পালাতে গিয়ে নদীতে পড়ে নিহত ১
মদের পার্টির লোভে বাসে আগুন!
জনতার হাতে আটক হন রুদ্র মোহাম্মদ নাহিয়ান আমির সানি। সংগৃহীত ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ে তিন বন্ধু। সরাসরি কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল না। মদের পার্টির লোভে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের লকডাউনে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড করতে রাজি হয় তারা। রাজধানীর শাহআলী থানা এলাকায় বৃহস্পতিবার রাতে কিরণ মালা পরিবহণের একটি বাসে কেরোসিন ছিটিয়ে আগুন দেয়। আগুনের ভিডিও মোবাইল ফোনে ধারণ করার সময় স্থানীয় জনতা ধাওয়া দেয়।
সেখান থেকে পালানোর চেষ্টাকালে আব্দুল্লাহ আল সাইফ (১৮) নামে এক তরুণ তুরাগ নদীতে ঝাঁপ দিয়ে ডুবে মারা যান। তাকে উদ্ধার করে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। শুক্রবার বিকালে লাশ বুঝে নিয়ে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন স্বজনরা।
জানা গেছে, নিহত আব্দুল্লাহ আল সাইফের বাড়ি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ থানার শ্রীপুরে। তার বাবার নাম আলমগীর ও মা সাইমা বেগম। মিরপুর ১০ নম্বর এলাকার বি-ব্লকের ১ নম্বর রোডের ১৫ নম্বর বাসায় থাকত।
এদিকে একই ঘটনায় জনতার হাতে আটক হন রুদ্র মোহাম্মদ নাহিয়ান আমির সানি (১৯) নামের আরেক যুবক। পরে তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। রুদ্র নাহিয়ানের বাবার নাম আমির হোসেন। রাজধানীর পল্লবী থানার মিরপুর ১১ নম্বরের ২০ নম্বর বাসায় থাকেন। পুলিশের তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, নাশকতার মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে রুদ্র নাহিয়ানকে। গ্রেফতারের পর তিনি পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন, মদের পার্টির লোভে তারা এ কাজ করেছেন। বোতলে করে এক লিটার কেরোসিন কিনে আনেন তারা। পরে কিরণ মালা পরিবহণের একটি দাঁড়িয়ে থাকা বাসে আগুন দেন। তবে তিন বন্ধুর মধ্যে একজন পালাতে সক্ষম হয়েছেন। তার নাম-পরিচয় জানাতে পারেনি পুলিশ। এছাড়া কারা মদের পার্টির টাকা দিতে চেয়েছিল সে বিষয়েও এখনো কিছু জানতে পারেননি তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। এ ঘটনায় ডিএমপির শাহআলী থানায় দুটি মামলা হয়েছে। একটি অপমৃত্যুর ও অপরটি নাশকতার। নাশকতার মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে রুদ্র নাহিয়ানকে। পুলিশ জানিয়েছে, পলাতক অপর দুষ্কৃতকারীকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিরপুর বিভাগের শাহআলী থানার ওসি মোহাম্মদ গোলাম আজম যুগান্তরকে বলেন, গ্রেফতার রুদ্র মোহাম্মদ নাহিয়ানের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী-আব্দুল্লাহ আল সাইফ (নিহত) তাকে ডেকে নিয়ে আসে। সাইফ নাহিয়ানকে বলেছিল-দোস্ত আমার সঙ্গে চল তাহলে মদের পার্টি দেব, তোকে ড্রিংক করাব। তারা তিনজনই ইংরেজি মাধ্যমের ছাত্র। তাদের কোনো রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া যায়নি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাইফ (নিহত) কার কাছ থেকে টাকা এনেছে তা এখনো জানা যায়নি। তিনজনের মধ্যে এখনো একজন গ্রেফতার হয়নি। পলাতকের বিষয়ে রুদ্র নাহিয়ান জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, আরেকজনকে সে চেনে না। আব্দুল্লাহ আল সাইফ তাকে ডেকে আনে।
এদিকে নিহত সাইফের মামা মো. আল আমিন পাটোয়ারি যুগান্তরকে বলেন, আমার ভাগিনা এসএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে। নৌবাহিনী কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষে পড়ত। সে কোনো নাশকতায় জড়িত ছিল না। ঘটনাক্রমে ধাওয়া খেয়ে ভয়ে পানিতে ঝাঁপ দিয়েছে।
থানা পুলিশ ও স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক ১০টা ৫ মিনিটের সময় শাহআলী থানাধীন উত্তর নবাবের বাগ সোহেল ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের পশ্চিম পাশে পাকা রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে থাকা কিরণ মালা পরিবহণের একটি ফাঁকা বাসে প্লাস্টিকের বোতলে করে কেরোসিন ছিটিয়ে অগ্নিসংযোগ করে তারা। এরপর মোবাইল ফোনে তারা এর ভিডিও ধারণ করছিল। বিষয়টি আশপাশের লোকজনের নজরে এলে তারা দুষ্কৃতকারীদের ধাওয়া দিয়ে একজনকে হাতেনাতে আটক করে। এ সময় সাইফ প্রাণ ভয়ে নিকটবর্তী তুরাগ নদীতে ঝাঁপ দেয় এবং অন্য একজন দৌড়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। সাঁতার না জানায় নদীতে ডুবে যায় সাইফ। পরবর্তীতে উপস্থিত লোকজন তাকে উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

