ইউনিয়ন ব্যাংক
বেনামে এস আলমের লুট ২৮ হাজার কোটি টাকা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
প্রতীকী ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বেসরকারি খাতের ইউনিয়ন ব্যাংক থেকে বেনামে ঋণ নেওয়ার মাধ্যমে ২৮ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে এস আলম গ্রুপ। ব্যাংক থেকে যাদের নামে ঋণ নেওয়া হয়েছে এখন তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। যেসব কোম্পানির নামে ঋণ নেওয়া হয়েছে ওইসব কোম্পানির কোনো অস্তিত্ব মিলছে না। যে কারণে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে সমস্যা হচ্ছে।
বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে এক বৈঠকে ইউনিয়ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান এম ফরিদ উদ্দীন এসব তথ্য জানিয়েছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে ৫ ব্যাংক একীভূতকরণের বিষয়ে ইউনিয়ন ব্যাংকের বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। বক্তব্যে ইউনিয়ন ব্যাংক ৫ ব্যাংক একীভূতকরণের প্রক্রিয়ার সঙ্গে একমত পোষণ করেছে। তারা বলেছে, আমানতকারীরা ব্যাংকে আসছে টাকা নেওয়ার জন্য। তহবিল সংকটের কারণে টাকা দেওয়া যাচ্ছে না। এজন্য তারা দ্রুত ব্যাংক একীভূতকরণ করে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তাব দেন। বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর ভার্চুয়ালি যোগ দেন। এ সময় ডেপুটি গভর্নর, ব্যাংক রেজল্যুশন বিভাগের কর্মকর্তা, ইউনিয়ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান এম ফরিদ উদ্দীন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবির উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে বলা হয়, ইউনিয়ন ব্যাংকের আমানতের প্রায় সব টাকাই এস আলম গ্রুপ নিয়ে গেছে। অন্য উদ্যোক্তারা ঋণ খুব কমই নিয়েছেন। যে কারণে ব্যাংকের ঋণের টাকা আদায় হচ্ছে না। ব্যাংকের মোট ঋণের টাকার মধ্যে ২৮ হাজার কোটি টাকাই নিয়ে গেছে এস আলম গ্রুপ। ব্যাংকটি দখলের পর থেকেই তারা ওই ঋণ নিয়েছে। ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো নিয়মকানুন মানেনি। এমন কি পর্ষদেরও অনুমোদন নেওয়া হয়নি। ভুয়া কোম্পানির নামে ঋণ নেওয়া হয়েছে।
বৈঠক শেষে ইউনিয়ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান এম ফরিদ উদ্দীন বলেন, ইউনিয়ন ব্যাংক থেকে ২৮ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে এস আলম। আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে সমস্যা হচ্ছে। যত দ্রুত এসব ব্যাংক নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে ততই ভালো। এ ক্ষেত্রে এসব ব্যাংক একীভূত, পুনর্গঠন বা অন্য কিছু হতে পারে।’
এদিকে বুধবার বিকালে এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। এতে এক্সিম ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়, তাদের দুই বছর সময় দেওয়ার জন্য। এই সময় দিলে তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।
বৈঠক শেষে ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম স্বপন জানান, তারা একীভূত করার পক্ষে নন। তারা সময় চান। এজন্য আগামী বৈঠকে একটি পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা উপস্থাপন করবেন। এর আগে মঙ্গলবার ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই বৈঠকে ব্যাংকটি একীভূতকরণের পক্ষে মত দিয়েছে।
এদিকে আজ বৃহস্পতিবার গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এর মাধ্যমে ৫ ব্যাংকের সঙ্গে ব্যাংক একীভূতকরণের বৈঠক শেষ হবে। এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে চিঠি দেওয়া হবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে ব্যাংক একীভূতকরণের প্রক্রিয়া শুরু হবে।
এস আলমের ২ ছেলেসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত : ৭৫ কোটি টাকার কর ফাঁকির অভিযোগে আলোচিত এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলমের (এস আলমের) দুই ছেলেসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা অনুমোদন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বুধবার সংস্থাটির উপপরিচালক আকতারুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
মামলার আসামিরা হলেন সাইফুল আলমের ছেলে আশরাফুল আলম, আসাদুল আলম মাহির ও সাবেক উপ-কর কমিশনার আমিনুল ইসলাম। কর ফাঁকির ঘটনার সম্পৃক্ততায় ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ৭ কর্মকর্তাও আসামি হবেন।
তারা হলেন ব্যাংকটির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. হেলাল উদ্দিন, শাখা প্রধান মুহাম্মদ আমির হোসেন, প্রাক্তন এসএভিপি মো. আহসানুল হক, প্রাক্তন এসএভিপি রুহুল আবেদীন, কর্মকর্তা শামীমা আক্তার, মো. আনিস উদ্দিন ও গাজী মুহাম্মদ ইয়াকুব।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে অপরাধমূলক অসদাচরণ করে ভুয়া পে-অর্ডার সৃজন করেন। ওই পে-অর্ডার সঠিক হিসাবে ব্যবহার করা হয়নি। একই সঙ্গে ৫০০ কোটি টাকার অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার জন্য ১২৫ কোটি টাকার আয়কর পরিশোধ করার কথা থাকলেও তারা ৫০ কোটি টাকার আয়কর পরিশোধ করেন। অবশিষ্ট ৭৫ কোটি টাকা সরকারের রাজস্ব ক্ষতি সাধন করেন।
গত বছরের অক্টোবরে ব্যবসায়ী সাইফুল আলম ওরফে এস আলমের দুই ছেলের আয়কর নথিতে বাড়তি সুবিধা দেওয়া এবং এর বিনিময়ে ঘুস গ্রহণের অভিযোগে আয়কর বিভাগের তিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে এনবিআর। এই অভিযোগ আমলে নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। আওয়ামী লীগ সরকার ২০২০ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ১০ শতাংশ কর দেওয়ার মাধ্যমে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার অনুমতি দেয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যক্তিগত পর্যায়ে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ করের হার বিবেচনায় নিলে আশরাফুল ও আসাদুলকে অপ্রদর্শিত ৫০০ কোটি টাকার বিপরীতে কমপক্ষে ১২৫ কোটি টাকা কর দিতে হতো। অথচ তারা মাত্র ৫০ কোটি টাকা দিয়েই এই টাকা সাদা করে নেন।
