Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

এনবিআরে চাকরিজীবীদের আচরণ নীতিমালার খসড়া

অনুমোদন ছাড়া উপহার নিলে শাস্তি

সাদ্দাম হোসেন ইমরান

সাদ্দাম হোসেন ইমরান

প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

অনুমোদন ছাড়া উপহার নিলে শাস্তি

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সব শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারী ব্যক্তিগত বা আর্থিক স্বার্থের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত বা কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারবে না। এমনকি যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া সেবাগ্রহীতার কাছ থেকে উপহার বা স্মারক বা সম্মাননা বা আর্থিক মূল্যমান সম্পন্ন বস্তু গ্রহণ করা যাবে না। এছাড়া নিজ পরিবারের সদস্যদের জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে লাভজনক হতে পারে-এমন কোনো আর্থিক, বাণিজ্যিক বা অন্য স্বার্থসম্পর্কিত কাজে যুক্ত হওয়া বা সুবিধা গ্রহণ করা যাবে না। এ ধরনের কার্যক্রমে যুক্ত হলে তা সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা অনুযায়ী অসদাচরণ হিসেবে গণ্য করা হবে।

সূত্র জানায়, রাজস্ব প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে আয়কর গোয়েন্দার কমিশনার আবদুর রকিবকে আহ্বায়ক করে নৈতিকতা এবং পেশাগত আচরণ নীতিমালা প্রণয়নে ৬ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি করা হয়। কমিটির অন্য সসদ্যরা হলেন- কর কমিশনার এমএম জিল্লুর রহমান, কাস্টমসের অতিরিক্ত কমিশনার মুহা: মাহবুবুর রহমান, প্রথম সচিব (কর আপিল ও অব্যাহতি) মনিরুজ্জামান, দ্বিতীয় সচিব উত্তম বিশ্বাস ও মুনিয়া সিরাত। গত সপ্তাহে এ কমিটি এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে নীতিমালার খসড়া জমা দিয়েছে।

এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান যুগান্তরকে বলেন, নীতিমালার খসড়া হয়েছে। এটাকে আরও পরিশীলিত করা হবে। মূলত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শে এই নীতিমালার খসড়া করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে মতামত পাওয়ার পর চূড়ান্ত আকারে তা জারি করা হবে।

এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নৈতিকতা এবং পেশাগত আচরণ নীতিমালা-২০২৫ এর খসড়ায় এসব কথা বলা আছে। নীতিমালা প্রেক্ষাপট তুলে ধরে খসড়ায় বলা হয়েছে, সেবাপ্রদানকারী হিসেবে এনবিআরে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব কার্যক্রমে সেবার মনোবৃত্তি, সততা, নৈতিকতা, দক্ষতা, আর্থিক স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে সেবা গ্রহণকারীর স্বার্থ সুরক্ষার পাশাপাশি দেশের বৃহত্তর স্বার্থ সংরক্ষণ করা আবশ্যক। তাছাড়া সুষ্ঠু রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে এনবিআরে কর্মরতদের ওপর ন্যস্ত দৈনন্দিন কার্যক্রম সম্পাদনে প্রচলিত আইন ও বিধি-বিধানের পাশাপাশি একটি সাধারণ বিধান বা মানদণ্ড অনুসরণ করা প্রয়োজন আছে।

খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, জনগণের ন্যায়সঙ্গত অধিকার ও সেবাগ্রহীতাদের সেবাপ্রাপ্তির বিষয় সর্বাধিক গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিয়ে সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, ন্যায্যতা ও জবাবদিহিতা বজায় রাখতে হবে। সেবাপ্রার্থী যেন বৈষম্য, হয়রানি বা অবহেলার শিকার না হয়, তা নিশ্চিতের জন্য সেবাপ্রদানের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মান বজায় রেখে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও সুবিধা প্রদান করতে হবে। নিজ কার্যালয় বা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক, ভৌত কিংবা অন্য সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি, অপচয় বা অপব্যবহার সংঘটিত হয়- এমন কাজ করা যাবে না। দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্র ব্যতীত অন্য কোনো উদ্দেশ্যে কিংবা ব্যক্তিগত স্বার্থে ক্ষমতা, পদমর্যাদা বা দায়িত্বের অপপ্রয়োগ করা যাবে না।

নারী সহকর্মী বা সেবাগ্রহীতাদের প্রতি আচরণ কেমন হবে, তাও নীতিমালায় বলা আছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়, নারী সহকর্মী বা সেবাগ্রহীতাদের প্রতি সর্বদা সহমর্মিতা, সম্মান, মর্যাদাপূর্ণ আচরণ প্রদর্শন করতে হবে। তাদের প্রতি কোনো প্রকাশ অশালীন, অবহেলাজনক, অবজ্ঞাপূর্ণ ও বৈষম্যমূলক আচরণ করা যাবে না। এ ধরনের আচরণ কঠোরভাবে পরিহার করতে হবে। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে সরকারের জারিকৃত নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে।

নীতিমালায় বলা আছে, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগদানের সময় নৈতিকতা ও পেশাগত আচরণ নীতিমালা পরিপালনের অঙ্গীকারস্বরূপ এনবিআরের নির্ধারিত ফরমে অঙ্গীকারনামা জমা দিতে হবে। একইভাবে পুরোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও নির্ধারিত ফরমে অঙ্গীকারনামা জমা দিতে হবে। নীতিমালা বাস্তবায়নে প্রয়োজনে এনবিআর বিশেষ সেল গঠন করতে পারে। নীতিমালার বিধান লংঘন সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা অনুযায়ী অসদাচরণ হিসাবে গণ্য করা হবে।

সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালায় অসদাচরণের অপরাধে দুই ধরনের দণ্ডের বিধান আছে। প্রথমত, লঘুদণ্ড, দ্বিতীয়ত, গুরুদণ্ড। লঘুদণ্ড হলো-তিরস্কার, পদোন্নতি ও বেতন বৃদ্ধি স্থগিত রাখা, আর্থিক ক্ষতির অংশ বেতন থেকে আদায় এবং বেতন গ্রেড নিম্নধাপে অবনমন। গুরুদণ্ড হলো- বাধ্যতামূলক অবসর, চাকরি থেকে অপসারণ ও চাকরি থেকে বরখাস্ত।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম