বাণিজ্য উপদেষ্টার সংবাদ সম্মেলন
বাড়তি শুল্ক কার্যকরের আগেই ভালো আউটকাম আসবে
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, পহেলা আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি ৩৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকরের আগেই একটি ভালো আউটকাম আসবে। এরই অংশ হিসাবে আগামী সপ্তাহে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি দপ্তরের (ইউএসটিআর) সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিতে আমার নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল যাচ্ছে। এর আগে প্রস্তুতি হিসাবে আজ (সোমবার) সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডার ও অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। সেখানে অনেক ভালো মতামত পাওয়া গেছে, যা কাজে লাগানো যাবে। এছাড়া আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠক করা হবে। পরে চূড়ান্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করে বৈঠকের জন্য রওয়ানা হব। সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন বাণিজ্য উপদেষ্টা। এর আগে তিনি গত ৯-১১ জুলাই ওয়াশিংটন ডিসিতে বাণিজ্য উপদেষ্টার নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক ইস্যুতে ইউএসটিআর-এর সঙ্গে দ্বিতীয় দফা বৈঠক করেছেন। বাণিজ্য উপদেষ্টা জোর দিয়ে বলেছেন, ঢাকা-ওয়াশিংটন আলোচনা বা নিগোসিয়েশনে বাংলাদেশকে চীনের সঙ্গে বাণিজ্যনির্ভরতা কমানো এবং রপ্তানি পণ্যের মূল্য সংযোগ ৪০ শতাংশ করতে হবে-এমন কোনো বিষয় বলা হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলা হয়, মার্কিন শুল্ক ইস্যু নিয়ে একদিন আগে জ্বালানি উপদেষ্টা বলেছেন, এখন আলোচনায় শুধু বাড়তি শুল্ক ইস্যু জড়িত নয়, যুক্তরাষ্ট্র ফ্রেমওয়ার্ক অ্যাগ্রিমেন্ট চায়। সেখানে নিরাপত্তার ইস্যু জড়িত-বিষয়টি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, যে চুক্তিটি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হবে, সেটি একটি ‘নন ডিসক্লোজার চুক্তি (অ-প্রকাশ চুক্তি)। ফলে চুক্তি সংক্রান্ত কোনো প্রশ্নের জবাব আমি দেব না। এ চুক্তি যখন স্বাক্ষর করবেন, তখন আপনি প্রতিশ্রুতি করছেন এ বিষয়ে কথা বলবেন না। সাংবাদিকদের উদ্দেশে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, আপনি কি চান আপনার দেশ শপথ ভঙ্গ করুক।
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে নিরাপত্তা চাইলে এক্ষেত্রে দিতে সমস্যা কোথায় প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, বিষয়টি সেরকম নয়। এই বাড়তি শুল্ক ঘোষণাকালে ইউএসএ থেকে রাষ্ট্রীয় ইমার্জেন্সি হিসাবে ঘোষণা করেছে। এটি সেরকম বোঝাচ্ছে তারা, যে শুল্ক যুক্তরাষ্ট্র আরোপ করেছে জরুরি ভিত্তিতে, সেটি তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। এছাড়া অন্য কোনো নিরাপত্তার কথা বলা হয়নি।
চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য নিরুৎসাহিত করতে যুক্তরাষ্ট্র চাচ্ছে কি না-এমন প্রশ্নের জবাব উপদেষ্টা বলেন, আমি এ প্রশ্নের উত্তর দিতে আগ্রহী নই। ইউএসটিআর-এর সঙ্গে আলোচনায় কোনো ধরনের লবিস্ট নিয়োগ দেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, লবিস্ট নিয়োগের কোনো পরিকল্পনা নেই।
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের কাছে কী চায় জবাবে উপদেষ্টা বলেন, এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য নেই। তবে উভয় দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর জন্য বাণিজ্য সম্প্রসারণের ব্যাপারে আমরা একমত। বাণিজ্য ঘাটতির একটি পরিমাপ করা হয়েছে। এ ঘাটতি যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ উভয়ে কমাতে চায়।
ইউএসটিআর-এর সঙ্গে আলোচনার অগ্রগতি জানতে চাইলে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, বেশি এগিয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়েছে। সেখানে অবস্থানকালীন তিন দিন যুক্ত থেকে বৈঠক করেছি। তৃতীয় দফা আলাপ আলোচনার জন্য আগামী সপ্তাহের মাঝামাঝি সময়ে আবার যাচ্ছি। এ সময় উপদেষ্টা আরও বলেন, প্রতিযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ২০১৫ সাল থেকে আমরা ব্যবসা করছি। যৌক্তিক শুল্ক পরিশোধ করেই সেটি করা হয়েছে। দেশের ব্যবসায়ীরা সক্ষমতার সঙ্গে ব্যবসা করছেন সেখানে। আমরা আশা করছি, তুলনামূলকভাবে বৈষম্যমূলক অবস্থান তৈরি না হয়, তাহলে সক্ষমতার সঙ্গে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের কাছে যৌক্তিক শুল্ক আশা করছেন, কত শতাংশ শুল্কহার যৌক্তিক বলে মনে করেন আপনি-জবাবে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, এটি শূন্য হার। পরবর্তী আলোচনায় শুল্ক শূন্যে নামিয়ে আনার ব্যাপারে আপনি কি আশাবাদী-এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, এ বিষয়ে আমি কোনো উত্তর দেব না। উপদেষ্টা আরও বলেন, ভিয়েতনামে ১১ শতাংশ শুল্ক ছিল, সেটি এখন ২০ শতাংশ করা হয়েছে। সেখানে কোনো শুল্ক হ্রাস করা হয়নি।
ওই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত বিকেএমইএ-এর সভাপতি মো. হাতেম বলেন, বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিগোসিয়েশন করছে। সব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা সরকারের উদ্যোগে সন্তুষ্ট। তবে পোশাক খাত নিয়ে শঙ্কায় আছি, সে আশঙ্কা আছে।
প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্র ২ এপ্রিল ৩৭ শতাংশ বাড়তি শুল্ক আরোপ করে বাংলাদেশের ওপর। পরে তিন মাসের জন্য এই শুল্ক আরোপ স্থগিত করে। এই স্থগিত অবস্থায় সবার জন্য বেইজলাইন হিসাবে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়। এরপর আবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ৭ জুলাই সব মিলিয়ে ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়া হয়, যা ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে।
পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৭ মে এই শুল্ক সংক্রান্ত নন ডিসক্লোজার একটি চুক্তির খসড়া পাঠানো হয় বাংলাদেশে। ওই চুক্তির বিষয় নিয়ে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি দপ্তর (ইউএসটিআর) সঙ্গে একাধিক নেগোসিয়েশন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য সচিব। এই নেগোসিয়েশনের সর্বশেষ ধারাবাহিক ওয়াশিংটন ডিসি ৯-১১ জুলাই অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের নেতৃত্বে দিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্য সচিব বলেন, কিছু কাজ দেশে বসে করতে হবে। বিশেষ করে শুল্কহার নির্ধারণ, সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক। এ কাজগুলো করে তৃতীয় দফার নেগোসিয়েশন বৈঠকে অংশ নিতে আমরা যুক্তরাষ্ট্রে যাব। আশা করছি এসব কাজ ১ আগস্টে শুল্ক কার্যকরের আগেই করা হবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের নেওয়া পদক্ষেপের ব্যাপারে আগাম কোনো কিছু জানা নেই। এছাড়া তাদের পাঠানো অনেক চিঠি ও ইমেইলে এর জবাব দিয়েছি। আর অনির্ধারিত একাধিক বৈঠক হয়েছে তাদের সঙ্গে।
বাড়তি শুল্ক আরোপ হলে বড় ধরনের আঘাত আসবে। সে আঘাত যেন না আসে, আমরা সে চেষ্টা করছি। এজন্য ইউএসটিআর-এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি।
