মোদি ও রাহুলের পোস্ট
বললেন বিজয় ভারতের, নাম নেই বাংলাদেশের
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বিরোধীদলীয় নেতা রাহুল গান্ধী। মঙ্গলবার আলাদা বার্তায় তারা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকে ভারতের বিজয় হিসাবে উল্লেখ করলেও কোথাও বাংলাদেশের নাম বা স্বাধীনতার মূল প্রেক্ষাপট তুলে ধরেননি।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করে বাংলাদেশ। যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী। সে কারণেই ভারতও দিনটিকে নিজেদের ‘বিজয় দিবস’ হিসাবে পালন করে থাকে। তবে ঐতিহাসিকভাবে এই দিনে মূল বিজয় ছিল বাংলাদেশের, কারণ এই দিনেই জন্ম নেয় স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ।
বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে নরেন্দ্র মোদি লিখেছেন, ‘বিজয় দিবসে আমরা আমাদের সেই সাহসী সেনাদের স্মরণ করছি, যাদের সাহসিকতা ও আত্মত্যাগ ১৯৭১ সালে ভারতের এক ঐতিহাসিক বিজয় নিশ্চিত করেছিল।’ তিনি আরও বলেন, তাদের দৃঢ় মনোবল ও নিঃস্বার্থ সেবা ভারতের ইতিহাসে একটি গৌরবময় অধ্যায় হিসাবে চিহ্নিত হয়ে আছে এবং এই বীরত্ব প্রজন্মের পর প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে চলেছে। পুরো বার্তায় একবারও তিনি বাংলাদেশের নাম উল্লেখ করেননি।
একই দিনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া পোস্টে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও ১৯৭১ সালের যুদ্ধ প্রসঙ্গে কথা বলেন। তিনি লিখেছেন, ‘বিজয় দিবসে আমি আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই, যারা ১৯৭১ সালের যুদ্ধে ভারতের সীমান্ত রক্ষার সময় বীরত্ব, নিষ্ঠা ও অটল সংকল্পের মাধ্যমে ইতিহাস গড়েছিলেন।’ তার বক্তব্যেও ওই যুদ্ধ কোথায় বা কার সঙ্গে হয়েছিল, সে বিষয়ে কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি। এর আগে ভারতের সেনাবাহিনীও আলাদা এক পোস্টে বিজয় দিবস পালন করে। সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বের কথা উল্লেখ করে বলা হয়, মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভারতীয় সেনারা লড়াই করেছিল এবং এই যুদ্ধ দক্ষিণ এশিয়ার মানচিত্র বদলে দিয়ে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্ম দেয়। তবে রাজনৈতিক নেতৃত্বের সাম্প্রতিক পোস্টগুলোতে সেই প্রেক্ষাপট অনুপস্থিত থাকায় বিষয়টি নতুন করে নজরে এসেছে।
ইতিহাস অনুযায়ী, দীর্ঘ নয় মাস মুক্তিযোদ্ধারাই মূলত যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন। ভারত ৩ ডিসেম্বর যৌথ বাহিনী হিসাবে যুদ্ধে যুক্ত হয় এবং আত্মসমর্পণের দলিলেও পাকিস্তানি বাহিনী ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ বাহিনীর কাছেই আত্মসমর্পণ করে। এই বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে বিজয় দিবসের পোস্টে বাংলাদেশের নাম না থাকাকে অনেকেই ইতিহাসের অসম্পূর্ণ উপস্থাপন হিসাবে বিবেচনা করছেন।
ঢাবিতে মোদির কুশপুত্তলিকা দাহ : ঢাবি প্রতিনিধি জানান, বাংলাদেশের লাখো মজলুমের রক্তে অর্জিত বিজয় দিবসের ওপর ‘নগ্ন হস্তক্ষেপ’ ও বিজয় দিবসকে ‘কলঙ্কিত’ করার দায়ে নরেন্দ্র মোদির কুশপুত্তলিকা দাহ করেছে আধিপত্যবাদবিরোধী ব্যানারের একদল শিক্ষার্থী। মঙ্গলবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু ভবনের সামনে এ কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়। এ সময় তারা ‘কসাই মোদির গদিতে, আগুন জ্বালো একসঙ্গে’, কসাই মোদির দুই গালে, জুতা মারো তালে তালে’, ‘বাংলাদেশ-বাংলাদেশ, জিন্দাবাদ-জিন্দাবাদ’, ‘দিল্লি না, ঢাকা, ঢাকা-ঢাকা’, ‘ভারতীয় আগ্রাসন, রুখে দিবে জনগণ’, ‘আজকের এই দিনে, আবরারকে মনে পড়ে’, জানি জানি সবাই জানি, শাহবাগীরা হিন্দুস্তানি’সহ আরও নানা স্লোগান দেন। সংগঠকদের একজন রিয়াদ জুবাহ বলেন, ‘মানুষের মতামতকে উপেক্ষা করে গুজরাটের কসাই ভারতের সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনকারী, ভারতের সংখ্যালঘুদের নিষ্পেষণকারী, এই নরপশুর প্রকাশ্য দালাল বাংলাদেশে তাকে এনেছিল এবং বাংলাদেশের জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এটার বিরোধিতা করেছিল।’ তিনি বলেন, ‘এই বিরোধিতা করার কারণে এই দালাল খুনি হাসিনা, ভারতের প্রক্সি এ দেশের মানুষের ওপর গণহত্যা চালিয়েছিল এবং দেশের নিরীহ মানুষকে প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যা করেছিল। বাংলাদেশে ১৭ বছরের যে অপশাসন চলেছে, সে অপশাসনেরও মদদদাতা ভারত। তাই বাংলাদেশে ভারতের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে আমাদের এই প্রতিবাদ।’
এছাড়া তারা মধুর ক্যান্টিনের পাশে পদদলিত করার জন্য নরেন্দ্র মোদির একটা স্টিকার লাগান। এর আগে বেলা ১টার দিকে ডাকসুর সামনে একদল শিক্ষার্থী গোলাম আযমের ছবিতে জুতা নিক্ষেপ করে।
