রাজউকের প্লট দুর্নীতি
আজ হাসিনা জয় ও পুতুলের ৩ মামলার রায়
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৭ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
হাসিনা জয় ও পুতুল। ফাইল ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
রাজধানীর পূর্বাচলে রাজউকের প্লট বরাদ্দে ক্ষমতার অপব্যবহার, জালিয়াতি ও অনিয়মের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার ছেলেমেয়ের বিরুদ্ধে দুদকের করা মামলায় রায় দেওয়া হবে আজ। ঢাকার বিশেষ জজ-৫ এর বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন দুদকের করা পৃথক ৩ মালায় এ রায় ঘোষণা করবেন। তাদের বিরুদ্ধে আরও এক মামলার রায় দেওয়া হবে আগামী ১ ডিসেম্বর। এছাড়া প্লট জালিয়াতির অপর দুটি মামলার রায় কবে দেওয়া হবে তাও জানা যাবে ১ ডিসেম্বর। ইতোমধ্যে জুলাই আন্দোলন দমনে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
ক্ষমতার অপব্যবহার করে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে রাজউক থেকে চলতি বছরের ১৩ ও ১৪ জানুয়ারি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ৬০ কাঠার প্লট হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় মামলা করে দুদক। মামলায় শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ আসামি রয়েছেন ২৩ জন। এর মধ্যে ৩ মামলায় শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা আজ।
প্রসিকিউশন জানায়, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবনের মুখোমুখি হবেন। রাজউকের প্লট জালিয়াতির মামলার বিষয়ে দুদকের পিপি সুলতান মাহমুদ যুগান্তরকে বলেন, সাক্ষীদের জবানবন্দিতে আসামিদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উঠে এসেছে। যুক্তিতর্ক উপস্থাপনে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সবকিছু তুলে ধরেছি। ন্যায়বিচারের স্বার্থে আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হবে এমন প্রত্যাশা করছি। মামলার আসামি রাজউকের এস্টেট ও ভূমি শাখার সাবেক সদস্য খুরশীদ আলমের আইনজীবী মো. শাহীনুর ইসলাম বলেন, আশা করছি আমার মক্কেল খালাস পাবেন।
এর আগে গত ২৩ নভেম্বর মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের জন্য আজকের দিন ধার্য করেন বিশেষ জজ আদালত। যুক্তিতর্কে আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন চান দুদকের পিপি। তবে পলাতক থাকায় শেখ হাসিনাসহ পরিবারের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না।
এদিকে মামলা তিনটির একটিতে শেখ হাসিনাসহ আসামি ১২ জন, আরেকটিতে শেখ হাসিনা ও জয়সহ ১৭ জন, বাকি আরেক মামলায় পুতুল ও শেখ হাসিনাসহ আসামি ১৮ জন।
মামলার অপর আসামিরা হলেন-জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লাহ খন্দকার, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছি উদ্দিন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) কবির আল আসাদ, সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মো. নুরুল ইসলাম, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সাবেক ইঞ্জিনিয়ার সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (অব.), পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-২) শেখ শাহিনুল ইসলাম, উপপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান, হাবিবুর রহমান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব সালাহউদ্দিন। আসামিদের মধ্যে একমাত্র গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন রাজউকের সাবেক সদস্য মোহাম্মদ খুরশীদ আলম। বাকিরা পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়না জারি রয়েছে।
প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে গত জানুয়ারিতে পৃথক ৬ মামলা করে দুদক। সবগুলো মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া। গত ৩১ জুলাই শেখ হাসিনাসহ এ তিন মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন আদালত।
এসব মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, সরকারের সর্বোচ্চ পদে থাকাকালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের ওপর অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। তারা বরাদ্দ পাওয়ার যোগ্য না হওয়া সত্ত্বেও গরিব দেখিয়ে অসৎ উদ্দেশ্যে পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরের ২০৩ নং রাস্তার ৬টি প্লট শেখ হাসিনাসহ তার পরিবারের সদস্যদের নামে বরাদ্দ দেন।
জয় ও পুতুলের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ : জয়ের নামে রাজউকের এখতিয়ারাধীন এলাকায় বাড়ি বা ফ্ল্যাট বা আবাসন সুবিধা থাকার পরও তা হলফনামায় তথ্য গোপন করে পূর্বাচল নতুন শহর আবাসন প্রকল্পে আইন লংঘন করে মাকে অবৈধভাবে প্রভাবিত করে ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নেন। পরে রেজিস্ট্রি করে সরকারি জমি আত্মসাৎ করেন। এছাড়া পুতুল তার মাকে অবৈধভাবে প্রভাবিত করে রাজউকে কোনো আবেদন না করেই মায়ের কাছে আবদার করে ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নেন। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব আসামি মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন নিজে ও অপরকে শাস্তি থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের একটি নথি বিনষ্ট করেছেন অথবা গায়েব করেছেন মর্মে দুদকের তদন্তে উঠে এসেছে।
