এইচএসসি ও সমমানের ফলাফল
পছন্দের প্রতিষ্ঠানে ভর্তিই চ্যালেঞ্জ
হুমায়ুন কবির
প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সংগৃহীত ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
তীব্র প্রতিযোগিতায় উচ্চমাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করেও পছন্দের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন শিক্ষার্থীরা। মানসম্মত উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসন সংখ্যা ৬০ হাজারের বেশি। কিন্তু ভর্তি আগ্রহী শিক্ষার্থী কম হলেও চার লাখের ওপরে। এবার সব বোর্ড মিলে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৬৯ হাজার ৯৭ জন। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের নামিদামি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ৬০ হাজার আসন রয়েছে, তা পূরণ হওয়ার পরও ৯ হাজারের বেশি জিপিএ-৫ পাওয়া মেধাবী শিক্ষার্থী এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পাবেন না। আবার কে কোথায় সুযোগ পাবেন, তাও অনিশ্চিত। ফলে তাদের মধ্যে এক ধরনের আশঙ্কা কাজ করছে। আবার এর সঙ্গে যুক্ত হবে জিপিএ-৫-এর নিচে কিন্তু ৩.৫-এর উপরে আছে-এমন ৪ লাখ ৭ হাজার ১৫ জন শিক্ষার্থী। এ কারণে উচ্চশিক্ষায় ভালো প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পাওয়া নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা চিন্তিত।
এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাশ করেছেন ৭ লাখ ২৬ হাজার ৯৬০ জন। গেল বছর এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন। সে তুলনায় এবার জিপিএ-৫ কমেছে ৭৬ হাজার ৮১৪ জন। তারপরও ভালো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দুশ্চিন্তার অন্ত নেই।
ভালো ফল পাওয়া শিক্ষার্থীরা বলছেন, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবার যথাযথ মূল্যায়ন হয়েছে। যাদের প্রস্তুতি ভালো ছিল, তারাই এবার ভালো ফল করেছে। ফলপ্রাপ্তির পর যদি ভালো মানের বিদ্যাপীঠে ভর্তির সুযোগ না হয়, তাহলে তাদের স্বপ্ন অধরা থেকে যাবে। ঢাকা বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২৬ হাজার ৬৩ জন। এর বিপরীতে ভর্তির আসন কম। ফলে ভালো প্রতিষ্ঠানের আশায় শিক্ষার্থীদের ছুটতে হয় ঢাকার বাইরের বিভিন্ন পাবলিক ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। দেশের বিভিন্ন বিভাগে ছুটে গিয়ে তাদের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। দূর-দূরান্তে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের এক ধরনের মানসিক চাপে থাকতে হয়। ঢাকা থেকে যাতায়াত, থাকা-খাওয়া ও সময় অপচয় এবং আর্থিক চাপ-সব মিলিয়ে শিক্ষার্থীরা এক ধরনের ভোগান্তির মধ্যে পড়েন। এমন বাস্তবতায় ঢাকার বাইরের চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট ও বরিশাল বিভাগে অবস্থিত পাবলিক ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার কেন্দ্র ঢাকায় রাখার দাবি জানিয়েছেন তারা। এতে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমবে। পাশাপাশি খরচও কমবে। সময়ও সাশ্রয় হবে।
এবার জিপিএ-৫ পেয়ে রাজধানীর নটর ডেম কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাশ করেছেন আহলান মালিক। তিনি যুগান্তরকে বলেন, অতীতে দেখেছি সর্বোচ্চ সূচক জিপিএ-৫ পেয়ে অনেক শিক্ষার্থীই ভর্তি পরীক্ষায় ছিটকে পড়েন। ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়াশোনা করার ইচ্ছা আমার। সামনে ভর্তি পরীক্ষা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। বিষয়টি সামনে রেখেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। তিনি বলেন, ঢাকার বাইরের পাবলিক ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা যেদিনই হোক ঢাকা থেকে যারা অংশ নিতে চান, তাদের জন্য ঢাকায় কেন্দ্র রাখার ব্যবস্থা করতে শিক্ষা বিভাগের কাছে অনুরোধ করছি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দেশে উচ্চশিক্ষার জন্য সরকারি-বেসরকারি মিলে আসন রয়েছে ১২ লাখের মতো। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের পছন্দের শীর্ষে। এর জন্য প্রতিযোগিতাও বেশি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোয় আসনসংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪ লাখ। এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো সামনে উচ্চশিক্ষায় প্রবেশের জন্য ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করা। এ কঠিন ভর্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়েই তাদের কাঙ্ক্ষিত প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া বড় চ্যালেঞ্জ। উচ্চশিক্ষায় ভর্তি প্রতিযোগিতা বাড়বে দেশের শীর্ষস্থানীয় পাবলিক ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজে। কিন্তু মেধাবী শিক্ষার্থীদের পছন্দের প্রতিষ্ঠানে আসনসংখ্যা খুবই সীমিত।
এবার বুয়েটে আবেদনের জন্য এসএসসিতে কমপক্ষে জিপিএ-৪ এবং এইচএসসিতে জিপিএ-৫ থাকতে হবে। এছাড়া মেডিকেলে আবেদনের জন্য এসএসসি ও এইচএসসি দুটি মিলে সর্বনিম্ন ৯ পয়েন্ট থাকতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান বিভাগে আবেদনের জন্য এসএসসি ও এইচএসসি দুটি মিলে কমপক্ষে ৮ পয়েন্ট থাকতে হবে। এছাড়া মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ভর্তির আবেদনের জন্য এসএসসি ও এইচএসসি দুটি মিলে কমপক্ষে ৭.৫ পয়েন্ট থাকতে হবে (তবে কোনোটিতে ৩ পয়েন্টের নিচে প্রযোজ্য নয়)। গুচ্ছভুক্ত ১৯ বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের জন্য বিজ্ঞানে এসএসসি ও এইচএসসি মিলে ৮ পয়েন্ট থাকতে হবে (তবে কোনোটিতেই ৩.৫০-এর নিচে নয়)। মানবিকে আবেদনের জন্য এসএসসি ও এইচএসসি মিলে ৬ পয়েন্ট থাকতে হবে (তবে কোনোটিতে ৩ পয়েন্টের নিচে নয়)। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ভর্তির আবেদনের জন্য এসএসসি ও এইচএসসি মিলে কমপক্ষে ৬.৫ পয়েন্ট থাকতে হবে (তবে কোনোটিতে ৩.০ পয়েন্টের নিচে নয়)।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য সরকারি উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির শর্ত অনুযায়ী সাধারণত জিপিএ ৩ দশমিক ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীরা আবেদনের সুযোগ পান। এবার (২০২৫ সালে) জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী ৬৯ হাজার ৯৭ জন ছাড়াও জিপিএ-৫ এর নিচে (৩.৫ পর্যন্ত) শিক্ষার্থী আছেন ৪ লাখ ৭ হাজার ১৫ জন। তবে ৬০ হাজার আসনের জন্যই মূলত এসব শিক্ষার্থীর মধ্যে লড়াই হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ যুগান্তরকে বলেন, এইচএসসিতে এবার যারা ভালো ফল করেছে, তাদের পছন্দের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিষয়ে ভর্তিতে তীব্র প্রতিযোগিতা হবে। যেহেতু পরীক্ষার মাধ্যমে উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করানো হয়, এ ক্ষেত্রে যারা ভালো করবে, তারাই চান্স পাবে। অনেক সময় কম জিপিএ পেয়েও ভালো প্রতিষ্ঠানে চান্স পেয়ে যান শিক্ষার্থীরা।
ইউজিসির তথ্য অনুসারে, উচ্চশিক্ষায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫০ হাজারের বেশি আসন রয়েছে। এছাড়া ১০৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন দেড় লাখের মতো। তবে এগুলোর মধ্যে ১০-১৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে শিক্ষার্থীদের দৃষ্টি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন বিভিন্ন কলেজে ডিগ্রি পাশ ও স্নাতকে ১০ লাখের বেশি আসন আছে প্রথম বর্ষে। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যা নির্ধারিত নেই।
মেডিকেল ও ডেন্টালে আসন আছে ১২ হাজারের বেশি এবং দুটি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে (গাজীপুরের আইইউটি ও চট্টগ্রামে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন) ৮০০টি আসন। শিক্ষার্থীদের অনেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশের পর বিশেষায়িত কারিগরি শিক্ষা নিতে চান। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪টি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ৭২০, ছয়টি টেক্সটাইল কলেজে ৭২০, সরকারি ও বেসরকারি নার্সিং ও মিডওয়াইফারি প্রতিষ্ঠানে আসন আছে ৫ হাজার ৬০০টি। ১৪টি মেরিন অ্যান্ড অ্যারোনটিক্যাল কলেজে ৬৬০টি আসন আছে। যারা ইসলামি বিশেষজ্ঞ হতে চান, তাদের জন্য ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ফাজিল (ডিগ্রি) ও অনার্সে ভর্তির জন্য ৭০ হাজার আসন আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ৭টি সরকারি কলেজে রয়েছে প্রায় ২৪ হাজার আসন। যদিও সেটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ নিলে এই আসন সংখ্যা অনেক কমে যাবে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আসন যতই থাকুক না কেন, শেষ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ১০-১৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, ৪৭টি সরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ এবং কয়েকটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজেও শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে চান। এ ছাড়া ৬টি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন রয়েছে ৪ হাজারের মতো। সব মিলিয়ে আসন আছে ৬০ হাজারের বেশি। গত বছর থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবারও ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে অনার্সে ভর্তি হতে হবে।
