মাছ-মাংস চড়া শীতের সবজিরও উচ্চমূল্য
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বাজারে মধ্য ও নিম্নবিত্তের নাগালের বাইরে মাছ-মাংসের দাম। এক কেজি গরুর মাংস ৮০০ ও খাসির মাংস ১২০০ টাকা। সপ্তাহে যারা একবার মাংস কিনতেন, তারা মাসে একবার কিনতেই হিমশিম খাচ্ছেন। দেশি মুরগির কেজি ৬০০ টাকা হওয়ায় সবাই ঝুঁকছেন সোনালি ও ব্রয়লার মুরগিতে। তবে সেখানেও নেই স্বস্তি। গরিবের পাঙাশের কেজিও ২৩০ টাকা। বাজারে শীতের সবজির সরবরাহ অনেক বেড়েছে, তবু বিক্রি হচ্ছে উচ্চমূল্যে। এবার অজুহাত কথিত লকডাউন। এমন পরিস্থিতিতে বাজারে গিয়ে কেউ কেউ অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে থাকছেন। নিরুপায় ক্রেতা সামান্য কিছু নিয়েই ফিরছেন ঘরে। শুক্রবার রাজধানীর একাধিক খুচরা বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
কয়েকদিনের তুলনায় খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম কিছুটা নিম্নমূখী। এরপরও চড়া মূল্যেই বিক্রি হচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটি কিনতে ক্রেতাদের গুনতে হচ্ছে সর্বোচ্চ ১২০ টাকা। গত বছর একই সময়ের তুলনায় সব ধরনের চাল বিক্রি হচ্ছে বাড়তি মূল্যে। গরিবের এক কেজি মোটা চাল কিনতে গুনতে হচ্ছে ৬০ টাকা। আর সরু চাল বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৯০-৯৫ টাকায়। জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাবেক সভাপতি গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, যেভাবে বাজারে প্রতিকেজি মাংস চড়া মূল্যে বিক্রি হচ্ছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এছাড়া এ সময় মাছের দামও কম থাকার কথা। কিন্তু বিক্রি হচ্ছে উচ্চমূল্যে। সব মিলে অনেক ক্রেতাই মাছ-মাংস কিনতে পারছেন না। দেখা যাচ্ছে প্রকৃত যে উৎপাদন ব্যয়, তার চেয়ে বাজারের দাম অনেক বেশি। তাই সংশ্লিষ্টদের এদিকে নজর দিতে হবে। কেন এত দাম, তা খতিয়ে দেখতে হবে। অনিয়ম পেলে অসাধুদের ধরে আইনের আওতায় আনতে হবে। কারণ দাম বাড়ায় গরিবের আমিষে টান পড়ছে।
শুক্রবার রাজধানীর কাওরান বাজার, নয়াবাজার, রায় সাহেব বাজার ঘুরে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এদিন প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৭০-১৮০ টাকা। প্রতিকেজি সোনালি মুরগি ৩২০ টাকা। ক্রস সোনালি মুরগি ২৯০-৩০০ টাকা। আর দেশি মুরগি ৬০০ টাকা। খুচরা বাজারে প্রতিকেজি গরুর মাংস ৮০০ ও খাসির মাংস ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাছের মধ্যে বড় আকারের রুই প্রতিকেজি ৩৫০-৪০০ টাকা, মাঝারি ৩০০-৩২০ টাকা ও ছোট আকারের কেজিপ্রতি ২৫০-২৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতিকেজি কাতল মাছ ৩৮০-৪৫০ টাকা, শিং ৫৫০ টাকা, চাষের কৈ ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, পাঙাশ ২০০-২৩০ টাকা এবং তেলাপিয়া ১৫০-২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতিকেজি কাঁচকি মাছ কিনতেও ক্রেতার ৪৫০ টাকা ও মলা ৩০০ টাকা গুনতে হচ্ছে।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টায় নয়াবাজারে গরুর মাংসের দোকানে আসা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সালেহ উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, অনেকদিন ধরে ছেলেমেয়েরা গরুর মাংস খেতে চাচ্ছে। তাই মাংসের দোকানে আসা। বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৮০০ টাকা। আধা কেজি দিতে বলেছি। তিনি জানান, এক সময় সপ্তাহে দুই দিন হলেও গরুর মাংস কেনা হতো, এখন মাসে একবারও কিনতে পারি না। এছাড়া সব ধরনের মুরগির দামও অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে।
বেলা ১১টায় রায় সাহেব বাজারে মাংসের দোকানে এসেছেন দিনমজুর শামসুল হক। দাম শুনে সামনে অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে আছেন। কিছুক্ষণ পর গেলেন ব্রয়লার মুরগির দোকানে। সেখানেও দাম শুনে গেলেন মুরগির পা-পাখনা ও কলিজার দোকানে। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি ব্রয়লার মুরগির মাংস আধা কেজি কিনেছেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে ইনকাম করি, অনেকদিন পর মুরগি কিনেছি। আমাদের মতো মানুষের মাংস খাওয়া কপাল থেকে উঠে গেছে।
ব্যাপক সরবরাহের পরও বাজারে শীতের সবজির উচ্চদামে বিস্মিত ক্রেতারা। এদিন প্রতিকেজি পটোল বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকায়। যা সাত দিন আগেও ৬০-৬৫ টাকা ছিল। প্রতিকেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়, গেল সপ্তাহে যা ৬০ টাকায় নেমেছিল। পাশাপাশি প্রতিকেজি বেগুন ১০০ টাকা, পেঁয়াজের ফুল ৮০ টাকা, ঝিঙ্গা ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা প্রতিকেজি ৮০ টাকা, বরবটি ১২০ টাকা, করলা ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা সপ্তাহের তুলনায় ১০-৫০ টাকা বেশি। এছাড়া প্রতিকেজি শসা ৮০ টাকা, আলু ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফুলকপি ও বাঁধাকপি প্রতি পিস ৫০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সঙ্গে কাঁচা টমেটো প্রতিকেজি ১০০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১৬০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা, টমেটো ১৪০ টাকা ও প্রতিকেজি গাজর ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া দাম কিছুটা কমলেও খুচরা বাজারে প্রতিকেজি পেঁয়াজ ১১০-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে মৌসুমের নতুন পেঁয়াজ কলি কেজিপ্রতি ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বিক্রেতারা দাবি করেন, বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের লকডাউনের কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সবজির ট্রাক ঢাকায় আসেনি। তাই সরবরাহে টান পড়েছে। শুক্রবার বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে।
খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এদিন প্রতিকেজি মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা জাতের চাল বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা। যা গত বছর একই সময় ৫৫ টাকা ছিল। পাইজাম ও বিআর ২৮ জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা। যা আগে ৬৫ টাকা ছিল। আর সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকা। যা আগে ৭৫-৮৫ টাকা ছিল। কাওরান বাজারের আল্লাহর দান রাইস এজেন্সির মালিক সিদ্দিকুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, মিল মালিকরা কৌশলে বাড়তি দাম রাখছে। তাই দেশের বাজারে দাম কমছে না।
শুক্রবার বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সব সময় মাংসের দাম সিটি করপোরেশন ঠিক করে। বর্তমানে তারা মূল্য নির্ধারণ করছে না। তবে বাজারে মূল্য নিয়ন্ত্রণে তদারকি করা হচ্ছে। পাশাপাশি শীতের সবজি ও অন্যান্য পণ্যের দামেও নজর রাখা হচ্ছে। অনিয়ম সামনে এলেই আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।
