Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

চিহ্নিতদের পাসপোর্ট প্রদান

সরকারের এ অবস্থানের ব্যাখ্যা জরুরি

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

চিহ্নিতদের পাসপোর্ট প্রদান

ফ্যাসিস্টদের দোসরদের কি পুনর্বাসন করা হচ্ছে? এমন প্রশ্নের উদয় এ কারণে যে, সম্প্রতি চিহ্নিত বেশ কয়েকজন আমলা, বিচারপতি, সেনা কর্মকর্তার পাসপোর্টের বিষয়ে সরকার পক্ষ থেকে গ্রিন সিগন্যাল দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অনাপত্তিপত্র (এনওসি) পাওয়া এদের অনেকের নামে জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার ওপর দমন-পীড়ন ও হত্যা মামলাই শুধু নয়, কয়েকজনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দায়েরকৃত অভিযোগের তদন্তও চলছে। এছাড়া একাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বড় অঙ্কের আর্থিক দুর্নীতির অনুসন্ধান চালাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। জানা গেছে, এনওসি পাওয়ার পরপরই সংশ্লিষ্টদের বেশ কয়েকজন দ্রুত পাসপোর্ট হাতে পেয়েছেন। ইতোমধ্যে তাদের কেউ কেউ দেশ ছেড়েছেন বলেও ধারণা করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগস্টে সরকার পতনের পর সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের পাসপোর্ট বাতিল করা হয়। এছাড়া বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, বিচারপতি ও উপাচার্যের পাসপোর্ট নবায়নে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। বিশেষ করে কূটনৈতিক মর্যাদার লাল পাসপোর্ট রূপান্তরে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে অজ্ঞাত কারণে হঠাৎ করে আগের সেই কঠোর অবস্থান থেকে সরে এসে সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তিপত্রের ভিত্তিতে মোট ৩৯ জনের পাসপোর্টের বিষয়ে অনাপত্তিপত্র দেওয়া হয়েছে। ফলে সংশ্লিষ্টদের পাসপোর্ট পেতে আর কোনো বাধা নেই। হঠাৎ কেন তাদের বিষয়ে সরকার নমনীয় হয়েছে, সে ব্যাখ্যা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ই দিতে পারবে বলে জানিয়েছে পাসপোর্ট অধিদপ্তর।

এ সিদ্ধান্ত যে অন্তর্বর্তী সরকারের পূর্ববর্তী কঠোর অবস্থানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, তা বলাই বাহুল্য। বিশেষ করে এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে যখন দুর্নীতি, জুলাই হত্যা মামলাসহ বিভিন্ন গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, হঠাৎ করেই কঠোর অবস্থান থেকে সরে এসে নির্দিষ্ট কিছু বিতর্কিত ব্যক্তিকে পাসপোর্ট দেওয়ার অনুমতি প্রদানের অর্থ কী? কারণ, যে তালিকা যুগান্তরের হাতে এসেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে ‘ফ্যাসিস্টের দোসর’ হিসাবে চিহ্নিত এদের কারও কারও বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তদন্ত চলছে। দুর্নীতি দমন কমিশনও এদের বিরুদ্ধে বড় অঙ্কের আর্থিক দুর্নীতির অনুসন্ধান চালাচ্ছে। এমন ব্যক্তিদের দেশত্যাগের পথ যদি সরকারই খুলে দেয়, তবে তা মেনে নেওয়া সত্যিই কঠিন। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে তাদের বিদেশে পালানোর সুযোগ দেওয়া হলে তা হবে ন্যায়বিচারের সঙ্গে প্রহসন। এতে শুধু আইনের শাসনের প্রতি অবজ্ঞাই করা হবে না, বরং জনগণের কাছে সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিয়েও সন্দেহ তৈরি হবে।

আমরা মনে করি, পাসপোর্ট ইস্যুর ক্ষেত্রে যদি কোনো মানবিক কারণও থাকে, তবে সরকারের উচিত সর্বোচ্চ স্বচ্ছতার সঙ্গে তা প্রকাশ করা। কারণ, এ ধরনের পদক্ষেপ সরকারের ভাবমূর্তিকেই শুধু ক্ষুণ্ন করবে না, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে সরকারের ঘোষিত যুদ্ধকেও দুর্বল করে দেবে। স্বাভাবিকভাবেই সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা আসা জরুরি। এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে কী কারণ কাজ করেছে, সরকার অবিলম্বে তা জনগণের সামনে স্পষ্ট করবে, এটাই প্রত্যাশা।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম