Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

হালাল উপার্জন জেহাদের সমতুল্য

Icon

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

প্রকাশ: ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

হালাল উপার্জন জেহাদের সমতুল্য

দয়াল নবীজি (সা.) হালাল উপার্জনকে জেহাদের সঙ্গে তুলনা করেছেন। নববী সমাজে হারাম উপার্জনের কথা সাহাবিরা কল্পনাও করতেন না। কাব ইবনে আজরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার নবীজি (সা.) আমাদের নিয়ে বসে ছিলেন। এমন সময় অন্য এক সাহাবি আমাদের সামনে দিয়ে তড়িঘড়ি করে চলে গেল। তার এ ব্যস্ততা দেখে সাহাবিদের কেউ কেউ আফসোসের সুরে বলল, ‘আহারে! লোকটার এই ব্যস্ততা যদি আল্লাহর রাস্তায় জেহাদের জন্য হতো তাহলে কতই না ভালো হতো।’ এ কথা শুনে নবীজি (সা.) বললেন, ‘হে আমার সাহাবিরা! তোমরা ভুল বোঝ না। তার তৎপরতা যদি নিজের সন্তানের জন্য হয়ে থাকে তাহলে সে আল্লাহর পথেই রয়েছে। অথবা তার ব্যস্ততা যদি নিজেরা বাবা-মায়ের জন্যও হয়ে থাকে তাহলে সে আল্লাহর রাস্তায় রয়েছে। কিংবা সে যদি হালাল উপার্জনের জন্য বের হয়ে থাকে তাহলেও সে আল্লাহর রাস্তায় জেহাদরত অবস্থায় রয়েছে। তবে যদি সে গর্ব-অহংকার আর লোক দেখানোর প্রচেষ্টায় থাকে তাহলে নির্ঘাত শয়তানের পথে রয়েছে।’ (তাবারানি শরিফ।) পবিত্র কুরআনেও হালাল রিজিক অন্বেষণ আর জেহাদ দুটো একসঙ্গে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ জানেন যে, তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়বে, কেউ কেউ আল্লাহর অনুগ্রহ-সম্পদ সন্ধানে দেশ-বিদেশ ভ্রমণ করবে আর কেউ কেউ আল্লাহর পথে সংগ্রামে ব্যস্ত থাকবে।’ (সূরা মুজাম্মিল, আয়াত ২০।)

ব্যক্তির পেশাগত কাজ ইবাদত হতে পারে তবে এক্ষেত্রে কিছু শর্তের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রথমত যে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে চায় তা যেন শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ হয়। যেমন সুদ-ঘুস, নাচ-গান ইত্যাদি কাজ কেউ যদি পেশা হিসাবে নির্বাচন করে তাহলে তার এ উপার্জন ইবাদত হিসাবে গণ্য হওয়ার সুযোগ নেই। দ্বিতীয়ত শর্ত হলো, ইবাদতের নিয়ত থাকা। এক ব্যক্তি শিক্ষকতা বা ইমামতির চাকরি করে। এর মাধ্যমে সে সওয়াব লাভ করবে কিনা তা নির্ভর করছে তার নিয়তের ওপর। অর্থাৎ তার নিয়ত থাকতে হবে এই চাকরির মাধ্যমে আমি পয়সা উপার্জন করে খাবার খাব, বাসস্থান গড়ে তুলব এবং নিজেকে আল্লাহর ইবাদত উপযোগী বান্দা হিসাবে গড়ে তুলব। দুনিয়া আবাদের জন্য আমি এ ছোট্ট চাকরির মাধ্যমে ভূমিকা রাখব। তৃতীয়ত পরিপূর্ণ আন্তরিকতার সঙ্গে অর্পিত দায়িত্ব পালন করা। আজকাল আমরা অনেকেই কাজে ফাঁকি দিই। আধা ঘণ্টার কাজ ঘুরেফিরে তিন ঘণ্টায় শেষ করি। আজকের কাজ কালকের জন্য ফেলে রাখি। এক দিনের কাজ এক সপ্তাহে শেষ করি। এমনটি হলে জীবিকা নির্বাহের দায়িত্ব পালনের জন্য সওয়াব তো হবেই না উলটো কাজে ফাঁকি দেওয়ার জন্য গোনাহ হবে। মুসলিমের হাদিসে নবীজি বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা প্রতিটি ব্যাপারেই এহসান করার নির্দেশ দিয়েছেন।’ বায়হাকি শরিফের বর্ণনায় নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ কোনো কাজ করলে তা যেন সুন্দরভাবে সম্পন্ন করে। কাজে ফাঁকি না দেয়।’ চতুর্থ অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কোনোভাবে আল্লাহর সীমালঙ্ঘন করা যাবে না। কোনো অন্যায় করা যাবে না। আমানতের খেয়ানত করা যাবে না। কারও সঙ্গে প্রতারণা করা যাবে না। সর্বোপরি কারো অধিকার খর্ব করা যাবে না। পঞ্চমত, পোশগত কাজ যেন ফরজ ইবাদত থেকে গাফেল করে না ফেলে।

পবিত্র কুরআনে পেশাগত কাজ যেন আল্লাহর জিকির ভুলিয়ে না দেয় সে ব্যাপারে সাবধান করে বলা হয়েছে, ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমাদের প্রতিপত্তি, ধনসম্পত্তি ও সন্তানসন্ততি যেন তোমাদের আল্লাহর স্মরণে গাফেল বা উদাসীন না করে। যদি গাফেল হও তবে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ (সূরা মুনাফেকুন, আয়াত ৯।) অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘ব্যবসা-বাণিজ্য ও বৈষয়িক লেনদেনও কখনো তাদের আল্লাহর স্মরণ, নামাজ কায়েম ও জাকাত আদায় থেকে বিরত রাখতে পারে না।’ (সূরা নুর, আয়াত ৩৭।)

লেখক : প্রিন্সিপাল, সেইফ এডুকেশন ইনস্টিটিউট, পীর সাহেব, আউলিয়ানগর

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম