Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

তরুণ ভাবনায় পরিবেশ

Icon

ফারজানা ইয়াসমিন

প্রকাশ: ০৪ জুন ২০২১, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

তরুণ ভাবনায় পরিবেশ

আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবস। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ২৭তম অধিবেশনে ৫ জুনকে জাতিসংঘ পরিবেশ দিবস হিসাবে ঘোষণা দেয়। দিবসটি র‌্যারি, সভা, আলোচনা অনুষ্ঠান, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ইত্যাদি নানামুখী কার্যক্রমের মাধ্যমে পালিত হয়। তবে পরিবেশ দিবস কেবল দিবস পালনেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। সারা বছর পরিবেশ নিয়ে আমাদের কোনোরকম আগ্রহ থাকে না। আমরা ভুলে যাই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করার কথা। গত ৮ এপ্রিল ব্লুমবার্গ নিউজে প্রকাশিত হয় বাংলাদেশর জন্য একটি উদ্বেগজনক খবর। সেখানে বলা হয়েছে, স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বাংলাদেশের কোনো একটি নির্দিষ্ট অংশ থেকে বিশাল আকারে মিথেন গ্যাস নিঃসরণ হচ্ছে বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। স্টেফেন জারমেন বলেছেন, গত ১৭ এপ্রিল তাদের হুগো স্যাটেলাইট দেখিয়েছে যে, এ মুহূর্তে ঢাকার মাতুয়াইল ময়লার ভাগার থেকে প্রতি ঘণ্টায় ৪০০০ কেজি মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হয়ে বায়ুমণ্ডলে মিশে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেছেন, মাতুয়াইল মিথেন গ্যাস নিঃসরণের বড় একটি উৎস, কিন্তু একমাত্র উৎস নয়। আরও কী কী উৎস রয়েছে তা খুঁজে বের করার জন্য তিনি গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। অথচ মিথেন গ্যাসকে আমরা কাজে লাগাতে পারি। বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপন করে স্বল্প খরচে খুব সহজেই ডাস্টবিনের ময়লা-আবর্জনা এবং জৈব বর্জ্য দ্বারা বায়োগ্যাস, বিদ্যুৎ ও জৈব সার উৎপাদন করা সম্ভব। তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই বায়োটেকনোলজি ও ইটিপি প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার করতে হবে।

বরিশাল, পটুয়াখালীসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের নদী ও খালের পানির নমুনা পরীক্ষায় কলেরার জীবাণু পাওয়া যাচ্ছে বলে জনিয়েছে IEDCR. এসব খবর দেখেও আমাদের নীতিনির্ধারকদের একটুও টনক নড়ছে না। আগামী প্রজন্মের জন্য দূষণমুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য এখন থেকেই আমাদের সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। বাজারে গেলেই সবার হাতে পলিথিন ব্যাগ দেখতে পাই। এর চেয়ে সহজলভ্য মনে হয় আর কিছু নেই এখন। কিন্তু আমরা ভুলে গেছি, ২০০২ সালের জানুয়ারিতে পলিথিন উৎপাদন, পরিবহণ, মজুত ও ব্যবহারকে আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আইন আইনের মতো আছে, এর প্রয়োগ হয় না যথাযথভাবে। বুড়িগঙ্গা নদীর পনিদূষণ নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। বছরের পর বছর এই নদীর পানি দূষিত হয়ে আসছে। সাতক্ষীরা ও বরগুনা জেলাসহ দেশের দক্ষিণ উপকূলীয় জেলাগুলোয় লবণাক্ততা বৃদ্ধির কারণে পুকুরের মতো মিঠা পানির উৎস শুকিয়ে যাচ্ছে এবং টিউবওয়েলের পানির স্তর দিন দিন নিচে নেমে যাচ্ছে। অথচ এই লবণাক্ত পানি নিষ্কাশনের জন্য এক মিটার গভীর ড্রেন ও সাব ড্রেন তেরি করে তা রোধ করা সম্ভব। অন্যান্য দেশের মতো আমাদেরও উচিত ইটিপি প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষিতে পানি সংকটের সমাধান, কম মূল্যে পানির পাম্প, প্রত্যন্ত অঞ্চলে পরিষ্কার পানি সরবরাহ, লবণাক্তহীন পানি সরবরাহ, অপচয়কৃত পানি এবং জিরো লিকুইড ডিসচার্জ করা; সেই সঙ্গে বায়ুদূষণ রোধে সাসটেইনেবল ট্রান্সপোর্টেশন ব্যবহার করা। ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের বাজেটের আকার ছিল ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ১৭.৯ শতাংশ। কিন্তু এ বাজেটে গ্রিন বাজেটের স্থান হয়নি, যেখানে বিশ্বের অন্যান্য দেশে গ্রিন বাজেট খাতে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়। ব্লু ইকোনমি সম্পর্কে আমাদের কমবেশি ধারণা রয়েছে; কিন্তু গ্রিন ইকোনমি সম্পর্কে আমরা কতজন পরিচিত? আমরা এই গ্রিন ইকোনমি থেকে প্রচুর অর্থ আয় করতে পারি, সেই সঙ্গে পরিবেশও ফিরে পেতে পারে তার ভারসাম্য।

আমরা যা করি, তার সরাসরি প্রভাব পড়ে পরিবেশের ওপর। তাই আমরা কী করছি তা নিয়ে যেন একটু চিন্তা করি। পরিবেশটা আমাদের, তাই পরিবেশ রক্ষা করাটাও আমাদের একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য। আসুন নিজে সচেতন হই, অপরকে সচেতন হতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিই।

ফারজানা ইয়াসমিন : প্রাবন্ধিক

 

পরিবেশ

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম