এ মাসের শেষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে পারব: প্রধানমন্ত্রী
বাসস
প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ভিডিও কনফারেন্সে এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা -পিআইডি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এখন একটু খারাপ সময় গেলেও আমরা আশা করি, এ মাসের শেষদিকে অবস্থার একটু পরিবর্তন হবে এবং সেই সময় আমরা স্কুল-কলেজসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আবার খুলে দিতে পারব।’ ২০২১ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশকালে রোববার প্রধানমন্ত্রী এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে রাজধানীর সেগুনবাগিচার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ১১ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে পরীক্ষার ফলাফলের পরিসংখ্যান ও প্রতিবেদন গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন। শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী স্বাগত ভাষণ দেন। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব আবু বকর সিদ্দিক অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। বক্তব্য দেন বাংলাদেশ কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যাতে আমরা খুলতে পারি, সেজন্য টিকাদান কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। কাজেই যারা এ পর্যন্ত টিকা নেননি তাদের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে-আপনারা টিকা নিয়ে নেবেন। এই টিকা নিলে পরে করোনা ধরলেও সেটা ওরকম খারাপ পর্যায়ে যাবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছিল বলেই করোনাকালেও অনলাইনে এবং টেলিভিশনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পাঠদান অব্যাহত রাখতে সমর্থ হয়েছে। তথাপি এই করোনাকালে সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমাদের শিক্ষার্থীরা। বর্তমানে পরিবারগুলো ছোট হয়ে আসার পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে না পাড়ায় অনেক ক্ষেত্রেই শিক্ষার্থীকে একাকিত্বে ভুগতে হয়েছে।
সরকারপ্রধান বলেন, অনলাইন বা টেলিভিশনে সরকার শিক্ষার ব্যবস্থা করেছে সেটা ঠিক; কিন্তু স্কুল-কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষার যে নির্মল আনন্দ প্রাপ্তি, তা থেকে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত ছিল। যাহোক যখনই আমরা করোনাকে একটু নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছি, তখনই স্কুলগুলো চালু করেছিলাম; কিন্তু দুর্ভাগ্য হচ্ছে-আবার নতুন সংক্রমণ দেখা দিল। আমি আশা করি, আমরা খুব দ্রুত সমাধান করতে পারব। যেসব ছেলেমেয়ের বয়স ১২ বছরের ওপরে, তাদেরও টিকা দেওয়া হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার শিক্ষার বহুমুখীকরণের অংশ হিসাবে জেলায় জেলায় সরকারি ও বেসরকারি খাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় যেখানে কোনো সরকারি স্কুল-কলেজ ছিল না, সেখানে একটি করে সরকারি স্কুল এবং কলেজ করা হয়েছে। আমাদের ছেলেমেয়েদের মেধা বিকাশের সুযোগ করে দেওয়ার মাধ্যমে তাদের যুগোপযোগী শিক্ষা প্রদান এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করাই এর লক্ষ্য।
সরকারপ্রধান বলেন, সরকার ২০২২ সালে এই করোনা মহামারির মধ্যেও ৪ কোটি ১৭ লাখ ২৬ হাজার ৮৫৬ জন শিক্ষার্থীর মাঝে ৩৪ কোটি ৭০ লাখ ২২ হাজার ১৩০ কপি বই বিনামূল্যে বিতরণ করেছে এবং নিয়মিত বৃত্তিসহ ৩ কোটি ৩৮ লাখ ৫৪ হাজার ৬১১ জন শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। প্রতিবন্ধীদের বৃত্তি এবং উপবৃত্তির আওতায় আনা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে এবং এটা প্রযুক্তির যুগ। সেদিকে লক্ষ রেখেই সরকার কারিগরি শিক্ষাকে সবথেকে গুরুত্ব দিচ্ছে। আমাদের ছেলেমেয়েরা মেধাবী। কাজেই আমরা যদি সেভাবে প্রশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি করি, তাহলে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে দেশে-বিদেশে যে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে, তা আমাদের ছেলেমেয়েরা নিতে পারবে। সেজন্য সময়োপযোগী শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে, সেটাই আমদের লক্ষ্য। তবে সেজন্য কেবল গতানুগতিক ডিগ্রি নিলেই হবে না। তিনি এ সময় গবেষণার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন। বিশেষ করে বিজ্ঞান ও চিকিৎসাশাস্ত্রে গবেষণার ওপর। ‘আমরা বিজয়ী জাতি এবং মুক্তিযুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছি,’ স্মরণ করিয়ে দিয়ে জাতির পিতার কন্যা বলেন, এই বিজয়ের ইতিহাস সরকার শিক্ষা কারিকুলামে অন্তর্ভুক্ত করেছে। কেননা আমরা যদি বিজয়ের ইতিহাস না জানি, তাহলে আমাদের মাঝে আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদাবোধ জন্মাবে না। তিনি যুবসমাজকে এ সময় শুধু চাকরিমুখী না হয়ে সরকার প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে নিজেরা উদ্যোক্তা হওয়ার মাধ্যমে অন্যের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করার আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী মহামারির মধ্যে পরীক্ষা আয়োজন এবং নির্ধারিত সময়ে ফল ঘোষণা করায় সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান। তিনি কৃতকার্য শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি অকৃতকার্য শিক্ষার্থীরা আগামী দিনে আরও ভালোভাবে লেখাপড়া করে কৃতকার্য হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। অভিভাবকদেরও এজন্য স্নেহ ও মমতা দিয়ে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানান। সবাইকে মাস্ক ব্যবহার ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।
