ওএমএস কর্মসূচির খাদ্যপণ্য
সংঘবদ্ধ লুটেরাদের শক্তহাতে দমন করুন
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২০, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
যুগান্তরের অনুসন্ধানে রাজধানীতে ওএমএস (ওপেন মার্কেট সেল) কর্মসূচির চাল ও আটা নিয়ে ভয়াবহ দুর্নীতির তথ্য উদ্ঘাটিত হয়েছে, যা অনভিপ্রেত।
জানা গেছে, দিনের বেলা ঢাকা শহরের বিভিন্ন রেশনিং পয়েন্ট থেকে ছোট ও মাঝারি ধরনের ট্রাকে করে ওএমএস কর্মসূচির চাল-আটা আনা হয় নির্ধারিত কিছু গোডাউনে। সেখানে দ্রুত বস্তা বদলের কাজ সম্পন্নের পর রাতের অন্ধকারে এসব খাদ্যপণ্য বড় ট্রাকে করে বিক্রির উদ্দেশ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হয়ে থাকে।
উদ্বেগজনক হল, ওএমএস কর্মসূচির চাল ও আটা সঠিক নিয়মে বিক্রি হচ্ছে কিনা- তা দেখভাল করার দায়িত্ব যাদের ওপর ন্যস্ত, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের যোগসাজশেই ‘বস্তা বদল’ হয়ে রাতারাতি সরকারি এসব খাদ্যপণ্য চলে যাচ্ছে বিভিন্ন আড়তদারের ঘরে।
অভিযোগ রয়েছে, খাদ্য অধিদফতরের আওতায় রাজধানীর ১২০টি পয়েন্টে গরিবের ‘হক’ চাল-আটা নিয়ে দুর্নীতি ও লুটপাটের সঙ্গে অসাধু খাদ্য কর্মকর্তাদের একটি সিন্ডিকেট জড়িত।
এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রেশনিং এলাকার এআরও (সহকারী রেশনিং কর্মকর্তা), তদারক এবং গুদাম সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরও যোগসাজশ রয়েছে। দুঃখজনক হল, সরকারি খাদ্যপণ্যের এ চোরাকারবারে সম্পৃক্ত সবার নাম-ঠিকানা থানা-পুলিশের জানা থাকলেও মাসোহারার ভিত্তিতে তাদের সঙ্গে ‘বন্দোবস্ত’ করা হয়েছে।
ফলে তারা চুপ থাকার কৌশল বেছে নিয়েছে। সমাজের অসহায় ও দুর্বলদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সহায়তা ও সহযোগিতা প্রদানের পাশাপাশি দুর্বৃত্ত ও পরসম্পদ হরণকারীদের দমন করা পুলিশের অন্যতম কাজ হলেও চোরচক্রের সঙ্গে তারা যোগ দিয়েছে, যা মেনে নেয়া কষ্টকর।
সরকার প্রদত্ত যে চাল-আটার হকদার সমাজের দরিদ্র শ্রেণির লোকজন, তা তাদের ঘরে না পৌঁছে কেন চোরচক্রের গুদামে ‘আত্মগোপন’ করছে এবং পরে তা উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে, তা অতি পরিষ্কার। কারণ, এক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্তরাই চোরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। দেশে নানা কিসিমের চোর আছে। তবে ওএমএস কর্মসূচির চাল-আটা অবৈধভাবে বিক্রির সঙ্গে যুক্ত চোরেরা এতটাই নির্লজ্জ ও বিবেকহীন যে, হতদরিদ্রদের প্রাপ্য খাদ্যপণ্য আত্মসাতে তারা বিন্দুমাত্র কুণ্ঠাবোধ করছে না।
ওএমএস একটি মানবিক সহায়তা কর্মসূচি, যার মাধ্যমে সরকার কমমূল্যে দেশের দরিদ্র পরিবারগুলোর মধ্যে খাদ্যপণ্য বিতরণ করে থাকে। এ কর্মসূচির মাধ্যমে মূলত দরিদ্র ও অতিদরিদ্রদের স্বাভাবিক জীবনধারা সমুন্নত রাখার চেষ্টা করা হয়। উদ্দেশ্যটি যে মহৎ, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
তবে এ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি হওয়ায় এর মূল উদ্দেশ্যই ব্যাহত হচ্ছে। যাদের জন্য এ কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে, সমাজের সেই দরিদ্র শ্রেণির লোকজন যদি ওএমএসের সুফল থেকে বঞ্চিত হয়, তবে এর পেছনে কাঁড়ি কাঁড়ি সরকারি অর্থ ভর্তুকি দিয়ে লাভ কী?
বর্তমানে বাজারে চালের মূল্যবৃদ্ধি, বিশেষ করে মোটা চালের দর বৃদ্ধিতে দেশের দরিদ্র মানুষ অশেষ দুর্ভোগের সম্মুখীন হয়েছে। এ অবস্থায় ওএমএস কর্মসূচি ঘিরে সংঘবদ্ধ লুটেরাদের শক্তহাতে দমন করা প্রয়োজন। যুগান্তরের অনুসন্ধানে অনিয়ম-লুটপাটের যেসব তথ্য উদ্ঘাটন হয়েছে, তা আমলে নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
তা না হলে যত ভালো পরিকল্পনা বা উদ্যোগই নেয়া হোক না কেন, তা কেবল মুষ্টিমেয় কিছু দুর্বৃত্তের লোভ চরিতার্থের চারণভূমিরূপে গণ্য হবে।
ওএমএস কর্মসূচির খাদ্যপণ্য নিয়ে অনিয়ম-লুটপাট বন্ধ করতে হলে সর্বাগ্রে প্রশাসন ও রাজনীতির মধ্যে সমন্বয় করা প্রয়োজন; প্রয়োজন দুর্নীতিমুক্ত পরিবেশ, সুনীতি ও সুশাসন। এ কাজটি সুচারুভাবে সম্পন্ন করা গেলে দরিদ্র জনগোষ্ঠী তাদের প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হবে না বলেই আমাদের বিশ্বাস।
