Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

ঢাকা-ওয়াশিংটন বৈঠক

কমতে পারে ৩৫% পালটা শুল্কহার

Icon

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ৩১ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

কমতে পারে ৩৫% পালটা শুল্কহার

ফাইল ছবি

বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে সমঝোতার পথে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ। ওয়াশিংটন ডিসিতে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি দপ্তরের (ইএসটিআর) সঙ্গে বৈঠকের প্রথম দিন এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশের বাণিজ্য উপদেষ্টা। এটি হলে ট্রাম্প প্রশাসনের ৩৫ শতাংশ পালটা শুল্ক আরোপের হিসাবে পরিবর্তন আসবে। সেক্ষেত্রে শুল্কহার কমার জোর সম্ভাবনা আছে, যা ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। এদিকে ভারত থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

জানা যায়, পালটা শুল্ক নিয়ে বুধবার স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় বাংলাদেশের সঙ্গে আরও একদফা বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। ওই বৈঠকে বাংলাদেশের ওপর আরোপিত চূড়ান্ত শুল্কহার কতটা হবে, সেটিও নির্ধারণ করে দেওয়া হতে পারে। তবে মঙ্গলবার ইউএসটিআর-এর সঙ্গে বাংলাদেশের প্রথম দিনের বৈঠকে বেশ অগ্রগতি হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বুধবার সকাল সাড়ে ৭টায় বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন ওয়াশিংটন ডিসি থেকে যুগান্তরকে বলেন, আমি এইটুকু বলব, আলোচনা বেশ অগ্রগতি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে এত ত্বরিত ফল আসে না। তবে যেসব বিষয় ও শর্ত ছিল, এইটুকু বলতে পারি যে, সেগুলো নিষ্পত্তির বিষয়ে আমরা অগ্রসর হচ্ছি।

এদিকে বাণিজ্য চুক্তির সমঝোতা নিয়ে যখন বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা চলমান-এমন সময় ভারত থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বুধবার তিনি এ ঘোষণা দেন। ১ আগস্ট থেকে ভারতের পণ্যে নতুন এ শুল্কনীতি কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। ট্রাম্প বলেছেন, ১ আগস্ট থেকে ভারত একটি ‘অনির্দিষ্ট’ দণ্ডের মুখোমুখি হবে। তবে কী ধরনের দণ্ড কিংবা কেন দণ্ড দেওয়া হবে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলেননি। ট্রাম্প আরও বলেছেন, যে দেশগুলোর সঙ্গে আলাদা করে বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে আলোচনা হবে না, তাদের ওপর ১৫-২০ শতাংশ ন্যূনতম শুল্ক চাপাবে যুক্তরাষ্ট্র।

সূত্রমতে, পালটা শুল্ক আরোপের ইস্যুতে এ নিয়ে ইউএসটিআর-এর সঙ্গে তৃতীয় দফা বৈঠক চলছে বাংলাদেশের। তিন দিনব্যাপী আলোচনার প্রথম দিন ছিল মঙ্গলবার। বুধবার ও বৃহস্পতিবার আরও দুদিন বৈঠক হলেও শেষ দিনে অংশ নিচ্ছেন উভয় দেশের বেসরকারি পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা।

সূত্র মতে, ইউএসটিআর-এর সঙ্গে দুদফা বৈঠকে অনিষ্পত্তি বিষয়গুলোর ব্যাপারে উভয় দেশ একমত হয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশ একটি বাণিজ্য প্রস্তাব উপস্থাপন করেছে। সেখানে তুলে ধরা হয়েছে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে বাংলাদেশ যেসব উদ্যোগ নিচ্ছে তার পরিকল্পনা। বিশেষ করে মার্কিন বাজার থেকে বড় ধরনের পণ্য আমদানির প্রস্তাব এবং যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যকে বিশেষ শুল্কছাড়ের সুবিধাও তুলে ধরা হয়। এছাড়া কোন দেশকে যুক্তরাষ্ট্র কী সুবিধা দিয়েছে, আলোচনায় তা উত্থাপন করেছে বাংলাদেশ।

এদিকে বৈঠকের পর পালটা শুল্ক কমানোর সবুজ সংকেত পেয়েছে বাংলাদেশ, এমনটি জানিয়েছেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান। ওয়াশিংটন ডিসি থেকে হোয়াটসঅ্যাপে সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘এজেন্ডা অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ২৯ জুলাই ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে এবং বাংলাদেশের ওপর আরোপিত শুল্ক কমানো হবে বলে আমরা দেশটির বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তরের (ইউএসটিআর) কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ধারণা পেয়েছি।’

বাণিজ্য সচিব আরও বলেন, ‘আমাদের শুল্ক যথেষ্ট পরিমাণ কমবে। তবে কত হবে, তা এখনই বলা সম্ভব হচ্ছে না। আজ ও আগামীকাল আমাদের মিটিং আছে। বাংলাদেশের জন্য ভালো কিছু হবে বলে আশা করছি।’

এদিকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং মঙ্গলবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এ পর্যন্ত আলোচনায় যে অগ্রগতি হয়েছে, তার ভিত্তিতে বাংলাদেশ এই দফার আলোচনায় ইতিবাচক ফল আশা করছে।

ওয়াশিংটন ডিসির বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার গোলাম মোর্তোজা তার নিজস্ব ফেসবুক পেজে লিখেছেন, বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক ইস্যু নিয়ে তৃতীয় ধাপের আলোচনা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে স্থানীয় সময় দুপুর ২টায়। এটি ১২.৩০ মিনিটে লাঞ্চের সময়ে অনানুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা হয়েছে। আগামীকাল (বুধবার) স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় আবার আলোচনা শুরু হবে।

বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, সঙ্গে আছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান ও অতিরিক্ত সচিব ড. নাজনীন কাওসার চৌধুরী। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের কর্মকর্তারা ভার্চুয়ালি অংশ নিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে নেতৃত্বে আছেন সহকারী ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ ব্রেন্ডন লিঞ্চ, সঙ্গে আছেন বাণিজ্য ও শুল্কসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। শুল্ক নেগোসিয়েশনের পুরো বিষয়টি সমন্বয় করছে বাংলাদেশ দূতাবাস ওয়াশিংটন ডিসি।

প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের পণ্যে ৩৫ শতাংশ পালটা শুল্ক আরোপের ঘোষণা রয়েছে, যা ১ আগস্ট কার্যকর হওয়ার কথা। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানি বাড়ানো এবং তাদের পণ্যে শুল্ক কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে পালটা শুল্ক কমানোর চেষ্টা করছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতির আগে দেশটিতে বাংলাদেশের পণ্যে বর্তমানে গড়ে সাড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক আছে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম