Logo
Logo
×

বিচ্ছু

সংরক্ষিত পাঠক আসন

তেলবাজ কর্মীর কাণ্ড

Icon

আলমগীর হোসাইন

প্রকাশ: ২৫ জানুয়ারি ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

এক নেতার তেলবাজ কর্মীদের একজন একদিন ভোরে নেতার একটি ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে লিখেছে- ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন! সদা হাস্যোজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব, আমার রাজনৈতিক গুরু, ভালোবাসার শেষ আশ্রয়স্থল, গরিবের বন্ধু, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, মাটি ও মানুষের নেতা... লেখার এ পর্যন্ত এসে (ঝবব গড়ৎব)। মানে লেখার বাকি অংশ পড়তে হলে সি মোর বাটনে ক্লিক করতে হবে।

সেই নেতার আরেক কর্মী ঘুম থেকে উঠে ফেসবুক লগইন করতেই নেতার ছবি আর ছবির সঙ্গে লেখা দেখে আঁতকে ওঠে। সে আর (ঝবব সড়ৎব) সি মোর ক্লিক করে পুরো অংশটি পড়ে সময় নষ্ট করতে চায়নি। কারণ দেরি হলে লাইক-কমেন্টে ভাটা পড়ার রিস্ক আছে। তাই কোনোমতে স্যাড রিঅ্যাক্ট দিয়ে তাড়াহুড়ো করে সেও নেতার একটা ছবি দিয়ে লিখেছে- ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন! প্রিয় ভাইয়ের অকাল মৃত্যুতে অন্তরের অন্তস্থল থেকেই জানাই গভীর সমবেদনা। পরকালে সুখে থাকুন ভাই। তার কমেন্ট বক্সে সবাই শোক প্রকাশ করে একের পর এক মন্তব্য করছে। কর্মীটি মনে মনে ভাবছে, যাক খবরটা আগেভাগে পোস্ট করেছি বলেই তো এত কমেন্ট।

সকালের সময়। এ সময় ঘুম থেকে উঠে অনেকেই একবার ফেসবুক নোটিফিকেশন চেক করে। ওই নেতার পরিচিতরা এটা দেখে তাৎক্ষণিক শেয়ার করলেন। একজন নেতার ছবি দিয়ে লিখলেন- নেতা অমুকের মৃত্যুতে আমরা একজন যোগ্য নেতৃত্ব হারালাম! তার এক বন্ধু লিখলেন- তোর এ মৃত্যু মেনে নিতে পারছি না বন্ধু! তার বিপক্ষ গ্রুপের একজন নিজেকে ভালো মানুষ হিসেবে উপস্থাপন করতে গিয়ে লিখলেন- সে ছিল একজন সাদা মনের দিল দরিয়া মানুষ। আমি তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। নেতার একজন স্ব-শিক্ষিত অতি ভক্ত, যে নেতার প্রচার করতে গিয়ে সবসময় লেখে লাল গোলাপ শুভেচ্ছা, সেও ছবি দিয়ে লিখেছে- অমুক ভাইয়ের মৃত্যুতে লাল গোলাপ শুভেচ্ছা, গভীর সুখ জানাই!

সেই নেতাকে শেষ দেখা দেখতে পক্ষ-বিপক্ষের লোক ও কর্মীরা তার বাড়ির দিকে ছুটছেন। যে কর্মী পুরো লেখা না পড়ে তার মৃত্যুর খবর পোস্ট করেছিল সেও নেতাকে শেষ দেখা দেখতে নেতার বাড়িতে হাজির। কিন্তু নেতার বাড়িতে এসেই তার চোখ ছানাবড়া! কী ব্যাপার! নেতা কি মরেননি! তিনি তো দিব্যি বাড়ির ভেতর ঘুরে বেড়াচ্ছেন! সে তাৎক্ষণিক ফেসবুকে ঢুকে ওই লেখাটির সি মোর অপশনে ক্লিক করে বাকি লেখা পড়তে শুরু করল। একেবারে শেষের দিকের লেখাগুলো পড়ে তার হাত-পা কাঁপা শুরু হয়ে গেল। কারণ সেই পোস্টের একেবারে শেষাংশে লেখা ছিল, জননেতা জনাব অমুক ভাইয়ের দাদা জনাব তমুক সাহেব আজ ভোর ৬টার সময় ইন্তেকাল করেছেন!

মাইকে ঘোষণা শুরু হয়েছে নেতার দাদার মৃত্যুর খবর। কিন্তু ফেসবুকে ততক্ষণে নেতার নিজের মৃত্যুর খবর ভাইরাল হয়ে গেছে। সেই নেতা এটা জানার পর ফেসবুকে লগইন করতে যান। কিন্তু লগইন হচ্ছে না, অন্য আইডি থেকে দেখলেন, তার আইডিটি ফেসবুক কর্তৃপক্ষ রিমেম্বার করে দিয়েছে! রিমেম্বার মানে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ এ আইডিটির মালিককে মৃত হিসেবে শনাক্ত করেছে। আইডিটিতে আর লগইনের সুযোগ নেই। এদিকে তিনি মরেননি এ কথা জানার পর চারদিকে নতুন সমালোচনা শুরু হয়ে গেছে ততক্ষণে। বিপক্ষ গ্রুপের সেই নেতা কয়েকটা স্ক্রিনশট দিয়ে লিখছে- দেখলেন তো কত বড় টগ! শেষ পর্যন্ত প্রচারের জন্য নিজের মৃত্যুর নাটক করল। এদিকে নেতার এসব ফেসবুক প্রচারের ফিরিস্তি দেখে প্রেশার হাই হয়ে জ্ঞান হারাবেন হারাবেন অবস্থা!

চিকনাগুল, জৈন্তাপুর, সিলেট।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম