ঢাকা দক্ষিণ সিটি মেয়রের ১ বছর
দুর্নীতি করে কেউ পার পাবে না: শেখ ফজলে নূর তাপস
আগামী ১৬ মে ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস দায়িত্ব পালনের এক বছর পূর্ণ করবেন। প্রথম বছরে নির্বাচনি প্রতিশ্রুতির কতটুকু পূরণ করতে পেরেছেন? মশকনিধন, জলাবদ্ধতা দূরসহ সুন্দর ও সচল ঢাকা গড়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্নের জবাব দিতে যুগান্তরের মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি। দুর্নীতি-দখলমুক্ত ঢাকা সিটি গড়তে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। সাক্ষাৎকারে বিস্তারিত তুলে ধরছেন -
বিশেষ সংবাদদাতা মাহবুব আলম লাবলু
প্রকাশ: ০৫ মে ২০২১, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
শেখ ফজলে নূর তাপস
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
যুগান্তর : আগামী ১৬ মে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র পদে আপনার দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর পূর্তি। নির্বাচনি ইশতাহারে আপনি ৫টি রূপরেখা ঘোষণা করেছিলেন। এ সময়ে অগ্রগতি কতটুকু?
তাপস : এক বছরে কোনো কাজের বিচার করার সুযোগ নেই। ৫ বছরের যে রূপরেখার কথা আমরা বলেছি, সেই অনুযায়ী ঢাকার পরিবর্তন আনতে সক্ষম হব, ইনশাআল্লাহ। এ পরিপ্রেক্ষিতে সব কর্মপরিকল্পনা নতুনভাবে ঢেলে সাজানো হয়েছে এবং ব্যাপক কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। কার্যপরিধি এত ব্যাপক-সব নিয়ে আলাপ করার সময় হয়তো হবে না।
যুগান্তর : মশার যন্ত্রণা যাচ্ছেই না। সামনে বর্ষা মৌসুম। করোনা ও ডেঙ্গির প্রকোপ একসঙ্গে শুরু হলে সামাল দেওয়ার পরিকল্পনা কী?
তাপস : আপনারা অবশ্যই শিকার করবেন করোনা মহামারির মধ্যে আমি দায়িত্ব নিয়েছি। এখনো করোনার হিংস্রতার মধ্যেই আছি। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার মতো একটু সময়ও পাওয়া যাচ্ছে না। তারপরও থেমে থাকিনি। আমরা দিনরাত কাজ করে চলেছি। মশকের ব্যাপারে আপনারা লক্ষ করেছেন, গত মে মাসে দায়িত্ব গ্রহণ করার পরই নতুন কর্মপরিকল্পনা নিয়ে এগিয়েছি, তাতে ব্যাপক সফলতা পেয়েছি। গত বছর ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা যায়নি। ঢাকা দক্ষিণবাসীকে ডেঙ্গিতে মরতে দিইনি। আমরা মনে করি, এটা আমাদের একটা সফলতা। মশক কার্যক্রমের একটি জায়গায় ব্যত্যয় হওয়ায় জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে কিউলেক্স মশার ব্যাপকতা বেড়ে যায়। তখন আমি বলেছিলাম, দুই সপ্তাহের মধ্যেই নিয়ন্ত্রণে আসবে। আপনারা লক্ষ করেছেন, এখন মশার উপদ্রপ নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছি। আমরা আশাবাদী, আগামী মৌসুমেও গত বছরের মতো ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হব। মশক নিয়ন্ত্রণে আমাদের কাজেও কিছু পরিবর্তন এনেছি। সেটার সুফলই আমরা পাচ্ছি।
যুগান্তর : আপনার একটি বড় প্রতিশ্রুতি ছিল জলাবদ্ধতা দূর করা। এই প্রতিশ্রুতি পূরণে কতটা অগ্রসর হতে পেরেছেন?
তাপস : আপনারা জানেন, গত বর্ষা মৌসুমের আগেই আমি দায়িত্ব গ্রহণ করি। বর্ষা আসার পর দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রই এ ব্যাপারে সোচ্চার হয়েছিলাম। ওয়াসা কর্তৃক যে খাল ও নর্দমাগুলো পরিষ্কার করা হয়, সেগুলো সঠিকভাবে করা হয় না। যে কারণে বর্ষায় জলাবদ্ধতা ব্যাপক আকার ধারণ করে। আমি মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়কেও ধন্যবাদ জানাতে চাই, স্থানীয় সরকার বিভাগেও তিনি যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছেন। আপনারা জানেন ডিসেম্বরে আমরা খালগুলো পেয়েছি। ২ জানুয়ারি থেকেই আমরা খালগুলো পরিষ্কারে পলি মাটি ও বর্জ্য স্থানান্তরের কার্যক্রম শুরু হয়। এ ব্যাপারে ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা নিয়েছি। পরিকল্পনা অনুযায়ী আমাদের কাজ চলমান। এরই মধ্যে ৭ লাখ টনের বেশি বর্জ্য ও পলি মাটি অপসারণ করেছি। যেসব খাল দখলে ছিল, সেগুলো দখলমুক্ত করেছি। কালভার্টগুলো পরিষ্কার করেছি। পুনরায় যেন খালগুলো দখল না হয়, সে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে স্লুইচ গেটগুলো আমাদের কাছে হস্তান্তর করতে অনুরোধ করেছি। যে পাম্প স্টেশনগুলো পেয়েছি, সেগুলো অচল ছিল, এখন সচল করেছি। আমরা আশাবাদী, আমাদের যে সমন্বিত প্রয়াস, ইনশাআল্লাহ ঢাকাবাসীকে যে কোনো বছরের তুলনায় এবার অনেকটা সুফল দিতে পারব। আগের তুলনায় জলাবদ্ধতা অনেকাংশে কম হবে। যে পরিকল্পনা নিয়েছি, সেগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা গেলে ঢাকাবাসীকে দীর্ঘ মেয়াদে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত রাখতে পারব। তবে কয়েকটি প্রতিকূলতা এখনো রয়েছে। একটি হলো পান্থপথ বক্স কালভার্ট থেকে পানি নিষ্কাশন হয়ে হাতিরঝিলে আসে, সেখানে যে ব্যবস্থা রয়েছে, সেটি অত্যন্ত ধীরগতির। যে কারণে পানি নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। আশা করব, আগামী মে মাস থেকে হাতিরঝিল প্রকল্প পরিচালনাকারীরা সেই প্রতিবন্ধকতা দূর করবে। এছাড়াও এলাকাভিত্তিক কিছু সমস্যা সমাধানেও আমরা কাজ করছি। নিজ অর্থায়নে অনেক কাজ করা হচ্ছে।
যুগান্তর : বাসা-বাড়ির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে নানা অভিযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে আপনার পরিকল্পনা কী?
তাপস : বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে আমরা ঢেলে সাজাচ্ছি। সেখানেও সুফল পাওয়া শুরু করেছি। আগে যত্রতত্র সব জায়গায় রাস্তাঘাটে বর্জ্য দেখা যেত। সেগুলো ওয়ার্ডভিত্তিক একটা জায়গায় নেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র নির্মাণ করছি। এ বছরের মধ্যেই আমাদের ৭৫টি ওয়ার্ডে বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র নির্মাণ শেষ হবে। তাহলে রাস্তাঘাটে উপচে পড়া বর্জ্য আমাদের দেখতে হবে না। আমার নির্বাচনি ইশতাহারে মৌলিক সেবা নিশ্চিত করার যে কথা বলা হয়েছিল, সেগুলো নিশ্চিত করে ফেলেছি।
যুগান্তর : আপনার সুন্দর ঢাকা গড়ার প্রতিশ্রুতির কী হলো?
তাপস : আমাদের সুন্দর ঢাকা গড়ার যে প্রত্যয়, এর আওতায় যে খালগুলো পেয়েছি, সেখানে নান্দনিক পরিবেশ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছি। এরই মধ্যে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছি। আশা করছি, কিছুদিনের মধ্যেই সেটি একনেকে যাবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ঢাকার খালগুলোয় একটি নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টি হবে। খালের পাশ দিয়ে হাঁটতে পারবে। সাইক্লিং করতে পারবে। নির্মল পরিবেশ উপভোগ করতে পারবে নগরবাসী। এছাড়া মাঠগুলো উন্মোক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছি। এরই মধ্যে কয়েকটি মাঠ ছেলে-মেয়েদের খেলার উপযোগী করে তুলেছি। বড় পরিসরে এ কাজ চলছে।
যুগান্তর : সচল ঢাকা গড়তে আপনার প্রতিশ্রুতি ও পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ শুরু করতে পেরেছেন কি?
তাপস : করোনা মহামারি যেমন বিশ্বকে অনেকটা থমকে দিয়েছে, তেমনই করোনার থাবায় আমাদের সচল ঢাকা গড়ার উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। দফায় দফায় গণপরিবহণ বন্ধ থাকায় এর মালিক ও অংশীদারদের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা করতে পারছি না। আমাদের পরিকল্পনার কাজ হয়ে গেছে। আশা করি, চলমান বিধিনিষেধ প্রত্যাহার হলে ২/৩ মাসের মধ্যে মাঠ পর্যায়ের কাজ বাস্তবায়ন করতে পারব। এরই মধ্যে রিকশা নিবন্ধনের কাজ শেষ করেছি। এতে ঢাকায় অযান্ত্রিক পরিবহণ ও গণপরিবহণ একটি সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনার আওতায় চলে আসবে বলে আমি আশাবাদী।
যুগান্তর : ডিএসসিসিকে দুর্নীতিমুক্ত সংস্থা হিসাবে গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কতটুকু পেরেছেন?
তাপস : ডিএসসিসিকে দুর্নীতিমুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে তোলার কাজ চলমান। দুর্নীতিবাজদের শনাক্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে আমি শতভাগ সফলতা দাবি করব না। তবে আগের তুলনায় দুর্নীতি কমে এসেছে। দুর্নীতির অভিযোগও এখন কম পাচ্ছি। অভিযোগ পাওয়া মাত্র কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি। এতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে একটা উপলব্ধি এসেছে দুর্নীতি করে কেউ পার পাবে না। ফলে দুর্নীতির পরিমাণও হ্রাস পেয়েছে।
যুগান্তর : নতুন ১৮ ওয়ার্ডবাসীর আধুনিক সুযোগ-সুবিধার জন্য কী করতে পেরেছেন?
তাপস : আমাদের নতুন ১৮টি ওয়ার্ডসহ কামরাঙ্গীরচরকে নিয়ে বৃহৎ পরিকল্পনা নিয়েছি। আমাদের মহাপরিকল্পনার কাজ চলমান। একটা সেন্ট্রাল বিজনেস এরিয়া করব। একটা স্মার্ট টাউনশিপ করব। এজন্য অর্থায়ন পাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
যুগান্তর : এর বাইরে আর কিছু যোগ করতে চান কি?
তাপস : সার্বিকভাবে আমি মনে করি, ঢাকাবাসীর মধ্যে একটি আস্থা ফিরে এসেছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নগরবাসীর সেবায় নিয়োজিত।
যুগান্তর : আপনাকে ধন্যবাদ।
মেয়র : আপনাকেও ধন্যবাদ।
