Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

বেঁধে দেওয়া সময়সীমা শেষ

জুলাই সনদের আদেশ প্রস্তুত করছে সরকার

সমঝোতা না হলে সিদ্ধান্ত দেবে সরকার -প্রেস সচিব

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

জুলাই সনদের আদেশ প্রস্তুত করছে সরকার

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোট নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে রাজনৈতিক দলগুলোকে সরকারের দেওয়া এক সপ্তাহের সময়সীমা রোববার শেষ হয়েছে। কিন্তু দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা দূরের কথা, কোনো ধরনের আলোচনাই হয়নি। বিশেষ করে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে দূরত্ব আরও বেড়েছে। সরকার বলছে, রাজনৈতিক দলগুলো চাইলে আরও কিছুটা সময় দিতে আপত্তি নেই। তবে এখন পর্যন্ত কোনো দলই সময়ের জন্য আবেদন করেনি। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, জুলাই আদেশ প্রস্তুত করছে সরকার। বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের নিয়মিত সভায় এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা রয়েছে। 

সূত্র জানায়, জুলাই সনদ ইস্যুকে সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর মুখোমুখি অবস্থানকে সরকার চূড়ান্ত অবস্থান হিসাবে দেখছে না। মাঠ চাঙা রাখার জন্য এটি তাদের রাজনৈতিক অবস্থান। সরকারের ধারণা প্রকাশ্যে এই কঠোর অবস্থান থেকে অবশ্যই তারা ছাড় দেবে। এক্ষেত্রে উপদেষ্টাদের সঙ্গে বিএনপি ও জামায়াতের অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ আছে। তবে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব প্রধান উপদেষ্টার ওপর ছেড়ে দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। ফলে বৃহস্পতিবারের আগেও এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। সোমবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা এতে সভাপতিত্ব করবেন। সভা শেষে জুলাই সনদ নিয়ে উপদেষ্টাদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হতে পারে। এছাড়াও মঙ্গলবার দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মিলিত হবেন গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন উপদেষ্টা। সেখানেও জুলাই সনদ নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে। সূত্র জানায়, ড. ইউনূস মনে করলে দলগুলোর সঙ্গে আরেক দফা কথা বলতে পারেন। তবে যা-ই হোক, সরকার দ্রুতই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। 

জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম রোববার যুগান্তরকে বলেন, জুলাই সনদ ইস্যুতে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানিয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছিল যত দ্রুত সম্ভব (সম্ভব হলে এক সপ্তাহের মধ্যে) রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এক সপ্তাহ শেষ হয়েছে। তবে সপ্তাহের মধ্যেই হতে হবে, এমন নয়। এখনো সময় আছে। দলগুলো চাইলে আরও সময় নিতে পারে। সরকার আরও অপেক্ষা করবে। এরপরও সমাধান না হলে উপদেষ্টা পরিষদ সিদ্ধান্ত নেবে। এক প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, এক সপ্তাহ সময় শেষ হয়েছে। এখন উপদেষ্টা পরিষদ পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে। উপদেষ্টারা যদি মনে করেন, দলগুলোকে আরেকবার ডাকবেন, তাহলে সরকারের সঙ্গে আবারও বৈঠক হবে। না হলে দেশ ও জনগণের বৃহৎ কল্যাণে সরকার একটি সিদ্ধান্ত দেবে। রাজনৈতিক দলগুলো অনেকটা মুখোমুখি, এ অবস্থায় সংকট সমাধানের আভাস বা সম্ভাবনা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলো অনেক বড় সমস্যার সমাধান করেছে। যেমন অনেকে আশঙ্কা করেছিলেন জুলাই ঘোষণাপত্র হবে না। আবার কেউ কেউ বলেছিলেন সনদে রাজনৈতিক দলগুলো স্বাক্ষর করবে না। কিন্তু দুটোই হয়েছে। ফলে আমরা আশা করছি জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলো প্রজ্ঞা এবং দেশ ও জাতির প্রতি তাদের দায়বদ্ধতার পরিচয় দেবে। শফিকুল আলম বলেন, সংকটের কথা বলা হচ্ছে, আশা করি দ্রুতই এর সমাধান হবে। 

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে ২৮ অক্টোবর সরকারের কাছে সুপারিশ জমা দেয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এতে বলা হয়, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে সরকার একটি আদেশ জারি করবে। কিন্তু আদেশ জারির আগেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিরোধ চরম আকার ধারণ করে। এ অবস্থায় সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে ৩ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠক শেষে জানানো হয় গণভোটের সময় এবং বিষয়বস্তু নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি। এক্ষেত্রে দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে এক সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানানোর আহ্বান করা হয়। 

এদিকে সরকারের আহ্বানের পর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দলগুলো কোনো সমঝোতায় আসতে পারেনি। জামায়াতে ইসলামী বলছে, তারা বিএনপিকে আলোচনার আহ্বান জানালেও দলটি তাতে সাড়া দেয়নি। আর বিএনপি বলছে, আলোচনার উদ্যোগ সরকারকে নিতে হবে। এদিকে বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে সমঝোতার জন্য জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু তা সফল হয়নি। এ কারণে জামায়াত ও এনসিপিও সরকারের উদ্যোগ চায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে এখন দুটি অপশন রয়েছে। প্রথমত, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আবার কথা বলতে পারে। দ্বিতীয়ত, কোনো আলোচনা ছাড়াই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে পারে।


Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম