বিমানে হচ্ছেটা কী? পাইলট নির্বাচনে হেলাফেলার সুযোগ নেই
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
এক সপ্তাহের মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পাইলটসংক্রান্ত তিনটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে যুগান্তরে।
সর্বশেষ বৃহস্পতিবার প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পাইলটের অদক্ষতা, অবহেলা বা খামখেয়ালিপনার কারণে বিমানের একটি উড়োজাহাজের দুটি ইঞ্জিনের বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ জ্বলে গেছে। এর ফলে আর্থিক ক্ষতি দাঁড়াতে পারে ৬০ কোটি টাকা। শুধু তাই নয়, মেরামতের জন্য উড়োজাহাজটি এক থেকে তিন মাস ফ্লাইট করতে পারবে না। এতে ক্ষতির অঙ্ক ১০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। ড্যাস-৮কিউ ৪০০ মডেলের এ উড়োজাহাজটি সম্পূর্ণ নতুন। এটি কানাডা থেকে ক্রয় করে এক বছরেরও কম সময় আগে ঢাকায় আনা হয়।
জানা গেছে, গত ১ ফেব্রুয়ারি উড়োজাহাজটি সিলেট থেকে ঢাকায় আসার সময় এ ঘটনা ঘটে। ঝুঁকির বিচারে ঘটনাটি ভয়াবহ। কারণ এতে আকাশেই ইঞ্জিন জ্বলে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। সেক্ষেত্রে অবস্থা কী দাঁড়াত, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ঘটনা এখানেই শেষ নয়। নিয়ম অনুযায়ী উড়োজাহাজ ও ইঞ্জিনে ছোটখাটো কোনো ঘটনা-দুর্ঘটনা ঘটলে তা পাইলটদের লগবইয়ে লিপিবদ্ধ করতে হয়। অথচ উপরে উল্লেখিত ভয়াবহ ঘটনার পরও ক্যাপ্টেন তা লিপিবদ্ধ করেননি।
উল্লেখ্য, ওই ফ্লাইটের পাইলট ছিলেন ক্যাপ্টেন রুবাইয়েত এবং কো-পাইলট ক্যাপ্টেন জামান। এতবড় একটি ঘটনার পরও তারা নাকি বহাল তবিয়তেই আছেন এবং এখনো ফ্লাইট পরিচালনা করছেন। বিষয়টি ঝুঁকিপূর্ণ।
এর আগে গত ৮ ফেব্রুয়ারি যুগান্তরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিমানের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ও অত্যাধুনিক উড়োজাহাজ ড্রিমলাইনার (বি-৭৮৭) চালানোর ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে এমন পাইলটকে, যার এ উড়োজাহাজ চালানোর অভিজ্ঞতা নেই। এ ধরনের সিদ্ধান্তকে চরম ঝুঁকিপূর্ণ ও আত্মঘাতী বলে মনে করছেন এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা।
এরও আগে গত ৩ ফেব্রুয়ারি যুগান্তরে প্রকাশিত অপর এক প্রতিবেদনে প্রকাশ পেয়েছে, বিমানের বোয়িং ৭৭৭-৩০০ উড়োজাহাজ বহরে এমন ৯ পাইলটের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নিশ্চিত করতে তৎপর হয়ে উঠেছে একটি সিন্ডিকেট, যারা এ উড়োজাহাজ চালনায় অনভিজ্ঞ। তাদের কেউ কেউ বারবার পরীক্ষা দিয়েও বিদেশি এয়ারলাইন্সে ক্যাপ্টেন হতে পারেননি। শুধু তাই নয়, ওই ৯ পাইলট ২০০৫ সালে বিমানের চাকরির শর্ত ভেঙে একযোগে বিদেশি এয়ারলাইন্সে যোগ দিয়েছিলেন। ওই অনভিজ্ঞ পাইলটদের মৌখিক পরীক্ষায় পাশ করিয়ে দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে উল্লেখিত সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে।
এসব ঘটনায় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, বিমানে হচ্ছেটা কী? পাইলট নিয়োগ বা নির্বাচনের মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে এ হেলাফেলা কেন? যে কোনো যানবাহনের চালক নিয়োগের ক্ষেত্রে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। তবে উড়োজাহাজের পাইলট নিয়োগের ক্ষেত্রে তা সবচেয়ে বেশি জরুরি। কারণ উড়োজাহাজ দুর্ঘটনা ঘটলে সব যাত্রীরই প্রাণহানির আশঙ্কা থাকে। তাই দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা সম্পর্কে শতভাগ নিশ্চিত হয়েই পাইলট নিয়োগ দিতে হয়।
আমরা আশা করব, এসব তথ্য প্রকাশের পর সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে এ বিষয়ে দৃষ্টি দেওয়া হবে। প্রকৃত দক্ষ এবং যিনি যে উড়োজাহাজ চালনায় অভিজ্ঞ, কেবল তাকে দিয়েই সেই উড়োজাহাজ চালানোর ব্যবস্থা নেবে বিমান কর্তৃপক্ষ। কারও অবহেলা ও খামখেয়ালিপনা উড়োজাহাজের ক্ষতির কারণ হলে তার বিরুদ্ধে বিমানের বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে হবে। এসব ক্ষেত্রে কোনো সিন্ডিকেটের তৎপরতা বরদাশত করার সুযোগ নেই। কারণ এর সঙ্গে যাত্রীদের নিরাপত্তা এবং রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী সংস্থার ভাবমূর্তির প্রশ্ন জড়িত।
