ্ধিমান (চতুর) এতে কোনো ভুল নেই। আমরা স্কুলে ছাত্র থাকাকালে ভাবসম্প্রসারণ করেছি- ‘দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য’। মানুষের মেধা ও বুদ্ধি যদি সঠিক পথে কাজে না লাগে, তাহলে সেই বুদ্ধি ও মেধা সমাজে আরও বেশি বিপদ সৃষ্টি করে।
গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে অনেক বড় ধরনের অপরাধ সৃষ্টিকারীকে আমরা দেখতে পেয়েছি। সাম্প্রতিক সময়ে বহুল আলোচিত ও অপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত কয়েকজন ব্যক্তি হলেন- পাপিয়া, সাহেদ, ডাক্তার সাবরিনা, আরিফ চৌধুরী, ওসি প্রদীপ প্রমুখ।
এরা কেউ কিন্তু কম মেধাবী ব্যক্তি নন। ভাবা যায়, পাপিয়া কিংবা সাহেদের মতো মানুষের কিনা দেশের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে জানাশোনা ছিল! কিন্তু কিভাবে তা সম্ভব? শুধুই রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে? তাদের এই রাজনৈতিক প্রভাব কিভাবে এলো?
তারা নিজেদের বুদ্ধি এবং সমাজের অন্য অপরাধীদের সহযোগিতায় আজকের এই আসনে এসেছেন। তবে হ্যাঁ, আপনারা এটাকে বুদ্ধি না বলে কুবুদ্ধিও বলতে পারেন। তাই আমাদের সমাজ থেকে অপরাধীকে নয়, অপরাধ পরিচালনা করে এমন ব্যক্তি কিংবা সংগঠনকে খুঁজে খুঁজে নিষ্ক্রিয় করতে পারলে তবেই অপরাধ নির্মূল হবে।
অপরাধী ভাই-বোনদের বলছি, আপনার যে মেধা ও বুদ্ধি আছে তা দিয়ে দেশে আপনার যথেষ্ট সুনাম অর্জনের সুযোগ আছে। কেন আপনি আপনার নিজের শান্তিকে দূরে ঠেলে দিচ্ছেন? টাকার জন্য? সন্তান বা পরিবারের সুখের জন্য? কেন আপনাকে অপরাধ করতে হবে? সমাজের জন্য কাজ করার যথেষ্ট বুদ্ধি, শক্তি, জনবল, নেটওয়ার্ক সবই আপনার আছে। আপনি তাহলে কেন দেশের আইনের বরখেলাপ করছেন? ভেবে দেখেন, একসময় অপরাধী হিসেবে ধরা পড়ে মিডিয়ার সামনে মাথা নিচু করে বসে থাকতে হবে আপনাকে।
অথচ আপনি আপনার মেধা ও বুদ্ধি দিয়ে হতে পারতেন পরিবার, সমাজ, এমনকি দেশের একজন হিরো। তাতে মানুষ আপনাকে সম্মান করে সারা জীবন মনে রাখত। দিন শেষে হতে পারতেন পরিবারের প্রিয় ব্যক্তি, সমাজের প্রিয়জন, দেশের প্রিয় মুখ। অথচ আপনার সামান্য ভুলের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির স্বীকার হবেন আপনি নিজে। দেশের মানুষের চোখে হবেন অপরাধী, মিডিয়ার লোক খুঁজে বেড়াবে আপনার ছোট-বড় সব অপকর্ম।
যে লোকটি আপনার টাকায় সংসার চালাচ্ছে, সেও আপনাকে দূরে ঠেলে দেবে। যাদের সুখের জন্য আপনি এত কিছু করছেন সেই সন্তান বা পরিবারের লোকেরাও আপনার অপরাধের জন্য সমাজে নানাভাবে নিগৃহীত হবে এবং একসময় তারা আপনাকে ঘৃণা করতে থাকবে। পরিশেষে আপনার কর্মফল হিসেবে আপনাকে জেল, হাজত ভোগ করতে হবে।
অপরাধ করে কেউ কোনোদিন সুখী হতে পেরেছে এমন উদাহরণ পৃথিবীতে নেই। তাই ক্ষণিকের সুখকে ভোগ না করে বুদ্ধিকে শুদ্ধ পথে চালিয়ে আত্মতৃপ্তি নিয়ে জীবন কাটান। এতে নিজে ভালো থাকবেন, অন্যরাও ভালো থাকবে।
ড. মোহাম্মদ আখেরুজ্জামান : প্রাবন্ধিক, টোকিও, জাপান
akharuzzaman@yahoo.com
